বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগামী বছরের অক্টোবর মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) প্রথম ইউনিটে নিউক্লিয়ার ফুয়েল (জ্বালানি) লোডিং শুরু হবে। একে বলা হয় ‘ফ্রেস নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং’। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে রূপপুরে উপস্থিত থেকে ফুয়েল লোডিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই রূপপুরের প্রথম ইউনিটের ফুয়েল লোডিং উদ্বোধনের বিষয়ে রাশিয়া ও বাংলাদেশ গত মাসে আলোচনার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে এখনো ফুয়েল লোডিংয়ের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়নি।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, এখনো শিডিউল অনুযায়ী প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে প্রকল্পের কাজে কোনো ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়নি। সিডিউল ঠিক রাখার বিষয়ে আমরা বার বার তাদের বলেছি। রসাটমের পক্ষ থেকেও শিডিউল ঠিক থাকবে বলে জানিয়েছে। আগামী বছরের শেষ দিকে প্রথম ইউনিটে ফ্রেস নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং উদ্বোধন হবে। রাশিয়াতে সব বিষয় নিয়ে আমাদের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা চাই এই মাইলফলক স্পর্শ করার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত থাকবেন। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যে কোনো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ‘নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং’ একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন শুরু হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রেও তাই। আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনেই এই কার্যক্রম শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকতার বিষয়ও রয়েছে। এ সময় নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রসাটম, আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) শীর্ষ ব্যক্তি এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যক্তিরাও উপস্থিত থাকবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে ফুয়েল লোডিং কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন। আগামী বছর ডিসেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হবে। কিন্তু এর আগেই ফুয়েল লোডিং শুরুর চেষ্টা চলছে। সম্ভাব্য সময় হিসেবে অক্টোবর মাসকে বেছে নেয়া হয়েছে। তবে কোনো কারণে পিছিয়ে গেলে নভেম্বর মাসে হতে পারে।
সূত্র জানায়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি পরমাণু বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল গত জুলাই
মাসের শেষের দিকে রাশিয়া সফর করেন। এই প্রতিনিধি দলটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়োজিত রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক শক্তি করপোরেশন-রসাটমের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তাদের আলোচনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি, প্রথম ইউনিটের নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং, ফুয়েল বাংলাদেশে আনার পর কিভাবে রূপপুরে নেয়া হবে, ফুয়েল লোডিংয়ের সময় ও তারিখ নির্ধারণ এবং আনুষ্ঠানিকতাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ কার্যক্রম যথাসময়ে সম্পন্ন করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। এই বিষয়ে ইতিপূর্বে বার বার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রসাটমকে অবহিত করা হয়েছে। মন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের রাশিয়া সফরকালে আলোচনায় রসাটম কর্মকর্তারাও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হবে বলে বাংলাদেশকে নিশ্চয়তা দিয়েছে। বৈঠকে রসাটমের শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছে, সিডিউল অনুযায়ী পুরো প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলেছে এবং ২০২৩ সালের শেষ দিকে প্রথম ইউনিটের ‘ফুয়েল লোডিং’ হবে। একে বলা হয় ফ্রেস নিউক্লিয়ার ফুয়েল লোডিং। পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ফুয়েল লোডিং প্রকল্প বাস্তবায়নের শেষ ধাপ। এর মধ্য দিয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন শুরু করবে। তবে এই ফুয়েল লোডিংয়ের তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বাংলাদেশে এবং রাশিয়া আবারো আলোচনায় বসে সুবিধাজনক সময়ে তারিখ নির্ধারণ করবে।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি সরবরাহ করবে রাশিয়া। জ¦ালানি সরবরাহের জন্য রাশিয়ান নিউক্লিয়ার ফুয়েল সাপ্লাই কোম্পানি-টিভিইল এর সঙ্গে ইতোমধ্যেই চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। আকাশপথে নিউক্লিয়ার ফুয়েল ঢাকায় আসার পর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে বিমানবন্দর থেকে রূপপুরের প্রকল্প এলাকায় নেয়া হবে। এই নিরাপত্তা প্রক্রিয়ার সঙ্গে আর্মি, পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনী যুক্ত থাকবে। তাদেরও আগে থেকেই প্রস্তুত করতে হবে। নিউক্লিয়ার ফুয়েল স্থানান্তর সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনে ‘বিশেষ নিরাপত্তা’র কথা বলা আছে। এই প্রক্রিয়াটি জাতীয় নিরাপত্তা হিসেবে গুরুত্ব পাবে। এইসব বিষয়েও রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে আলোচনা হয়েছে।
দুই ইউনিট বিশিষ্ট এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিটি ইউনিটে ১২০০ করে মোট ২৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ২০২৩ সালে প্রখম ইউনিট এবং ২০২৪ সালে দ্বিতীয় ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করার চুক্তি রয়েছে। প্রকল্পের মেয়াদকাল ৬০ বছর ধরা হয়েছে। তবে পরবর্তীতে আরো ২০ বছর অর্থাৎ মোট ৮০ বছর বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে রাশিয়ার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির থ্রি প্লাস প্রজম্মের ভিভিইআর-১২০০ মডেলের রিয়্যাক্টর স্থাপন করা হবে। রসাটমের প্রকৌশল বিভাগ এটমস্ত্রয়এক্সপোর্ট জেনারেল ডিজাইন ও কন্ট্রাকটর হিসাবে দায়িত্ব পালন করছে।