বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ করতে রাজধানীসহ সারাদেশে সাঁড়াশি অভিযান শুরু করেছে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ)। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যত্রতত্র স্টপেজ ও যানবাহনে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহনের মতো অভিযোগ তদারকি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যেই এ অভিযান চালানো হচ্ছে। সারাদেশের ৩২ স্পটে ১২৯টি সিসিটিভিতে মনিটর করা হচ্ছে। কোন ধরনের অনিয়ম, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা গেলেই তাৎক্ষণিক দিকনির্দেশনা প্রদানসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এ অভিযান চলবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত। পাশাপাশি চলছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরেরও অভিযান।
জানা গেছে, ঈদের আগে-পরের যানবাহনে শৃঙ্খলা ও যাত্রী সেবা নিশ্চিত করতেই ইতোমধ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে বিআরটিএ। এতে বিআরটিএ এর নিজস্ব জনবল ছাড়াও পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি, সিটি কর্পোরেশন ও পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সার্বিক দিকনির্দেশনায় এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশব্যাপী অভিযানে বেশ সাড়া ফেলেছে। বনানীতে
একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। পরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাসকে ওই কক্ষের ফোকাল পয়েন্ট হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছে। যে কোন ভুক্তভোগী যাত্রী তার ০১৭২১৫০৩৩৯৫ নম্বরে ফোন করে সব ধরনের অভিযোগ জানাতে পারেন। অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তিনি তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। নিয়ন্ত্রণ কক্ষে কর্মরতদের সার্বিক তদারকিতে রয়েছেন উপ-পরিচালক শেখ মতিয়ার রহমান ও সহকারী পরিচালক রিয়াজুর রহমান।
জানা গেছে, ঈদ যাত্রা সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে শুধু রাজধানীতেই অভিযান চালিয়ে সুফল মেলে না। সেজন্য এবার বিআরটিএ চেয়ারম্যান গত বুধবার দুপুরে সারাদেশের জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে জুম বৈঠকে বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করেন। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে কোথায় কোথায় যানজট ও সংকট দেখা দেয় সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসকদেরকে নির্দেশ দেন।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার শুক্রবার দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, সারাদেশের ৩২ স্পটে ১২৯ টি সিসিটিভিতে মনিটর করা হচ্ছে। কোন ধরনের অনিয়ম, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা গেলেই তাৎক্ষণিক দিকনির্দেশনা প্রদানসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শুক্রবার আকস্মিক পরিদর্শনে যান গাবতলী টার্মিনালে। এতে মালিক, শ্রমিক ও যাত্রীদের মাঝে ইতিবাচক মনোভাব লক্ষ্য করা গেছে। এভাবে অন্যান্য টার্মিনাল ও সড়কেও সর্বক্ষণিক তদারকি চলছে।
জানা গেছে, সড়কপথে যাত্রীদের কাছ থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত দাবি ও আদায়, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন না করা, স্বাস্থ্যবিধিসহ অন্যান্য নির্দেশনা অনুসরণ ও যাত্রীসেবা নিশ্চিত করতেই ঢাকা মহানগরীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, ফুলবাড়িয়া ও মহাখালি টার্মিনালগুলোর জন্য তিনটি ভিজিল্যান্স টিম গঠন করেছে বিআরটিএ। এর মধ্যে উপ-পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহকে গাবতলী, উপ-পরিচালক বিমলেন্দুু চাকমাকে সায়েদাবাদ ও ফুলবাড়িয়া এবং উপ-পরিচালক মাসুদ আলমকে মহাখালি বাস টার্মিনালের ভিজিল্যান্স টিম প্রধান করা হয়েছে। এ তিনটে টিম গোটা রাজধানী পাবলিক পরিবহনের সার্বিক দায়িত্ব দেখভাল ও নজরদারি করবে।
বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার জানিয়েছেন, এর বাইরেও চলছে বিআরটিএ-এর ৫ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। আদালত অভিযোগের ভিন্নতা ভেদে জেল জরিমানা ও গাড়ি জব্দ করার মতো আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছে। আপাতত ভিজিলেন্সের কার্যক্রম ৫ মে পর্যন্ত চালু থাকবে। তবে প্রয়োজনে তা আরও বাড়ানো হতে পারে। তিনি জানান, ঈদের ছুটিতেও তাদেরকে সর্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে।
চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারও প্রতিদিনই নগরীর কোন না কোন বাস টার্মিনাল আকস্মিক পরিদর্শনে গিয়ে যাত্রী ও মালিক-শ্রমিকদের সমস্যার কথা শুনছেন। মহাখালি টার্মিনালে গিয়ে তিনি মালিক সমিতির আবুল কালামের কাছে জানতে চান, কোন ধরনের জটিলতা ও সমস্যা আছে কিনা। তখন তাকে জানানে হয়- এখানে যাত্রীদের কাছ থেকে কোন বাড়তি ভাড়াও নেয় হয় না, অতিরিক্ত যাত্রীও বহন করা হয় না। তবে সড়ক, মহাসড়কে যাতে যানজট দেখা না দেয় সেজন্য আরও কিছু নজরদারির অনুরোধ জানান আবুল কালাম আজাদ।
জানা গেছে, ঢাকার বাইরে টঙ্গী, আব্দুল্লাহপুর, জয়দেবপুর, যমুনা সেতুর দু’পাড়, মেঘনা ঘাট, ফেনীর মহীপাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহ, সিলেটসহ অন্তত ৭৩টি স্থানে যানজটের মতো জটিল পরিস্থিতি দেখা দেয়। এ স্পটগুলোতে যাত্রা নির্বিঘ্নে করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন নূর মোহাম্মদ মজুমদার। তিনি মনে করেন, এবার অন্যান্যবারের তুলনায় বেশ স্বাভাবিক গতিতেই ঈদযাত্রা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বড় ধরনের কোন অভিযোগ বা সমস্যার কথা শোনা যায়নি।
এদিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের উদ্যোগেও চলছে অভিযান। শুক্রবার একটি বাসের নির্ধারিত ভাড়া ৪৫০ টাকার স্থলে ২৫০ টাকা বাড়িয়ে নেয়ার অভিযোগে ‘ঢাকা এক্সপ্রেস’কে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। রাজধানীর উত্তরায় টিকেট কাউন্টারে অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করা হয়। অভিযানটি পরিচালনা করেন অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের প্রধান মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল। তার সঙ্গে ছিলেন অধিদফতরের ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোঃ মাগফুর রহমান। অভিযান পরিচালনা করেন অধিদফতরের উপ-পরিচালক ও ঢাকা জেলা কার্যালয়ের প্রধান মোঃ আব্দুল জব্বার মন্ডল। আব্দুল জব্বার মন্ডল জানান, আগে থেকেই ঢাকা এক্সপ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। তারা ভাড়া নিচ্ছিল অতিরিক্ত। অধিদফতরের আভিযানিক টিম তদারকির সময় এর সত্যতা পায়। পরে তাদের করা হয় জরিমানা। একই সঙ্গে তাদের সতর্কও করা হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ না করে। এসময় বাসের টিকেট কিনে কেউ প্রতারিত হলে ভোক্তা অধিদফতরের হটলাইন ১৬১২১ নম্বরে জানানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হয়।
সরজমিনে দেখা যায়, ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের থেকে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি আদায় ও ভাড়ার তালিকা কাউন্টারের সামনে না ঝুলানোয় পাঁচ পরিবহনকে জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। এর মধ্যে তিনটি পরিবহনকে এক হাজার টাকা করে এবং অন্য দুই পরিবহনকে ৫০০ টাকা করে জরিমানা করা হয়। শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় ভোক্তা অধিকার অভিযান চালিয়ে এ জরিমানা করে। অভিযানের নেতৃত্বে থাকা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের পরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এখানে এসেছি। এটা মূলত বিআরটিএ’র কাজ, আমরা এডিশনাল হিসেবে এসেছি। যাতে করে যাত্রীকে কোন হয়রানি পোহাতে না হয়। যাত্রীদের কাছ থেকে অভিযোগ শুনে আমরা বিভিন্ন কাউন্টারে গিয়েছি। গাবতলীর সেলফি পরিবহনকে এক হাজার টাকা, শ্যামলী পরিবহনকে ৫০০, সাথী এন্টারপ্রাইজকে এক হাজার, অরিন ট্রাভেলসকে এক হাজার ও শ্যামনগর পরিবহনকে ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার বিষয়ে জানতে চাইলে সেলফি পরিবহনের চেয়ারম্যান ও ঢাকা জেলা যানবাহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ আব্বাস উদ্দীন বলেন, সেলফি পরিবহনে যে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে সেটা আমার অগোচরে হয়েছে। আমি প্রত্যেকটি গাড়ির স্টাফকে নির্দেশ দিয়েছি তারা যেন সরকার নির্ধারিত ভাড়ার থেকে এক টাকাও বেশি আদায় না করেন। আশা করি, এখন থেকে সব ঠিকঠাকভাবে চলবে।
এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের কাউন্টারগুলো ঘুরে দেখা গেছে হাতে গোনা দুয়েকটি বাদে কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা ঝোলানো নেই। অভিযোগ আছে, কাউন্টার থেকে টিকেট করতে যাত্রীদের ৫০ থেকে ১৫০ টাকার মতো অতিরিক্ত ভাড়া গুনতে হচ্ছে। উত্তরবঙ্গগামী পরিবহনগুলোতে টিকেট সঙ্কট থাকায় ওই রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অঙ্কটা আরও বেশি। ক্ষেত্র বিশেষে নির্ধারিত ভাড়ার থেকে প্রায় ৪০০ টাকা অতিরিক্ত আদায় করারও অভিযোগ করেছেন উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীরা। তবে সঠিক সময়ে বাস ছাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। এ বিষয়ে যাত্রী ও স্টেশন মাস্টাররা বলছেন, ঠিক সময়ই বাস ছেড়ে যাচ্ছে। বরং অনেক যাত্রী নির্ধারিত সময়ে স্টেশনে উপস্থিত হতে পারছেন না। তবে হঠাৎ সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সেখানে পরিদর্শনে গেলে দৃশ্যপট পাল্টে যায়।