অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত, বেড়েছে রেমিট্যান্স ও রফতানি

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : করোনা মহামারির পর ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিচ্ছে। সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে অর্থনীতির কয়েকটি সূচক ঊর্ধমুখীধারায় ফিরেছে। বিশেষ করে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি, রফতানি আয়ে ঊর্ধমুখী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি ব্যয় সংকোচন নীতির ‍সুফল মিলছে অর্থনীতিতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের সংকটময় পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রয়োজনের সময় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে। বর্তমানে সময়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির খুবই দরকার ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে জুলাই মাসে দেশে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে আমদানি ঋণপত্র খোলার ক্ষেত্রে ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ডলারের বেশি হলে ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জানানোর কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া বিলাসবহুল পণ্যে এলসি মার্জিন শতভাগ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম পেলে তা আটকে দেওয়া হচ্ছে। এ সব উদ্যোগের ফলে জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে এলসি নিষ্পত্তি কমে এসেছে।’

জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাপে পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এতে করে টালমাটাল হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বেশকিছু উদ্যোগ নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের আমদানি ব্যয় সংকোচন নীতির সুফলও মিলছে। এরইমধ্যে দেশে ‘আমদানি ব্যয় কমছে। বিপরীতে বেড়েছে রফতানি ও প্রবাসী আয়। নিম্নমুখী মূল্যস্ফীতিও।

জানা গেছে, সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে তার আগের মাস জুনের তুলনায় ১১৭ কোটি ডলারের এলসি নিষ্পত্তি কমেছে। একই সময়ে আগের ১৪ মাসের তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে। সদ্য বিদায়ী জুলাই মাসে প্রবাসীরা দেশে প্রায় ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বা ২০৯ কোটি ৬৯ লাখ ১০ হাজার ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৯ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা) রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। এটি একক মাস হিসাবে গত ১৪ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ এবং গত অর্থবছরের জুলাইয়ের তুলনায় ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।

অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের (২০২২-২৩) প্রথম মাস জুলাইয়ে ৩৯৮ কোটি ২৮ লাখ ২০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে জুলাইয়ে রফতানির পরিমাণ ছিল ৩৪৭ কোটি ডলার। আর চলতি বছরের জুলাইয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৯২ কোটি ডলার। এ ছাড়াও জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। চলতি বছরের জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমেছে। জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ হয়েছে, যা জুন মাসে ছিল ৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছে ৬৫৮ কোটি ডলার। যা আগের মাস জুনে এলসি নিষ্পত্তি করা হয়েছিল ৭৭৫ কোটি ডলার। ফলে জুন মাসের তুলনায় জুলাইয়ে ১১৭ কোটি ডলার। এটি শতকরা হিসাবে ৯ দশমিক ২৩ শতাংশ। অন্যদিকে জুলাই মাসে ৫৫৫ কোটি ডলারের এলসি খোলা হয়েছে। আগের মাস জুনে এলসি খোলা হয়েছিল ৭৯৬ কোটি ডলারের। অর্থাৎ, এক মাসের ব্যবধানে এলসি খোলা কমেছে ৩০ দশমিক ২০ শতাংশ।

জানা গেছে, চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৬৮৫ কোটি ডলার, ফেব্রুয়ারিতে ৬৫৫ কোটি ডলার, মার্চে ৭৬৭ কোটি ডলার, এপ্রিলে ৬৯৩ কোটি ডলার, মে মাসে ৭২৫ কোটি ডলার, জুনে ৭৭৫ কোটি এবং সর্বশেষ জুলাই মাসে এলসি নিষ্পত্তি হয় ৬৫৮ কোটি ডলার।

অর্থনীতিঅর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত
Comments (0)
Add Comment