বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে নীরব রুপালি বিপ্লব ঘটেছে। টেকসই উৎপাদন নীতির ফলে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। গত ১৬ বছরে মাছের উৎপাদন দ্বিগুণ বেড়েছে। মোট রফতানি আয়ের ১ দশমিক ২৪ শতাংশ মৎস্য খাতের অবদান। এ খাতে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০২০-২১ সালে দেশের মাছের মোট উৎপাদান দঁড়িয়েছে ৪৬ লাখ ২১ হাজার টন। কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ^বাজারে আর্থিক মন্দা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৪ হাজার ৬৭ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে ৫ হাজার ১৯২ কোটি টাকা আয় হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২৬ দশামিক ৯৬ শতাংশ বেশি। ইলিশ আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল। বিশ্বে ইলিশ আহরণকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য। বর্তমানে বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করা হচ্ছে। মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
দেশের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন, রফতানি বাণিজ্যের প্রসার সর্বোপরি আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অনস্বীকার্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রাজ্ঞ নেতৃত্বে দেশে মৎস্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। তাঁর দিকনির্দেশনায় সরকারের সময়োপযোগী ও বাস্তবভিত্তিক নীতি গ্রহণ, মৎস্য গবেষণার উন্নয়ন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন, মাঠ পর্যায়ে প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন এবং চাষী ও উদ্যোক্তা পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক ও লাগসই কারিগরি পরিষেবা প্রদানের কারণে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। বর্তমানে দেশের মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার প্রায় ৬০ ভাগ জোগান দিচ্ছে মাছ। মাথাপিছু প্রতিদিন ৬০ গ্রাম মাছের চাহিদার বিপরীতে মানুষ এখন ৬২ দশমিক ৫৮ গ্রাম মাছ গ্রহণ করছে। দেশের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির ২৬ দশমিক ৫০ শতাংশ এখন মৎস্য খাতের অবদান। বিগত ১২ বছরে মৎস্য খাতে জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ২ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মোট মাছের উৎপাদন ছিল ২৭ দশমিক ১ লাখ টন যা ২০২০-২১ অর্থবছরে বেড়ে হয়েছে ৪৬ দশমিক ২১ লাখ টন। এর মধ্যে সামুদ্রিক মাছের অবদান ৬ দশমিক ৮১ লাখ টন যা দেশের মোট মৎস্য উৎপাদনের ১৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন ছিল ২ লাখ ৯৯ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৫ লাখ ৬৫ হাজার টনে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭ সালে ‘বাংলাদেশের ইলিশ’ ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই সনদ লাভ করেছে।
দেশের সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সোনার বাংলা গড়ার কার্যক্রম শুরু করেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা বিনির্মাণের স্বপ্ন পূরণে তাঁর সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব এবং গতিশীল উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে বাংলাদেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে এ অপ্রতিরোধ্য উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় মৎস্যখাত অন্যতম অংশীদার। মৎস্য আহরণ ও উৎপাদনে ব্যাপক সাফল্য বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গৌরবের অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে। জাতিসংঘ খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সাম্প্রতিক ‘দ্য স্টেট অব ওয়ার্ল্ড ফিশারিজ এ্যান্ড এ্যাকুয়াকালচার, ২০২২’ শিরোনামের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মৎস্য আহরণে বাংলাদেশ ৩য়, বদ্ধ জলাশয়ে চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম, ইলিশ আহরণে ১ম ও তেলাপিয়া উৎপাদনে ৪র্থ অবস্থানে রয়েছে। এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও চাষের মাছ উৎপাদনে তিনটি দেশ বিশ্বের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করছে। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভিয়েতনাম এবং আফ্রিকায় মিসর এই সাফল্য দেখিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বে স্বাদু পানির মাছের ১১ শতাংশ এখন বাংলাদেশে উৎপাদন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের মৎস্য খাতের এ অনবদ্য অর্জন জাতি হিসেবে আমাদের গৌরবান্বিত করে, আনন্দে উদ্বেল করে।
