বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যখন গম আমদানি নিয়ে সংকটে, সে সময় বাংলাদেশে গম রপ্তানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কাজাখস্তান ও বেলারুশ। দেশ দুটির রাষ্ট্রীয় কোম্পানি জানিয়েছে, খাদ্য সংকট মোকাবিলায় তারা বাংলাদেশে গম পাঠাতে চায়। এজন্য দ্বিপক্ষীয় চুক্তির বিষয়েও আগ্রহ প্রকাশ করেছে তারা।
সম্প্রতি কাজাখস্তানের রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ফুড কন্ট্রাক্ট করপোরেশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে জানিয়েছে, বিভিন্ন দেশে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠানটি গম রপ্তানি করে। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে চাহিদা অনুযায়ী গম সরবরাহ করে তারা। বাংলাদেশ আগ্রহ দেখালে কাজাখস্তানের এ কোম্পানিটি প্রয়োজনীয় গম সরবরাহ করবে। খাদ্য রপ্তানির বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতেও আগ্রহ প্রকাশ করেছে চিঠিতে। বাংলাদেশে গম রপ্তানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে একই ধরনের চিঠি পাঠিয়েছে বেলারুশ।
বাংলাদেশে গম রপ্তানির বিষয়ে দেশ দুটির এ আগ্রহের বিষয়ে জানতে চাইলে খাদ্য সচিব মো. ইসমাইল হোসেন এনডিসি জানান, তাঁরা এই মাত্র (গতকাল বিকাল) বেলারুশের আগ্রহপত্র পেয়েছেন। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো কাজাখস্তানের রাষ্ট্রীয় কোম্পানির চিঠি এখনো তাঁর দফতরে পৌঁছায়নি। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে খাদ্য সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশে গম রপ্তানির বিষয়ে যে কোনো দেশের আগ্রহকে আমরা স্বাগত জানাই। যে দেশের সঙ্গে আমাদের রাষ্ট্রীয় পলিসি মিলবে সে দেশ থেকেই গম আমদানি করা হবে। খাদ্য আমদানির বিষয়ে কিছু দেশের সঙ্গে আলোচনা চলছে। এর মধ্যে রাশিয়া থেকে ২ লাখ মেট্রিক টন গম আনার বিষয়টিও রয়েছে।’ খাদ্য মন্ত্রণালয় জানায়, প্রতি বছর সরকারিভাবে ৫-৬ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানি করা হলেও চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ শস্যটি আমদানির পরিমাণ বাড়তে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছাড়াও ইউরোপে যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিকভাবে খাদ্যের বাজারে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এ ছাড়া যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্বব্যাপী খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে বলেও এরই মধ্যে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে জাতিসংঘসহ বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠান। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে খাদ্য আমদানির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, দেশে প্রতি বছর ৭০ থেকে ৭৫ লাখ মেট্রিক টন গমের চাহিদা রয়েছে। এর বিপরীতে অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের পরিমাণ ১২ লাখ টনের কিছু বেশি। কমবেশি ৬০-৬৫ লাখ মেট্রিক টন গম সরকারি ও বেসরকারিভাবে আমদানি করে চাহিদা মেটানো হয়। সূত্র জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয় প্রতি বছর ৫-৬ লাখ মেট্রিক টন গম আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করে। বাকি ৫৮ থেকে ৬০ লাখ মেট্রিক টনের পুরোটাই আমদানি হয় বেসরকারি খাতের মাধ্যমে। আর বেসরকারি খাতের এ আমদানির বেশির ভাগই আসে রাশিয়া, ইউক্রেন, আর্জেন্টিনা ও ভারত থেকে। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বেসরকারি খাতের আমদানি প্রক্রিয়া মার্চ থেকে থমকে আছে। বিকল্প হিসেবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে গম আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করে। এপ্রিলে ভারতও গম রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে গম, আটা ও ময়দার দাম বাড়তে থাকে হুহু করে। একই সঙ্গে বাড়তে থাকে আটা-ময়দা থেকে তৈরি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের দাম। এ পরিস্থিতিতে মে-তে জরুরি ভিত্তিতে ১২ লাখ মেট্রিক টন গম আমদানির জন্য কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক উদ্যোগ নিতে বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠায় খাদ্য মন্ত্রণালয়। এরপর জুনে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের মার্কফেড নামে একটি সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে গম সরবরাহের আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি পাঠায় বাণিজ্য ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে। একইভাবে গম রপ্তানির বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে ১১ জুলাই কাজাখস্তান ও গতকাল বেলারুশ বাংলাদেশ সরকারের কাছে চিঠি পাঠায়।