বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : রাজধানীসহ সারাদেশে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিলসহ নানা আয়োজনে পালিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস। এ উপলক্ষে শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ অঙ্গ, সহযোগী ও সমমনা সংগঠনগুলো পৃথক পৃথক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
এসব আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। একইসঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন বক্তব্যের জবাবও দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আয়োজিত আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের (আওয়ামী লীগ) নাকি পতনের সাইরেন বাজছে। কোথা থেকে শুনলেন সাইরেনটা? কোথায় শুনলেন? রাস্তায় যখন গাড়ি চলে আপনি সেই সাইরেন শুনেছেন, ওটা সরকার পতনের সাইরেন নয়।’ তিনি বলেন, ‘সাইরেন শুনবেন, শুনতে ঠিকই পাবেন।
তবে সেটা আপনাদের বিদায় ঘণ্টার সাইরেন। নেতিবাচক রাজনীতি আপনাদের অপ্রাসঙ্গিক করে দিয়েছে। আপনাদেরই বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে।’
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা থেকে ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে নির্বাচনে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘খেলা হবে, রাজনীতির মাঠে খেলা হবে। নির্বাচনের মাঠে খেলা হবে। আসুন, খেলতে নামুন, নির্বাচন আর রাজনীতির মাঠে খেলায় আসুন।’
বিশ্ব পরিস্থিতি তুলে ধরে এ সময় দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘খুব খারাপ সময়, খুব ঝুঁকিপূর্ণ সময়। এ সময়ে ঐক্যের বিকল্প নেই। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ কিছু করতে পারবে না।’ আওয়ামী লীগের কর্মীদের হুঁশিয়ার থাকতে হবে, সতর্ক থাকতে হবে। বঙ্গবন্ধুকন্যা বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে কঠিন সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়েছেন। সারাবিশ্বে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া, সেই প্রতিক্রিয়ায় জ্বালানির দাম ক্রমাগত বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি চরমে। শ্রীলংকার কথা বাদ দিলাম। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায়ও মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। বাংলাদেশকেও এ কঠিন জমিনে অগ্রসর হতে হচ্ছে।’
একই আলোচনা সভায় অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেছেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৬ জুলাই কলঙ্কময় দিন। সেদিন কোনো কারণ ছাড়াই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দেশের জনগণ শেখ হাসিনার সঙ্গে আছে জেনেই সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাকে গ্রেপ্তার করে। দুর্নীতির কারণে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা কতটা হাস্যকর ছিল তা আজ প্রমাণিত হয়েছে।
হানিফ বলেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধুকন্যাকে গ্রেপ্তার করা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ২০০১ সালের নির্বাচনের সঙ্গে এর যোগসূত্র আছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট গ্যাস রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছিল। তখন শেখ হাসিনা বলেছিলেন, দেশে গ্যাস ৫০ বছরের রিজার্ভ থাকলে রপ্তানি করব। এরপর থেকে আমাদের প্রতি পশ্চিমাদের বিরূপ মনোভাব আছে। ১৯৭১ সালোর মহান মুক্তিযুদ্ধেও পশ্চিমা রাষ্ট্রটি বাংলাদেশের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। বাঙালিরা বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল। পাকিস্তানের পাশাপাশি পশ্চিমা শক্তি এ পরাজয় মেনে নিতে পারেনি। যার কারণে দেশ স্বাধীনের সাড়ে তিন বছরের মাথায় বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হয়েছিল। বিএনপি নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখতে চায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় থেকে লুটপাট করেছে। দেশকে জঙ্গিদের অভয়ারণ্য করেছে। আওয়ামী লীগ সবসময় গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে, এর বাইরে যায়নি।
২০০৭ সালে শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারে গোটা জাতি অবাক হয়েছিল- উলেস্নখ করে তিনি বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন শেখ হাসিনা। তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ থাকলে খালেদা জিয়া তাকে ছেড়ে দিতেন না। শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য খালেদা জিয়া চেষ্টা করেছেন। গ্রেনেড হামলা করে বারবার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিএনপি জানতো নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সম্ভব নয়। ১ কোটি ২০ লাখ ভুয়া ভোটার বানিয়েছিল। যে কোনোভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকতে ইয়াজদ্দিনকে দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে। বিএনপি জানতো তাদের অপকর্মের কারণে নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা সম্ভব ছিল না। কিন্তু জনগণের কারণে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা ব্যর্থ হয়। এর বিকল্প ব্যবস্থা করে রেখেছিল পশ্চিমা বিশ্ব।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সভায় বক্তৃতা করেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ দলীয় নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার মানসিকতা লালন করার আহ্বান জানিয়েছেন। এ সময় তিনি বলেন, ২০০৮ সালে দল ঐক্যবদ্ধ ছিল বলে নেত্রীকে মুক্ত করতে পেরেছিলাম। আগামী নির্বাচনেও যদি দল ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করে ইনশাআলস্নাহ ২০০৮ সালের মতো বিজয় আসবে, কেউ ঠেকাতে পারবে না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রকেই বন্দি করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের ১১ জুন জননেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রও মুক্তিলাভ করেছে।
তিনি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতার দরকার নেই, কিন্তু বাংলাদেশের জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনাকে দরকার। এই দেশকে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযোদ্ধাদের স্বপ্নের ঠিকানায় পৌঁছানোর জন্য শেখ হাসিনাকে দরকার আছে। আমরা সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারব যদি মানুষকে জিম্মি, বিভ্রান্তি, জ্বালাও-পোড়াও করা এবং নেতিবাচক রাজনীতি বন্ধ হয়। যারা এ কাজগুলো করছে তাদের শুধু প্রতিবাদ নয়, প্রতিহত করতে হবে।
ডক্টর হাছান মাহমুদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সেনাসমর্থিত তৎকালীন ১/১১ সরকারের সব অন্যায়, অবিচার এবং দুর্নীতির একমাত্র আপসহীন প্রতিবন্ধক ছিলেন বলেই তাকে বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। সেদিন প্রকৃতপক্ষে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের মধ্যদিয়ে শুধু একজন ব্যক্তি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, সেদিন জননেত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছিল। গণতন্ত্রের পায়ে সেদিন শেকল পরানো হয়েছিল।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, তখন আমাদের দলের অনেক বড় নেতা বেসুরে কথা বলেছেন, কিন্তু তৃণমূলে দলীয় নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। যারা বেসুরে কথা বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন তারা অনেকে ভয়ে দলীয় প্রোগ্রামেও যেতেন না, কেউ কেউ গেলেও অপদস্থ হয়েছেন। নেত্রী গ্রেপ্তার হবে আমরা বুঝতে পেরেছিলাম। নেত্রীও জানতেন, তিনি প্রস্তুত ছিলেন, আমি নিজেও ঘরে থাকতাম না। রাতে জায়গা বদল করে করে থাকতাম। নেত্রীকে গ্রেপ্তারের সময় সুধাসদনে সবকিছু তছনছ করা হয়েছিল। ডক্টর ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করা হয়েছিল।
চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটিউটে মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে এবং প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল প্রমুখ।