ইলিশ আহরণে বিশ্বে বাংলাদেশ রোল মডেল। বিশ্বে ইলিশ আহরণকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে। বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের ১২ দশমিক ২২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশের অধিক এবং একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। পৃথিবীর প্রায় দুই-তৃতীয়াংশের অধিক ইলিশ আহরণকারী বাংলাদেশ এখন থেকে বিশ্বে উপস্থাপিত হবে ইলিশের দেশ হিসেবে। সরকার ইলিশ সম্পদ রক্ষা ও উন্নয়নে নানা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে।
এসব কর্মসূচীর মধ্যে নির্বিচারে জাটকা সংরক্ষণে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নবেম্বর হতে জুন মাস পর্যন্ত মৎস্য সংরক্ষণ আইন বাস্তবায়ন এবং জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালে জেলেদের চার মাস ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান, মা ইলিশ রক্ষায় প্রধান প্রজনন মৌসুমে মোট ২২ দিন প্রজনন এলাকাসহ দেশব্যাপী ইলিশ আহরণ, বিপণন, পরিবহণ ও মজুদ বন্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং আইন বাস্তবায়ন, প্রতি বছর জাটকা রক্ষায় সামাজিক আন্দোলন সৃষ্টির লক্ষ্যে জাটকা সংরক্ষণ সপ্তাহ উদযাপন, জাটকাসহ অন্যান্য মৎস্যসম্পদ ধ্বংসকারী অবৈধ জাল নির্মূলে বিশেষ কম্বিং অপারেশন পরিচালনা, জাটকা রক্ষায় নবেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত, জাটকা আহরণে বিরত দরিদ্র জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান কার্যক্রমের জন্য উপকরণ সহায়তা প্রদান অন্যতম। ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনার সরকারের এ ব্যাপক কর্মযজ্ঞের কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ দশমিক ৬৫ লাখ টন ইলিশের আহরণ হয়েছে, যা ২০১০-১১ অর্থবছরে ইলিশের মোট উৎপাদনের (৩ দশমিক ৪০ লাখ টন) চেয়ে ৬৬ দশমিক ১৭ শতাংশ বেশি। প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে ইলিশের উৎপাদন ২০০৪-০৫ থেকে ২০১৪-১৫ সাল পর্যন্ত গড়ে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৫ সালের পরে ২০১৯-২০ পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় জাটকা আহরণ নিষিদ্ধকালে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৪ মাসে ২০টি জেলার ৯৬ উপজেলার জাটকা আহরণে বিরত থাকা ৩ লাখ ৯০ হাজার ৭০০টি জেলে পরিবারকে প্রতি মাসে ৪০ কেজি হারে মোট ৫৯ হাজার ১৪১ দশমিক ৪ টন চালসহ ২০০৯-১০ থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত ৪ লাখ ৭০ হাজার ৭৪৬ দশমিক ৫৬ টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়। মা ইলিশ আহরণ নিষিদ্ধকালে ২০২১ সালে ৩৭টি জেলার ১৫১টি উপজেলার ৫ লাখ ৫৫ হাজার ৯৪৪টি জেলে পরিবারকে ২০ কেজি হারে ১১ হাজার ১১৮ দশমিক ৮৮ টন ভিজিএফ প্রদান করা হয়েছে। ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত উক্ত কার্যক্রমে মোট ৫২ হাজার ৫৯০ দশমিক ১০ টন ভিজিএফ খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিষয়ভিত্তিক কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানসহ আয়বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। রাজস্ব কর্মকান্ডের পাশাপাশি এ সম্পদের উন্নয়নে ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্পের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
