বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : পদ্মা সেতু আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এক সময়ের স্বপ্নের সেতু এখন দৃষ্টিসীমায় দিগন্তজুড়ে দাঁড়িয়ে। নির্মাণ কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে আগামী ২৫ জুন। ওইদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। আর এ সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন এবং নামকরণের বিষয়ে সারসংক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবনে যান ওবায়দুল কাদের। বেরিয়ে এসে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের বাংলাদেশের সবচেয়ে আনন্দের দিনটির কথা জানান। এদিকে এখন চলছে সেতুর নামফলক, ম্যুরালসহ রাস্তার মার্কিং করার কাজ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ চলছে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও ফরিদপুরসহ আশপাশের জেলাগুলোয়। পদ্মা সেতু ঘিরে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে যেসব প্রকল্পের কাজের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা দেখে জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন এক সময়কার অবহেলিত এ জনপদের মানুষ। সেতুটি চালু হলে রাজধানীর সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমনি সহজ হবে, তেমনি কমবে সময়ের দূরত্ব।
২০১২ সালে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নের সিদ্ধান্ত বাতিল করার পর সরে যায় আন্তর্জাতিক আরও তিনটি সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি এবং ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক। এতে পদ্মার আকাশে দেখা দেয় কালো মেঘের ঘনঘটা। ওই সময়ে প্রকল্পটির ব্যয় ছিল প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা। যা ওই বছরের মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ৫০ শতাংশ। ফলে নাগালের বাইরে চলে যায় পদ্মা সেতু বাস্তবায়নের স্বপ্ন। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে শেষ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। সেতুর কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা। এরপর ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর খুঁটিতে বসে প্রথম স্প্যান। মাঝে ২২টি খুঁটির নিচে নরম মাটি পাওয়া গেলে নক্সা সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাতে বাড়তি সময় লেগে যায় প্রায় এক বছর। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ব্যয় গিয়ে ঠেকে ৩০ হাজার কোটি টাকায়। করোনাভাইরাস মহামারী আর বন্যার মধ্যেও কাজের গতি কমে যায়। সব বাধা পেরিয়ে অক্টোবরে বসানো হয় ৩২তম স্প্যান। এরপর বাকি স্প্যানগুলো বসানো হয়ে যায় অল্প সময়ের মধ্যেই। ঠিক পাঁচ বছরের মাথায় পূর্ণ আকৃতি পায় স্বপ্নের সেতু, যুক্ত হয় পদ্মার দুই পাড়। মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন। দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছে বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেড। কংক্রিট ও স্টিল দিয়ে নির্মিত হয়েছে সেতুটি। সম্প্রতি পদ্মা সেতুতে পারাপারে যানবাহনের শ্রেণীভেদে টোলহার প্রকাশ করেছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। সরকার নির্ধারিত হার অনুসারে, পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে মোটরসাইকেলের টোল হবে ১০০ টাকা। কার-জিপের টোল ৭৫০ টাকা। বড় বাসের টোল দিতে হবে ২ হাজার ৪০০ টাকা। মাঝারি ট্রাক পারাপারে লাগবে ২ হাজার ৮০০ টাকা। এই সেতু দিয়ে অটোরিক্সা, হিউম্যানহলার কিংবা নসিমন-করিমন চলতে দেয়া হবে না।
