বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী থেকে জায়দেবপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথে বৈদ্যুতিক ট্রেন পরিচালনা করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। আর সে হিসাবে ১৫ কোটি টাকা খরচে একটি কারিগরি প্রকল্প চলমান আছে। তবে ৯ মাস অতিক্রম করলেও আজো পরামর্শক প্রতিষ্ঠানই নিয়োগ পায়নি। অথচ প্রকল্পটি ২০২৩ সালের এপ্রিলে দেড় বছরে সমাপ্ত করার কথা। পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সমীক্ষা ও ডিজাইন প্রকল্প যথাসময়ে শেষ করা না হলে মূল প্রকল্প নিয়ে অগ্রসর হওয়া যায় না। এই প্রকল্পগুলো নির্ধারিত সময়ে শেষ হয় না বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই। সঠিকভাবে পরিকল্পনা নিয়ে প্রকল্প নেয়া হয় না বলে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম এবং টঙ্গী থেকে জায়দেবপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথে বৈদ্যুতিক ট্রেন পরিচালনা করা। কারিগরি এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে ১৫ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি দেড় বছরে সমাপ্ত করার জন্য অনুমোদন দেয়া হয়। ২০২৩ সালের এপ্রিলে এই সমীক্ষা কার্যক্রম সমাপ্ত করার কথা। বাংলাদেশ রেলওয়েতে বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন প্রবর্তনের জন্য নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা-চট্টগ্রামই হচ্ছে অনুমোদন পাওয়া প্রথম প্রকল্প। কারিগরি, অর্থনৈতিক, আর্থিক, পরিবেশগত ও সামাজিক বাস্তবোপযোগিতা বিশ্লেষণ, বিশদ প্রকৌশলগত নকশা প্রণয়ন, বিশদ ব্যয় প্রাক্কলন প্রস্তুতি, ডিপিপি ও টেন্ডার ডকুমেন্ট প্রস্তুতি, পরিবেশের ওপর প্রভাব মূল্যায়ন, ভূমি অধিগ্রহণ ও ক্ষতিগ্রস্ত পুনর্বাসন পরিকল্পনাসহ আনুষঙ্গিক বিভিন্ন কাজ করা হবে প্রকল্পটির মাধ্যমে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৩৭ কিলোমিটার। এর সাথে টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনের আরো প্রায় ১১ কিলোমিটার রেলপথ বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে রেলওয়ে। বর্তমানে এ রেলপথটিতে তিনটি প্রকল্প চলমান আছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জের মিটার গেজ লাইন বদলে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন করা হচ্ছে। ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল গেজ লাইন ও টঙ্গী-জয়দেবপুরে আরেকটি ডুয়েল গেজ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। একইভাবে আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত নির্মাণ করা হচ্ছে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন রেলপথ। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর হয়ে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পুরো রেলপথটি ডাবল লাইন হয়ে যাবে। আর এ রেলপথটিকে ঘিরেই বিদ্যুৎ চালিত ট্রেন প্রবর্তনের পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
পর্যালোচনা সভায় প্রকল্প পরিচালকের তথ্য অনুযায়ী, সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ও বিশদ ডিজাইন প্রণয়নের জন্য পরামর্শক নিয়োগের জন্য রিকোয়েস্ট অব প্রোপজাল প্রেরণ করা হয়েছে। ১২টি প্রস্তাব থেকে শর্ট লিস্ট করে সাতটি প্রতিষ্ঠানের নিকট আরএফপি ইস্যু করা হয়েছে। আগামী ৭ আগস্ট আরএফপি জমা দেয়ার নির্ধারিত সময়।
রেলওয়ের ওয়েব ও পিডির থেকে অগ্রগতি সম্পর্কে জানা গেছে, জুন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি ৫৯ শতাংশের বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে আরএডিপিতে বরাদ্দ ১৬ লাখ টাকা থেকে আসবাবপত্র ও ল্যাপটপ কেনা এবং স্টেশনারি খাতে ১১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। অবশিষ্ট ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা ব্যয় করা সম্ভব হয়নি। তবে ওই অর্থ উপযোজনের মাধ্যমে বরাদ্দ পুনর্নির্ধারণের পরামর্শ দেন পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের যুগ্মপ্রধান।
বাংলাদেশ রেলওয়ের উপ-মহাপরিচালক পর্যালোচনায় উল্লেখ করেন, প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের সুবিধার্থে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগের লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন নির্মাণের প্রয়োজন হবে। প্রকল্পের আওতায় নিয়োজিতব্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে পিডিবির সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রেখে বিদ্যুৎ সাবস্টেশন র্নিমাণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মিটারগেজ ও ব্রজগেজ লাইনের জন্য ইলেকিট্রক ট্র্যাকশন সুবিধার সম্ভাব্যতা যাচাই আওয়তায় করতে হবে। মিটারগেজ লাইনে ইলেক্ট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা যাচাই করা দরকার।
রেলপথ মন্ত্রণালয় কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা ট্রেনগুলো পরিচালনা করতে প্রায় ৩৫ শতাংশ খরচ কমবে। যাতায়াতে সময় কমবে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কমবে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কার্বন নিঃসরণ কমবে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। এসবের পাশাপাশি প্রকল্পটি রেলওয়ের রাজস্ব আয় বাড়াতেও ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে যে যাত্রী পরিবহন হয়, তার ৫৬ শতাংশই হয় রেলপথে। বিপরীতে রেলপথে পরিবহন হয় ২৭ শতাংশ যাত্রী। অন্য দিকে পণ্য পরিবহনের ৯৬ শতাংশের বেশি হয় সড়কপথে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সড়কপথের ওপর চাপ কমিয়ে রেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহন বাড়ানোর কথা বলছেন তারা।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগে সময় বেশি প্রসঙ্গে প্রকল্প পরিচালকের মন্তব্য হলো, আগ্রহব্যক্তকরণপত্র থেকে সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রস্তুত করা সময়ে কিছু বিষয়ে সংশয় সৃষ্টি হওয়ায় সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট কারিগরি ইউনিট থেকে মতামত নেয়া হয়েছিল। এ জন্য সময় বেশি লেগেছে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের জন্য প্রকল্প পরিচালককে পর্যালোচনা সভা থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ পরিহার করে রেলওয়ের জমিতে প্রস্তাবিত কার্যক্রম সম্পাদন করা সঠিক হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সেটা করার জন্যই প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।