অপরাধীদের সুপথে ফেরাতে চালু হচ্ছে বিশেষ প্রকল্প

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : অপরাধে জড়িতদের সুপথে ফেরাতে কক্সবাজারে বিশেষ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে। ওই প্রকল্পের আওতায় মাদকাসক্তদের চিকিৎসা করে মাদকের পথ থেকে সরিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কমিয়ে আনতেই সরকারি উদ্যোগে এমন প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ করছের্ যাব। পরীক্ষামূলকভাবে কক্সবাজার জেলায় প্রথম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করার কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।

রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারর্ যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানর্ যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আরিফ মহিউদ্দীন আহমেদ।

তিনি বলেন, ওই প্রকল্পের আওতায় অপরাধ বা মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়াদের সুপথে ফিরিয়ে আনতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সুপথে আসাদের জন্য যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থার পরিকল্পনা চলছে। সারাদেশেই এমন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজ থেকে এ ধরনের অপরাধ কমে যাবে। দেশের উন্নয়নের ধারা আরও গতিশীল হবে। র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, সম্প্রতি ঢাকায় আশঙ্কাজনক হারে ছিনতাই বেড়েছে। অতি সম্প্রতি ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হতে হয়েছে চারজনকে। সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তুলনামূলকভাবে কিশোর ও তরুণরাই বেশি মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তারা মাদকের টাকা জোগাড় করতেই ছিনতাইয়ের মতো অপরাধের পথ বেছে নিচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, মাদক, অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধের্ যাব সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকেই সকাল ৭টা পর্যন্তর্ যাব ছিনতাইপ্রবণ এলাকাগুলোয় কৌশলী অভিযান পরিচালনা করছে। পাশাপাশি চেকপোস্ট বসিয়ে তলস্নাশি কার্যক্রম চালাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার থেকে রোববার পর্যন্ত টানা ৯ ঘণ্টা অভিযান চালায়র্ যাব-৩ এর একাধিক দল। অভিযানে শাহজাহানপুর, মতিঝিল, মুগদা ও তেজগাঁও থেকে অজ্ঞানপার্টি, মলমপার্টি ও ছিনতাইকারী দলের ৩৭ জন গ্রেপ্তার হয়। তাদের কাছে অজ্ঞান ও ছিনতাই করার কাজে ব্যবহৃত মলম ও দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে।

গ্রেপ্তাররা হচ্ছে- মিজানুর রহমান (২১), সোহেল (২০), মাসুদ রানা (২১), সাব্বির (২২), আবু বকর সিদ্দিক (২২), শাকিল (২০), নাঈম মোলস্না (২০), সালমান (২৬), জালাল হোসেন (২১), শাওন (২২), শহিদুল ইসলাম (৪০), রফিক (৩৩), আজিজুর (৩৬), সৈকত মন্ডল (১৯), আরিফ গাজী (২৬), জনি (১৮), রুবেল (২৮), আফজল (১৮), দ্বীন ইসলাম (২৩), তুহিন (১৮), রবিউল আউয়াল হৃদয় (২২), আরমান (২২), সানোয়ার হোসেন (৩১), মোহাম্মদ রুবেল (৩৪), সোহেল (৩৫), শান্ত (২৫), আজাদ (৩৫), আকাশ (২২), আপন মিয়া (২০), নাজমুল হোসেন (২৮), মাসুম মিয়া (২৮), শান্ত (২০), সোহেল মাতব্বর (২৩), হৃদয় (১৯), সোহরাব (১৯), ইয়াছিন ব্যাপারী (২২) ও এক কিশোর।

র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গত ৬ আগস্ট চালানো আরেক অভিযানের্ যাব-৩ ২৫ জন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। গ্রেপ্তারদের কাছ থেকে নানা তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের দেওয়া তথ্যমতে, গ্রেপ্তারদের অধিকাংশই খুবই অল্প শিক্ষিত। নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তান। তাদের প্রায় শতভাগই মাদকাসক্ত। মাদকের টাকা জোগাড় করতেই তারা ছিনতাই করে। যদিও তারা গাঁজা ও ড্যান্ডির (জুতা মেরামত কাজে ব্যবহৃত বিশেষ ধরনের আঠা) মতো সস্তা মাদক ব্যবহার করে। বাড়তি টাকা দিয়ে তারা মাদক সেবন করার পর দলবেঁধে ঘুরে এবং ধূমপান বা চা কফি পান করে আনন্দ করত। যেটি তাদের খুব ভালো লাগত।

র‌্যাব কর্মকর্তা বলছেন, ছিনতাইকারীর কবলে পড়াদের অধিকাংশই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা চান না। যা অপরাধীদের অপরাধ করার প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ছিনতাইকারীদের মূল টার্গেট বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লঞ্চ টার্মিনাল ও রিকশায় চলাচলকারীরা। সম্প্রতি রাজধানীর পাড়া মহলস্নার অন্ধকার অলিগলি ও রাস্তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা বেশি ঘটছে। কারণ এসব জায়গায় পর্যাপ্ত আলো থাকছে না। সেই সুযোগটিকেই ছিনতাইকারীরা কাজে লাগাচ্ছে। তারা সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত ছিনতাই করে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি ছিনতাই স্পট হিসেবে খিলগাঁও, মালিবাগ রেল গেট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালভার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং, পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা থেকে ভোররাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি ছিল।

দৈনিক যায়যায়দিনের এক প্রশ্নের জবাবের্ যাব-৩ অধিনায়ক বলেন, পারিবারিক শিক্ষা একটি বড় বিষয়। গ্রেপ্তারদের মধ্যে অনেককেই পাওয়া গেছে, যাদের পিতা আগে ছিনতাই করতেন। বয়স বাড়ার কারণে ছিনতাই পেশা ছেড়ে দিয়েছেন। তার ছেলে ছিনতাই করছে, ছেলের এ ধরনের কর্মকান্ডে জড়িত হওয়ার কারণে ওই পিতার কোনো অনুশোচনা নেই। তিনি জানান, গ্রেপ্তারদের অধিকাংশই একেবারেই কম শিক্ষিত। গ্রেপ্তার হচ্ছে, জামিনে বেরিয়ে আবারও একই অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। যার প্রধান কারণ মাদক।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক বলেন, এজন্য আগে সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করতে হবে। পাশাপাশি মাদকাসক্তদের মাদকের পথ থেকে সরিয়ে আনতে। শিক্ষাতাদের যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। ইতোমধ্যে সরকারের সহায়তায়র্ যাবের তরফ থেকে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষামূলকভাবে কক্সবাজারে এ ধরনের একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কাজ চলছে।

অপরাধীদের সুপথে ফেরাতে চালু হচ্ছে বিশেষ প্রকল্পকক্সবাজার
Comments (0)
Add Comment