মৎস্য মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটদেশীয় মাছ সংরক্ষণেএ পর্যন্ত ৩৬ প্রজাতির দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন কৌশল ও চাষ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে। এ গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো ময়মনসিংহে প্রতিষ্ঠা করেছে দেশীয় মাছের লাইভ জিন ব্যাংক। এই জিন ব্যাংকে এখন পর্যন্ত ১০২ প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা হয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও চাষ সম্প্রসারণ, শামুক ও ঝিনুক সংরক্ষণ এবং মুক্তা চাষ সম্প্রসারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সম্প্রতি দেশের ১০ জেলার ৪৯ উপজেলায় ‘দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে মৎস্য অধিদপ্তর। বিপন্নপ্রায় মৎস্য প্রজাতির সংরক্ষণ, অবাধ প্রজনন ও বংশবৃদ্ধির মাধ্যমে মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য দেশের বিভিন্ন নদ-নদী ও অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে ৪৯৪টি অভয়াশ্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।
মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্যপণ্য উৎপাদন নিশ্চিতকরণার্থে ২০০৮ সাল হতে এন আরসি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং সে অনুযায়ী মাছ ও চিংড়ির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষণ করা হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে নিরাপদ ও মানসম্পন্ন মৎস্য ও মৎস্যপণ্যের রফতানি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৩টি আন্তর্জাতিক মানের মাননিয়ন্ত্রণ পরীক্ষাগার স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বাজারে চিংড়ি রফতানি অব্যাহত রাখার জন্য চাষী পর্যায়ে রোগমুক্ত এবং মানসম্পন্ন চিংড়ি পোনা সরবরাহ নিশ্চিতকরণে কক্সবাজার, সাতক্ষীরা ও খুলনায় ৩টি পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। মৎস্যচাষ পর্যায়ে ওষুধের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে জন্য ‘এ্যাকোয়াকালচার মেডিসিনাল প্রোডাক্টস নিয়ন্ত্রণ নির্দেশিকা’ প্রণয়ন করা হয়েছে। মৎস্য হ্যাচারি থেকে শুরু করে মাছ চাষ ও প্রক্রিয়াকরণে জড়িত সকল স্থাপনা কার্যকরভাবে পরিদর্শনের জন্য ‘ফিশ এ্যান্ড ফিশারি প্রোডাক্টস অফিসিয়াল কন্ট্রোলস প্রটোকল’ প্রণয়ন ও অনুসরণ করা হচ্ছে।
মৎস্য ও মৎস্যজাত দ্রব্য বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রফতানি পণ্য। বর্তমানে বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশ মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানি করে। মাছের পাশাপাশি অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদের উন্নয়ন এবং এসব পণ্যের রফতানি উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশব্যাপী কাঁকড়া, কুচিয়া ও সিউইডের চাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ হতে প্রধানত গলদা, বাগদা, হরিণাসহ বিভিন্ন জাতের চিংড়ি; স্বাদুপানির মাছ যেমন- রুই, কাতলা, মৃগেল, আইড়, টেংরা, বোয়াল, পাবদা, কৈ প্রভৃতি এবং সামুদ্রিক মাছের মধ্যে ভেটকি, দাতিনা, রূপচাঁদা, কাটল ফিশ ইত্যাদি রফতানি হয়ে থাকে। এছাড়াও শুঁটকি মাছ, মাছের আঁইশ এবং চিংড়ির খোলসও রফতানি করা হয়ে থাকে। বর্তমানে চাষের মাধ্যমে উৎপাদিত কাঁকড়াসহ প্রাকৃতিক উৎস হতে আহরিত কাঁকড়া ও কুচিয়া বিদেশে রফতানি করা হচ্ছে। বাংলাদেশ হতে রফতানিকৃত মৎস্যজাত পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ ভ্যালু এ্যাডেড প্রোডাক্টস। বাংলাদেশ হতে সাধারণত আইকিউএফ, কুকড, ফিশ ফিলেট, ইত্যাদি ভ্যালু এ্যাডেড মৎস্যপণ্য রফতানি হয়ে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, রাশিয়া, চীনসহ বিশ্বের ৫২টি দেশে বাংলাদেশের মৎস্য ও মৎস্যপণ্য রফতানি করা হয়ে থাকে। কোভিড-১৯ এর কারণে বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও বর্তমান সরকারের কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ৭৪ হাজার ৪২ দশমিক ৬৭ টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রফতানির মাধ্যমে ৫ হাজার ১৯১ দশমিক ৭৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে যা বিগত বছরের চেয়ে ২৬ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেশি।
আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সামুদ্রিক জলসীমায় আমাদের ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর মাধ্যমে সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনার নতুন দ্বার উন্মোচন হয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনা, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উপকূলীয় জলাশয়ে মাছ, চিংড়ি, কাঁকড়া ও সিউইড চাষের উদ্যোগ গ্রহণসহ সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের টেকসই উন্নয়নে মৎস্য অধিদফতর ও বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ’ প্রকল্পের আওতায় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সর্বোত্তম আহরণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ‘আরভি মীন সন্ধানী’ নামক মৎস্য গবেষণা ও জরিপ জাহাজের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে এ পর্যন্ত ৩৮টি সার্ভে ক্রুজ পরিচালনা করে ৪৫৭ প্রজাতির মৎস্য ও মৎস্যজাতীয় প্রাণী শনাক্ত করা হয়েছে। একই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমায় মনিটরিং, কন্ট্রোল এ্যান্ড সার্ভেল্যান্স (এমসিএস) ব্যবস্থা জোরদারকরণে বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ব্যান্ডউইথ ও নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভেসেল মনিটরিং সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ১০ হাজার আর্টিসিনাল নৌযান এবং ৫টি বাণিজ্যিক মৎস্য নৌযান ভেসেল মনিটরিং সিস্টেমের আওতায় এসেছে।
চট্টগ্রামে সামুদ্রিক সার্ভেল্যান্স চেকপোস্ট হতে জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সমন্বয়ে মনিটরিং, কন্ট্রোল এ্যান্ড সার্ভিল্যান্স (এমসিএস) ব্যবস্থা জোরদারকরণে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে জয়েন্ট মনিটরিং সেন্টার। এছাড়াও সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মৎস্য আহরণের জন্য ‘গভীর সমুদ্রে টুনা ও সমজাতীয় পেলাজিক মৎস্য আহরণে পাইলট প্রকল্প’ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য সামুদ্রিক মৎস্য আইন, ২০২০ প্রণয়ন করা হয়েছে। সরকার করোনা মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ভ্রাম্যমাণ মাছ বিক্রয় কেন্দ্র ও গ্রোথ সেন্টারের মাধ্যমে ৩৭ হাজার ৯৯ দশমিক ৩৫ টন মাছ বিক্রয় করা হয় যার মোট বাজারমূল্য ৭০৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা। দেশের জেলা ও উপজেলা মৎস্য দফতরসমূহ তাদের ফেসবুক পেজ ও অন্যান্য ডিজিটাল যোগাযোগ মাধ্যমে অনলাইন ফিশ মার্কেটিংয়ের ওপর মাছ বিপণনের বিজ্ঞপ্তি প্রচার করে মাছ বিক্রয় কার্যক্রম চলমান রেখেছে। এ লক্ষ্যে এনএটিপি-২ প্রকল্প হতে সারাদেশে প্রডিউসার অর্গানাইজেশন গঠন করা হয়। কোভিডকালীন কৃষি খাতে ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত ৫০০০ কোটি টাকা প্রণোদনার মধ্যে মৎস্য খাতে ৬ হাজার ৪৩৮ জন মৎস্য চাষীকে স্বল্প সুদে মোট ১৫৩ দশমিক ৭২ কোটি টাকা ঋণ প্রদান করা হয়েছে।
দেশের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এ খাতের ওপর নির্ভরশীল মৎস্যজীবীদের উন্নয়নে নানা প্রকার সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহ ও উদ্যোগে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় দেশের প্রকৃত জেলেদের শনাক্ত করে তাঁদের পরিচয়পত্র প্রদানের যুগান্তকারী উদ্যোগ নিয়েছে। প্রকৃত মৎস্যজীবী ও জেলেদের প্রাপ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মৎস্য অধিদফতর কর্তৃক ১৬ লাখ ২০ হাজার মৎস্যজীবী-জেলেদের নিবন্ধন এবং ১৪ লাখ ২০ হাজার জেলের মাঝে পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়েছে। এই কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ‘জেলেদের নিবন্ধন ও পরিচয়পত্র প্রদান নির্দেশিকা, ২০১৯’ অনুমোদন করেছে এবং এর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিহত ও অক্ষম জেলেদের সহায়তা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘নিহত জেলে পরিবার বা স্থায়ীভাবে অক্ষম জেলেদের আর্থিক সহায়তা প্রদান নীতিমালা ২০১৯’ অনুমোদন এবং এর বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল এ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রজেক্ট’ এর আওতায় জেলেদের ডাটাবেইজ হালনাগাদ এবং স্মার্ট পরিচয়পত্র প্রদানের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।