বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কর্ণফুলী নদীর তলদেশে দুই দেশের যৌথ অর্থায়নে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে টানেলের দুই প্রবেশ মুখে স্থাপন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক স্ক্যানার মেশিন। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন নির্মাণাধীন প্রকল্পে স্ক্যানার স্থাপনের বিষয়টি না থাকলেও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা বিশ্বের প্রথম বলে জানান।
ইতোমধ্যে টানেলের সার্বিকভাবে কাজের অগ্রগতি ছাড়িয়েছে ৮৭ ভাগের ওপরে। এ দিকে টানেল সংযোগ সড়কের কাজের অগ্রগতি ও সন্তোষজনকভাবে এগিয়ে চলছে। ইতোমধ্যে সংযোগ সড়কের কাজের সার্বিক অগ্রগতি হয়েছে প্রায় ৫০ ভাগ। ২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের উন্নয়নের যে আকাক্সক্ষার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তা আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে ডিসেম্বরে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টি লেন রোড টানেল নামে প্রত্যাশিত প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এতে প্রকল্প সহায়তা রয়েছে পাঁচ হাজার ৯০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং সরকারের রয়েছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম প্রান্তে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩৮৩ একর। যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু ও সড়ক মন্ত্রণালয় (ইইঅ) ও চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (ঈঈঈ)।
২.৪৫ কিলোমিটার ও দুই প্রান্তের তীরসহ টানেলের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩.৪ কিলোমিটার আর নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশের সংযোগ সড়কসহ এ প্রকল্পের সর্বমোট দৈর্ঘ্য হবে ৯.৩৩ কিলোমিটার। আর প্রতিটি টিউবের ভেতরের অংশে প্রশস্ত হচ্ছে ১০.৮ মিটার করে। আনোয়োরা প্রান্তে ৭০০ মিটারের একটি উড়াল সড়ক বা ফ্লাইওভারসহ ৫.৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেন সড়ক নির্মিত হবে, যা আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনীতে এসে চট্টগ্রাম আনোয়ারা বাঁশখালী পিএবি সড়কের সাথে মিলিত হবে অপর প্রান্তে .৫৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক মিলিত হচ্ছে নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে মূল সড়কের সাথে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে লালদীঘির ওই জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর ৯ম জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরপরই শুরু হয়েছিল নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সম্ভাব্য সমীক্ষাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি। ১০ম জাতীয় নির্বাচনের পরই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ওই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেতে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং একই বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন বা সম্পাদনের সময় ধরা হয়েছে পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্পের মূল কাজ দু’টি টিউব খনন সম্পন্নসহ টানেল প্রকল্প অগ্রগতি গতকাল পর্যন্ত অগ্রগতি ছাড়িয়েছে প্রায় ৮৭ ভাগ। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রকল্পের পরিচালক হারুন অর রশিদ চৌধুরী। তিনি জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প কাজের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশা করেন।
গতকাল তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্প কাজ শুরু হওয়ার পরে থেকে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রকোপের কারণে প্রায় দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হয়েছে। এ কারণে সময় প্রচুর লেগেছে; তার পরও প্রত্যাশিতভাবে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে এবং প্রকল্প কাজ সম্পন্নের মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।