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্ট দিয়ে পদ্মা নদীর দুই প্রান্তকে যুক্ত করছে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প। পদ্মা নদীর বুকে নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ প্রায় শেষের পথে। সেতুর ওপর দিয়ে চারলেন দিয়ে চলবে গাড়ি, নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। সেতুর তলদেশ দিয়ে যে কোন ধরনের নৌযান চলাচল করতে পারবে অনায়াসেই। সেতু দিয়ে যাচ্ছে গ্যাসের পাইপলাইন, যে লাইন দিয়ে গ্যাস পৌঁছবে এ জনপদসহ আশপাশের অনেক জেলায়। সেতুটি চালু হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। এতে মোট দেশজ উৎপাদন প্রবৃদ্ধি (জিডিপি) ১ থেকে দেড় শতাংশ বাড়বে। দারিদ্র্যের হার কমবে দশমিক ৮৪ শতাংশ। নতুন করে গড়ে উঠবে ভারি শিল্প কারখানা। আর এরই অপেক্ষায় যেন বাংলাদেশ। জানতে চাইলে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান জনকণ্ঠকে বলেন, পদ্মা সেতুর মাধ্যমে অর্থনীতিতে সরাসরি তিন ধরনের সুবিধা রয়েছে। প্রথমত, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। এতে ওই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার লাভ করবে। বিনিয়োগ বাড়বে। দ্বিতীয়ত, কৃষক সরাসরি উপকৃত হবেন। তাদের উৎপাদিত পচনশীল পণ্য সরাসরি ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানে পাঠাতে পারবেন। এতে পণ্যের ভাল দাম পাওয়া যাবে। তৃতীয়ত, এ সেতুর ফলে সামগ্রিকভাবে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের বিস্তার হবে। বিশেষ করে ভারতের বাণিজ্য বাড়াতে মোংলা বন্দর ব্যবহার করা যাবে।
নাম পদ্মা সেতুই হবে, উদ্বোধন আগামী ২৫ জুন ॥ বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শেষে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হবে আগামী ২৫ জুন। ওইদিন সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করবেন। আর এ সেতুর নাম পদ্মা নদীর নামেই হবে বলে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। পদ্মা সেতুর উদ্বোধন এবং নামকরণের বিষয়ে সারসংক্ষেপ নিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে গণভবন যান ওবায়দুল কাদের। বেরিয়ে এসে অপেক্ষমাণ সাংবদিকদের তিনি বলেন, ‘বহু প্রতীক্ষিত পদ্মা সেতু, সেটা কবে উদ্বোধন হবে জানার আগ্রহ সবার মধ্যে। সেই সুসংবাদ আপনাদের দিচ্ছি। ২৫ জুন শনিবার সকাল ১০টায় বঙ্গবন্ধু কন্যা, প্রধানমন্ত্রী, দেশরতœ শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করবেন।’ তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, ‘পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর নামেই হবে। এটা আমি অন্য কারও নামে দেব না। বঙ্গবন্ধু পরিবারের কারও নামেও হবে না’। সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কাদের আমন্ত্রণ জানানো হবে প্রশ্ন করলে মন্ত্রী বলেন, সবাইকে আমন্ত্রণ জানানো হবে, যারা বেশি বিরুদ্ধে বলছে, তাদের আগে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে ॥ সেতু বিভাগ সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু উদ্বোধন করে গাড়িতে চড়ে সেতু পার হয়ে শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে যাবেন। সেখানে আরেক দফা আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেবেন। পরে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়ীতে জনসভা করার কথা রয়েছে। ইতোমধ্যে সেতু বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) কর্মকর্তারা প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। সূত্র জানায়, সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের জন্য ম্যুরাল ও ফলক নির্মাণের কাজ চলছে। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে ৪০ ফুট উচ্চতার দুটি ম্যুরাল নির্মিত হচ্ছে। দুটি ম্যুরালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি থাকবে। এর পাশে নির্মাণ করা হচ্ছে উদ্বোধনী ফলক। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, এখন চলছে বিশেষ প্রস্তুতি। এছাড়া সেতুর নামফলক, ম্যুরাল এবং অন্যান্য যেসব কাজ রয়েছে সেগুলো খুবই ছোট কাজ। যা আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে সব শেষ হয়ে যাবে। পিচ ঢালাইয়ের কাজের অগ্রগতি কতটুকু জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মূল সেতুর ওপরে পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে। সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচলের জন্য এখন সেতু পুরোপুরি প্রস্তুত।’ সেতুতে বাতি বসানোর কাজ শেষ হয়েছে গত মাসেই। এখন চলছে ল্যাম্পপোস্টে বিদ্যুতসংযোগ দেয়ার কাজ। এই কাজও এই সপ্তাহে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। শুধু বাকি আছে লাইনে মিটার বসানো আর সংযোগ দেয়া। এই মাসের শেষের দিকেই সেতু আলোকিত হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। যদিও এখন কোথাও কোথাও টেস্ট চলছে।
