বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের শেয়ারবাজার থেকে বড় ধরনের রাজস্ব পেয়েছে সরকার। সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৯০ কোটি ৮৮ লাখ টাকা রাজস্ব জমা দিয়েছে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), যা আগের বছরের তুলনায় ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বেশি। একই সঙ্গে এই রাজস্ব গত ১১ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
ডিএসইর তথ্যমতে, বিদায়ী বছরে প্রতিষ্ঠানটিতে ২৪০ কর্মদিবসে মোট ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হয়েছে। সেখান থেকে ব্রোকার হাউসের শেয়ার কেনাবেচা ও উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রির ওপর কমিশন বাবদ সরকার এই রাজস্ব পেয়েছে। ২০২১ সালের জুলাই থেকে ২০২২ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত সময়ে ২৪০ কর্মদিবসে লেনদেন হয়েছে। এ সময়ে ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৭২০ কোটি টাকার বেশি। সেখান থেকে সরকার ২৯০ কোটি ৮৮ লাখ টাকার রাজস্ব পেয়েছে। এর মধ্যে ব্রোকার হাউসের সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কেনাবেচা থেকে কমিশন বাবদ সরকার রাজস্ব পেয়েছে ২১৮ কোটি টাকা। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি থেকে রাজস্ব পেয়েছে ৭২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
এর আগের বছর ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছিল ২৬৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। সেই বছর ব্রোকার হাউসের লেনদেন থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল ১৮০ কোটি ১৭ লাখ টাকা। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি বাবদ আয় হয়েছিল ৮৬ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ ২০২০-২১ অর্থবছরের তুলনায় ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেশি রাজস্ব পেয়েছে সরকার;
যা শতাংশের হিসেবে ৯ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। নিয়ম অনুসারে, সরকার ব্রোকার হাউস থেকে লেনদেনের ওপর শূন্য দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ হারে কর নেয়। আর উদ্যোক্তা-পরিচালকদের শেয়ার বিক্রি থেকে ৫ শতাংশ হারে কর নেয়।
এর আগে ২০১০-১১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছিল ৪২৭ কোটি টাকা, ২০১১-১২ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় হয়েছিল ২৭০ কোটি টাকা। তার পরের ২০১২-১৩ অর্থবছরে সরকারকে ২৭২ কোটি টাকা রাজস্ব দিয়েছিল। তার পরের বছগুলোয় যথাক্রমে ২০১৩-১৪ সালে ১২৭ কোটি টাকা, ২০১৪-১৫ সালে ১৫৪ কোটি টাকা, ২০১৫-১৬ সালে ১৭৪ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ সালে ১৫৮ কোটি টাকা, ২০১৭-১৮ সালে ২৪৬ কোটি টাকা, ২০১৯-১৯ সালে ২৩৩ টাকা, ২০১৯-২০ সালে ২৫১ কোটি টাকা এবং ২০২০-২১ সালে ১০৪ কোটি টাকা সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে ডিএসই।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, বিদায়ী বছরের প্রথম আট মাস আগের বছরের চেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে। এ ছাড়াও বিদায়ী বছরে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিওর) মাধ্যমে ছয়টি কোম্পানি পুঁজিবাজার থেকে ৬৯৯ কোটি ৩৬ লাখ টাকা উত্তোলন করেছে। এগুলো পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু করেছে। পাশাপাশি একই সময়ে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে বন্ড ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। প্রতিষ্ঠানগুলোও তালিকাভুক্ত হয়েছে। বাজারে লেনদেন হচ্ছে। দুই ধরনের লেনদেন বাড়ায় সরকার পুঁজিবাজার থেকে রাজস্ব বেশি পেয়েছে।
অন্যদিকে সদ্য বিদায়ী ২০২১-২২ অর্থবছরে সাময়িক হিসাব অনুযায়ী, আমদানি শুল্ক, মূল্য সংযোজন কর-ভ্যাট ও আয়কর মিলে ২ লাখ ৯৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণ হয়েছে। এ সময়ে প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে ১৪ শতাংশ। আগের ২০২০-২১ অর্থবছর রাজস্বে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০ শতাংশ। আদায় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা। বিদায়ী বছরে এনবিআরের মাধ্যমে রাজস্বের মোট লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসাবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি ঘাটতি হতে পারে।