বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিদেশ থেকে বেশি দামে সার কিনে দেশের বাজারে কম দামে বিক্রি করার কারণে মাত্র তিন মাসে ইউরিয়া সারে ভর্তুকি গুনতে হচ্ছে তিন হাজার ৭২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এই অর্থের মধ্যে গেল জুন মাসে অর্থ বিভাগ ভর্তুকির মাত্র এক হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ছাড় করেছে। এখন বাকি দুই হাজার ২৭৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা দ্রুত ছাড় করার জন্য বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) পক্ষ থেকে অর্থ বিভাগকে অনুরোধ করা হয়েছে। সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘এই টাকার বিপরীতে ব্যাংকের সুদ গুনতে হচ্ছে। এই অর্থের বিপরীতে দৈনিক সুদ ৫৬ লাখ টাকা এবং মাসিক সুদ ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা যুক্ত হয়ে ভর্তুকির পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।’ তাই দ্রুত অর্থ ছাড় না করলে সুদের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, সম্প্রতি অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব বরাবর ভর্তুকির এই অর্থ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন সংস্থার চেয়ারম্যান শাহ মো: ইমদাদুল হক। চিঠিতে সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২১) আমদানিকৃত ইউরিয়া সারের বিপরীতে ‘ট্রেড-গ্যাপ’ বাবদ অর্থ বিভাগ কর্তৃক প্রদেয় অর্থের অবশিষ্টাংশ ছাড় করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। চলতি অর্থবছরে সার খাতে ভর্তুকি রাখা হয়েছে ১৬ হাজার কোটি টাকা।
বিসিআইসি ও অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চিঠিতে বিসিআইসি চেয়ারম্যান বলেন, প্রত্যেক অর্থবছর সরকার তথা কৃষি মন্ত্রণালয়ের চাহিদা বিবেচনায় বিসিআইসি ইউরিয়া সার নিজস্ব কারখানায় উৎপাদন এবং অবশিষ্ট পরিমাণ সার ‘কাফকো’ থেকে ক্রয় এবং জি-টু-জি-র আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে থাকে। এ ধারাবাহিকতায় গত ২০২১-২২ অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২১) সংস্থা কর্তৃক প্রায় ৭ লাখ ৭৯ হাজার ১৭ টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হয় এবং এর বিপরীতে ‘ট্রেড-গ্যাপ’ বাবদ বিসিআইসির দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭২৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
সূত্র জানায়, বিসিআইসির মোট দাবিকৃত অর্থের বিপরীতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মনিটরিং সেল মৌখিকভাবে কয়েকটি কারণ দেখিয়ে প্রায় ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা কর্তন করে। কর্তনের পর দাবিকৃত অবশিষ্ট ৩ হাজার ৭২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার মধ্যে চলতি বছরের ৫ জুন অর্থ বিভাগ কর্তৃক ১ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়। সে হিসাবে বর্তমানে সংস্থার প্রাপ্য বা দাবিকৃত অর্থের পরিমাণ হচ্ছে ২ হাজার ২৭৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এর সঙ্গে ব্যাংকের সুদ বাবদ ৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা যুক্ত হয়ে দাবির পরিমাণ এখন দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।
বিসিআইসি কর্তৃপক্ষ বলেছেন, নিরবচ্ছিন্নভাবে ইউরিয়া সার আমদানির লক্ষ্যে প্রতি বছরই বিসিআইসি বরাবর অর্থ বিভাগ থেকে রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বাণিজ্যিক ব্যাংকের অনুকূলে কাউন্টার গ্যারান্টি ইস্যু করা হয়। এর বিপরীতে ব্যাংকগুলো ৬ মাস মেয়াদে এলএটিআর ঋণ সৃষ্টির মাধ্যমে সারের মূল্য পরিশোধ করে থাকে। বর্তমানে সুদসহ বিসিআইসির এলএটিআর দায় রয়েছে ৭ হাজার ৯৯৩ কোটি ১০ লাখ টাকা।
চিঠিতে বিসিআইসি বলেছে, বর্তমানে ঋণপত্র (এলসি) স্থাপনকারী রাষ্ট্রায়ত্ত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো এলএটিআর ঋণের ওপর ৯ শতাংশ হারে সুদ ধার্য করেছে। সে হিসাবে সংস্থার দাবিকৃত ২ হাজার ২৭৭ কোটি ৬৯ লাখ টাকার বিপরীতে দৈনিক সুদ ৫৬ লাখ টাকা এবং মাসিক সুদ ১৬ কোটি ৮৫ লাখ টাকা যুক্ত হয়ে ভর্তুকি খাতে প্রতিনিয়ত সরকারের ব্যয় বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমতাবস্থায় অর্থ বিভাগ কর্তৃক অর্থছাড়ে যত দেরি হবে, ভর্তুকির পরিমাণও সে অনুপাতে বাড়তে থাকবে।
অন্যদিকে প্রতিটি এলএটিআর ঋণ নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। নির্দিষ্ট সময়ে ঋণ পরিশোধ করা না হলে তা শ্রেণিকৃত হয়ে যাবে। কোনো প্রতিষ্ঠানের নামে শ্রেণিকৃত ঋণ থাকলে ও এলএটিআর সীমা অতিক্রম করলে নতুন করে এলসি স্থাপনের ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো অপারগতা প্রকাশ করবে। সে ক্ষেত্রে সার আমদানি প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হবে। এ জন্য ভর্তুকি অর্থ দ্রুত ছাড় করার জন্য চিঠিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
এদিকে, অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত সাতটি অর্থবছর (২০১৫-১৬ থেকে ২০২১-২২) ধরে বিসিআইসি টানা লোকসান দিয়ে আসছে। সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের ১১ মাসে সংস্থাটি ৫৫২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। এর আগে গত ২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাটির লোকসানের পরিমাণ ছিল ৫৪০ কোটি ২৫ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে এই লোকসানের পরিমাণ আরো বেড়ে যেতে পারে বলে জানা গেছে।