বাতি বসানো শেষ, আলো জ্বলবে শীঘ্রই ॥ ৩০ মের মধ্যে পদ্মা সেতুতে বিদ্যুতসংযোগ পাওয়া যাবে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ৩১ মে বা ১ জুন থেকে রাতে সেতুর ল্যাম্পপোস্টগুলো আলো ছড়াবে। গত ১৫ মে মুন্সীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুত সমিতিকে পদ্মা সেতুতে বিদ্যুত সংযোগ দেয়ার জন্য চিঠি দেয় পদ্মা সেতু প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে বলা হয়, মূল সেতুতে ৮০ কিলোওয়াট বিদ্যুত ৩০ মের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে। এই বিদ্যুত সংযোগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থও পল্লী বিদ্যুত সমিতিতে জমা দেয়া হয়েছে। একই দিন একইভাবে শরীয়তপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতিকেও চিঠি দেয়া হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে। পদ্মা সেতুতে মোট ৪১৫টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। এর মধ্যে মূল সেতুতে ৩২৮টি, জাজিরা প্রান্তের উড়ালপথ (ভায়াডাক্ট) ৪৬টি, মাওয়া প্রান্তের ভায়াডাক্টে ৪১টি ল্যাম্পপোস্ট বসানো হয়েছে। গত ১৮ এপ্রিল এসব ল্যাম্পপোস্ট ও এর মধ্যে বাতি লাগানোর কাজ শেষ হয়। এরপর পুরো সেতুতে কেবল টানা হয়েছে। গত বছর ২৫ নবেম্বর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে প্রথম ল্যাম্পপোস্ট বসানোর কাজ শুরু হয়েছিল। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে সেতু বিভাগ। মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে দুটি অনুষ্ঠান হবে ধরে নিয়ে সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে ১৮টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে দাওয়াত দেয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত কমিটি দাওয়াত কার্ডের নক্সা ও সজ্জার কাজ শুরু করে দিয়েছে। মনোরম ভেন্যু, সাজসজ্জা, আসন ব্যবস্থাপনা ও অতিথিদের অভ্যর্থনার জন্য রয়েছে কমিটি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভিডিও প্রদর্শনী থাকবে। অতিথিদের দেয়া হবে উপহার-স্যুভেনির। এর জন্যও কমিটি গঠন করা হয়েছে। অতিথিদের মাওয়া ও জাজিরার দুই পাড়েই আপ্যায়নের ব্যবস্থা করা হবে। আর এই কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য কমিটি করা হয়েছে। এ ছাড়া করোনাকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য দুই পাড়েই একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিশিষ্ট রাজনীতিক ছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকেরা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরুর আগে থেকেই এই প্রকল্প দেশে-বিদেশে আলোচিত। এ জন্য অনুষ্ঠান যতটা সম্ভব আকর্ষণীয় করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
বদলে যাবে ২১ জেলার অর্থনীতি ॥ পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার অর্থনৈতিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে। এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলে যাবে। মোংলা ও পায়রা বন্দরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। পদ্মা সেতুর মাধ্যমে বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়েতে যুক্ত হবে। এই বৃহৎ অঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্প প্রতিষ্ঠান ও ইপিজেড। পিছিয়ে পড়া এই অঞ্চলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার বাড়বে। সারাদেশের অর্থনীতিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এক সমীক্ষা অনুযায়ী, পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার পর জিডিপি ১ দশমিক ২৩ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জিডিপি বাড়বে ২ দশমিক ৩ শতাংশ। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিছিয়ে পড়া ২১টি জেলা ৩টি বিভাগের অন্তর্গত। এগুলো হচ্ছে- বরিশাল বিভাগের বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও ঝালকাঠি। ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও রাজবাড়ী। এছাড়া খুলনা বিভাগের খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, নড়াইল, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ ও মাগুরা। স্বাধীনতার পর থেকে এই জেলাগুলো ছিল অবহেলিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকেই এসব জেলায় উন্নয়নের জোয়ার শুরু হয়। বৃহত্তর এই অঞ্চলকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের জন্য শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর গুরুত্ব অনুধাবন করেই প্রকল্প হাতে নেন।
দেশের বড় তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র। আছে রামপাল বিদ্যুতকেন্দ্র। দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র বরিশাল বিভাগেই নির্মাণের পরিকল্পনা করার লক্ষ্যে কাজ শুরু হয়েছে। বিদ্যুতের সরবরাহ বাড়লে এই এলাকায় শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন হবে। পায়রা বন্দর, পায়রা তাপ বিদ্যুতকেন্দ্র, সাবমেরিন ক্যাবল ল্যান্ডিং স্টেশন, ফোর লেনের পায়রা সেতু, শেরে বাংলা নৌঘাঁটি ও ইপিজেড স্থাপিত হলে পুরো দক্ষিণাঞ্চল গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক জোনে পরিণত হবে। পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলে বরিশালের জেলাগুলোর সঙ্গে সারাদেশের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে। সাগরকন্যা কুয়াকাটায় পর্যটনের প্রসার বাড়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পায়রা থেকে কুয়াকাটার বিস্তৃত এলাকা ঘিরে পর্যটনভিত্তিক উন্নয়নের লক্ষ্যে একটি সমন্বিত মাস্টার প্ল্যান হাতে নিয়েছে সরকার। এই মাস্টার প্ল্যানে থাকছে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, আধুনিক পর্যটনকেন্দ্র, শিল্পভিত্তিক বন্দরনগরী, পরিকল্পিত নগরায়ন, যোগাযোগ, অর্থনীতি ও কৃষি খাতের উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা ও দুর্যোগ ঝুঁকিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাভিত্তিক কার্যক্রম। পদ্মা সেতু এসব ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখবে। লনা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা বন্দর আরও গতিশীল হবে। ব্যবসায়ীরা আমদানি ও রফতানিতে উৎসাহ পাবেন। একই সঙ্গে পায়রা বন্দরের গুরুত্বও বাড়বে। আধুনিকায়ন হলে পায়রা বন্দর ভবিষ্যতে এক বৃহত্তম বন্দরে পরিণত হবে। এমনকি ভুটান, পূর্ব নেপাল ও ভারতের দক্ষিণ-পূর্ব রাজ্যগুলো পায়রার মাধ্যমে পণ্য আমদানিতে উপকৃত হবে।
পদ্মাপারে আইটি পার্ক ॥ পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে পদ্মাপারে হচ্ছে তাঁতপল্লী ও আইটি পার্কও। ইতোমধ্যে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় আইটি পার্ক গড়ে তোলার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ঢাকা-মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের পাশে শিবচরের কুতুবপুরের কেশবপুরে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি এ্যান্ড হাইটেক পার্ক’ নির্মাণে ৭০ একর জায়গা নির্ধারণ করেছে আইসিটি মন্ত্রণালয়। প্রকল্প পাস হলেই ভূমি অধিগ্রহণ শুরু হবে। এর বাইরে আরও অনেক ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শেখ রাসেল শিশু পার্ক, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব নার্সিং ইনস্টিটিউট এ্যান্ড কলেজ, আইএইচটি ভবন, ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, শিল্পকলা একাডেমি ভবন, মুক্তমঞ্চ ও অলিম্পিক ভিলেজ। সিঙ্গাপুরের আদলে গড়ে তোলা হবে বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক ও আইকন টাওয়ার। ইলিয়াস আহম্মেদ চৌধুরীর (দাদা ভাই) নামে শিবচর উপজেলায় ‘দাদা ভাই উপশহর’ হাউজিং প্রকল্পের প্লট প্রস্তুতির কাজ ও বরাদ্দ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু বহুতল ভবন হয়েছে এবং সেগুলোতে মানুষ বসবাস করা শুরু করেছে। প্রায় ১০৫ একর জমিতে গড়ে ওঠা এ প্রকল্পে ১ লাখের বেশি মানুষের আবাসন হবে।