বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যোগাযোগ ও জলবিদ্যুতের মত খাতে ভারত আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করতে চায় বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার ঢাকার ফরেইন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, যোগাযোগ ও অন্যান্য খাতে শক্তিশালী উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতাকে জোরদার করতে চায় তার দেশ।
”বিশেষ করে জলবিদ্যুৎ খাতে আমাদের অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে পরস্পরের জন্য লাভজনক সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে। ভারত এক্ষেত্রে বড় উৎপাদক ও ভোক্তা। বিবিআইন ফ্রেমওয়ার্কের মত ক্ষেত্রে প্রতিবেশীদের সাথে কাজ করতে পেরে আমরা আনন্দিত।” জয়শঙ্কর বলেন, “এ অঞ্চলে বিদ্যুতের উৎপাদন, ট্রান্সমিশন ও বিপণনের ক্ষেত্রে সহযোগিতা তৈরিতে ভারত নেতৃত্ব অব্যাহত রাখবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দিতে সংক্ষিপ্ত সফরে বৃহস্পতিবার দুপুর ঢাকায় পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।বিকালে গণভবনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে দেখা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণপত্র পৌঁছে দেন তিনি।
পরে ফরেইন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসেন জয়শঙ্কর। বৈঠক শেষে দুজনে একসেঙ্গই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের নেতৃবন্দ সবসময় যোগাযোগের মধ্যে আছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদীর ব্যক্তিগত শুভেচ্ছা ও শুভকামনা পৌঁছে দিয়েছি। এবং আমন্ত্রণ জানিয়েছি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুবিধা অনুযায়ী ভারত সফরের জন্য।”
শেখ হাসিনার সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ ধরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন “আমরা অনেক বিষয়ে আলোচনা করেছি। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক ইস্যুতে আমরা পর্যালোচনা করেছি।” গত বছর মহামারীর মধ্যেও বাংলাদেশ সফরে এসছিলেন জয়শঙ্কর। সেই সফরের কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “কোভিড-১৯ মহামারীর চ্যালেঞ্জ স্বত্ত্বেও আমরা নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করেছি এবং আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ভালো অগ্রগতি হয়েছে।”
শেখ হাসিনার ভারত সফরের আগেই দিল্লীতে দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক হবে জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, “আমাদের সম্পর্ককে পরবর্তী উচ্চতায় নিয়ে যেতে এই বৈঠক হবে একটা বড় সুযোগ।”
তার মতে, ভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসায় দুদেশের মানুষে-মানুষে যোগাযোগও আবার মহামারীর আগের অবস্থায় ফিরে এসেছে। ঈদের পরপরই বাস ও রেল যোগাযোগ পুনরায় চালু করার পরিকল্পনা চলছে। “বাণিজ্য, দ্বিপক্ষীয় প্রকল্পের ঋণছাড়, ট্র্যাভেল সার্ভিস এবং বিনিয়োগে অগ্রগতি সন্তোষজনক। কোভিডকালের ক্ষতি পুষিয়ে এগুলো বেশ গতি পেয়েছে।”
জ্বালানি, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে যেসব যৌথ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে, সেগুলোর কার্যক্রম শিগগিরই চালু হবে বলে আশা প্রকাশ করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “বাংলাদেশ ভারতের সম্পর্ক এখন সোনালী অধ্যায়ে আছে। আপনারা জানেন, গতবছর আমাদের ৫০ বছর পূর্তিতে আমরা ইতিহাস তৈরি করেছি। বাংলাদেশ এবং ভারত যেভাবে কাজ করেছে এটা পৃথিবীতে বিরল।
”আমাদের সেই স্পিরিটটা আছে। সেই স্পিরিটটার প্রেক্ষিতে আমাদের যত ধরনের বড় বড় সমস্যা, আমরা সব সমাধান করেছি, ছোটোখাটো সমস্যাও আমরা সমাধান করার অঙ্গীকার করেছি।” সংক্ষিপ্ত সফর শেষে শুক্রবার সকালে ঢাকা থেকে ভুটান সফরের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর।
‘প্রশ্নটা উনাকে করুন’ র্যাবের ওপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য বাংলাদেশ সরকার ভারতের সহযোগিতা চেয়েছে বলে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। বৃহস্পতিবার দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলনে সে বিষয়েও প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।
এক সাংবাদিক জয়শঙ্করের কাছে জানতে চান, ভারত কীভাবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উত্তর দেওয়ার আগেই মোমেন বলেন, “আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।”
জয়শঙ্কর তখন বলেন, “আমার মনে হয়, এই প্রশ্ন আমাকে নয়, আপনারা পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনকে করুন।” গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে গত ডিসেম্বর মাসে র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক, বর্তমান পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমদসহ বাহিনীর সাত কর্মকর্তার উপর ওয়াশিংটন নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর থেকে দ্বিপক্ষীয় যে কোনো আলোচনায় মুখ্য হয়ে উঠছে বিষয়টি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল ঢাকা। ১৫ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে টেলিফোনেও এ বিষয়ে আলাপ হয় মোমেনের।
এরপর চলতি মাসের শুরুতে ওয়াশিংটনে ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে র্যাবের ভুমিকার কথা তুলে ধরে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন। তবে নিষেধাজ্ঞা যে এখনই উঠছে না, সেটাও পরে বলেছিলেন।
এ নিয়ে আলোচনার মধ্যে মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, “র্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আমরা তাদের (ভারত) সহযোগিতা চেয়েছি। “আপনারা জানেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় কমিউনিটি অনেক শক্তিশালী। তারা অনুরোধ করেছে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার। আমরা অনুরোধ করেছিলাম তাদেরকে।” তৃতীয় কোনো দেশের এমন সহযোগিতা চাওয়ার সমালোচনায় বিএনপি বলছে, এটা সরকারের ‘নতজানু পররাষ্ট্রনীতির’ প্রকাশ।