বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে দুই হাজারের কিছু বেশি নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করতে যাচ্ছে সরকার। এর মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭০০, স্কুল এন্ড কলেজ পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ১৫০, উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের কলেজ রয়েছে প্রায় ১০০ এবং ডিগ্রি স্তরের কলেজ রয়েছে ৮০ থেকে ১০০টির মতো। অন্যদিকে মাদ্রাসা ও কারিগরি বিভাগের অধীনে ঠিক কতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে তা জানা যায়নি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী মে মাসের প্রথমার্ধেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়া হবে। ইতোমধ্যে এ তালিকার খসড়া শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির কাছে দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীর টেবিল থেকে সচিবের মাধ্যমে এমপিওভুক্তির সারসংক্ষেপ এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দেয়ার পরই শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করবে। প্রসঙ্গত, এর আগে মধ্য মার্চে নতুন প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এর আগে এমপিও তালিকায় স্থান পাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নাম ও ইতিহাসের বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য জেলা প্রশাসকদের মাধ্যমে যাচাই করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কারণ আগের বার স্বাধীনতাবিরোধী ও রাজাকারদের নামে প্রতিষ্ঠিত বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছিল। এবার যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য আগেভাগেই এমন ব্যবস্থা নিল সরকার।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সম্প্রতি বলেছেন, নীতিমালা অনুযায়ী যোগ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের সুপারিশ ছাড়াই এমপিওভুক্ত হচ্ছে। তিনি বলেছেন, কোনো নেতা, মন্ত্রীর সুপারিশ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় এখন আর এমপিওভুক্তির সুযোগ নেই। তাই যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নীতিমালার শর্তপূরণে ব্যর্থ, তারা কোনোভাবেই এমপিওভুক্তি পাবে না। এজন্য সবাইকে এমপিওভুক্তির নীতিমালার আলোকে শর্তপূরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
সূত্র জানায়, গত বছরের ১০ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত এমপিওভুক্তির জন্য অনলাইনে আবেদন নেয়া হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে নিম্ন মাধ্যমিক স্কুল, মাধ্যমিক স্কুল, উচ্চ মাধ্যমিক কলেজ ও ডিগ্রি কলেজ মিলিয়ে সাড়ে ৪ হাজারের বেশি আবেদন পড়েছে। আর কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে প্রায় ৩ হাজার ৯০০ মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। আবেদনকৃত মোট সাড়ে ৮ হাজার প্রতিষ্ঠানের ৯০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারী এমপিওভুক্তির জন্য অপেক্ষা করছেন।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আবেদন পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়। তারা অবকাঠামো ও জমির কাগজপত্র যাচাই-বাছাই শেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। এরপর বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড থেকে আবেদনকৃত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, ফলাফল ও স্বীকৃতি নবায়নের কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়।
এমপিওভুক্তির আবেদন যাচাই-বাছাই কমিটির সভাপতি এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (বেসরকারি মাধ্যমিক) ফৌজিয়া জাফরীন বলেন, চলতি অর্থবছরে যে টাকা বরাদ্দ আছে, আমরা প্রাথমিকভাবে সেই অনুযায়ী তালিকা তৈরি করেছি। এর বাইরে আরো প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি দেয়া হবে কিনা সে ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায় সিদ্ধান্ত নেবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, চলতি অর্থবছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রয়েছে ২০০ কোটি টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগে বরাদ্দ রয়েছে ৫০ কোটি টাকা। পাশাপাশি ২০১৯ সালে সর্বশেষ দেয়া এমপিওভুক্তির পর ওই খাতে প্রায় ৪২৫ কোটি টাকা অব্যয়িত ছিল। সেই টাকা ২৫০ কোটি টাকার সঙ্গে যোগ করে এমপিওভুক্তি করা হচ্ছে। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন, চলতি অর্থবছরে এক মাসের বেতন দিয়ে এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেবে সরকার।
২০২১ সালের সংশোধিত এমপিও নীতিমালা অনুযায়ী, নিম্ন মাধ্যমিক স্তরের (ষষ্ঠ-অষ্টম) বিদ্যালয় এমপিওভুক্তি পেতে শহর ও মফস্বলে ন্যূনতম ছাত্রছাত্রী থাকতে হবে যথাক্রমে ১২০ ও ৯০ জন। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ-দশম) ক্ষেত্রে শহর ও মফস্বলে এই সংখ্যা যথাক্রমে ২০০ ও ১৫০। উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের (ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ) ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৪২০ ও ৩২০। উচ্চ মাধ্যমিক কলেজে (একাদশ ও দ্বাদশ) ন্যূনতম ছাত্রছাত্রী থাকতে হবে শহরে ১৮০ জন এবং মফস্বলে ১৪০ জন। স্নাতক (পাস) কলেজে এই সংখ্যা যথাক্রমে ৪৯০ ও ৪২৫।
একইভাবে এমপিওভুক্তি পেতে পাসের হারের ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন হার নির্ধারণ করা হয়েছে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) পরীক্ষায় শহর, জেলা সদর/পৌরসভা এবং মফস্বল এই তিন ক্যাটারিতে পাসের ন্যূনতম হার হতে হবে যথাক্রমে ৭০, ৬৫ ও ৬০ শতাংশ। এসএসসিতে তা যথাক্রমে ৭০, ৬০ ও ৫৫ শতাংশ। এইচএসসিতে শহরে ৬৫, জেলা সদর ও পৌরসভায় ৫৫ এবং মফস্বলে কমপক্ষে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে পাস করতে হবে। এসব শর্ত পূরণ করতে পারলেই ওই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির যোগ্য হবে।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ হাজার ৭৩০টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির ঘোষণা দেন। এরপর দীর্ঘ ছয় মাস যাচাই-বাছাই শেষে ২০২০ সালের ২৯ এপ্রিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ এক হাজার ৬৩৩ এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ ৯৮২টি প্রতিষ্ঠানের তালিকা চূড়ান্ত করে। তবে এ বছর ঘোষণার আগেই যাচাই-বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।