বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : স্বাধীনতাযুদ্ধের বিরোধিতাকারী সংগঠন রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনী ও তাদের সদস্যদের তালিকা তৈরির বিধান রেখে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিল-২০২২’ সংসদে পাস হয়েছে। সোমবার সংসদের বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি উত্থাপণ করেন। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।
এর আগে বিলের ওপর বিরোধী সদস্যদের দেওয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নিষ্পত্তি করা হয়। বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠক শুরু হয়।
৫ জুন বিলটি সংসদে উত্থাপণ করেন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক। পরে বিলটি পরীক্ষার জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। বিলে বলা হয়েছে, ‘একাত্তরের ২৬ মার্চ হইতে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসাবে কর্মকাণ্ড চালিয়েছেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসাবে কাজে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসাবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন বা খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধ করেছেন অথবা একক বা যৌথ বা দলীয় সিদ্ধান্তক্রমে প্রত্যক্ষভাবে, সক্রিয়ভাবে বা পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন তাদের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের নিকট সুপারিশ পাঠাবে এই কাউন্সিল।’
বিলে বলা আছে, কাউন্সিলের সদস্য সংখ্যা ১২ জন করা হয়েছে। আগের আইনে ৯ জন ছিল। কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা হবেন প্রধানমন্ত্রী। কাউন্সিলের আটজন সদস্য প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবেন, যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কর্মকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হবে।
উপদেষ্টা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ফোর্স কমান্ডার, সাব সেক্টর কমান্ডার অথবা কমান্ডারসমূহের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, এই বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবও এই পরিষদে থাকবেন। কাউন্সিল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের নিবন্ধন প্রদান, সাময়িকভাবে স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে। ২০১৯ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে ২০২০ সালে একটি উপ-কমিটি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটি প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করবে। পরে খসড়া আইনটি মন্ত্রিসভায় যাওয়ার পর তারা সিদ্ধান্ত পাল্টায়। গত এপ্রিল মাসে আগের কমিটি ভেঙে নতুন করে উপ-কমিটি পুনর্গঠন করা হয়।
বিলটির ওপর আলোচনায় জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও একটি পূর্ণাঙ্গ মুক্তিযোদ্ধার তালিকা তৈরি করা যায়নি। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি তারাও এখন মুক্তিযোদ্ধা। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে, ২ হাজার মুক্তিযোদ্ধার বয়স ৫০ বছর। স্বাধীনতারও ৫০ বছর তাদের বয়সও ৫০ বছর সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা করা উচিত।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, দেশে কি কোনো সরকার আছে? আইন আছে? একজন মন্ত্রী বলেছেন, “খেলা হবে। খেলা শুরু হয়ে গেছে।” সারা দেশে বিএনপির সভা সমাবেশে হামলা মামলা, ভাঙচুর চলছে। এটা কি মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের মধ্যে পড়ে? বিএনপির নেতা তরিকুল ইসলামের বাসায় টানা তিন দিন হামলা হয়েছে। রাষ্ট্রকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে?
গুমের বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে হারুনুর রশীদ বলেন, মানুষকে গুম করা হয়েছে। আর সরকার বলছে, নিখোঁজ। এভাবে চলতে পারে না, জোর যার মুল্লুক তার। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শে দেশ চালাতে হলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। পরে সংশোধনী প্রস্তাবের আলোচনায় হারুন বলেন, পনেরো আগস্টের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিচার হলে যারা গুম, খুন, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন তারা কি আইনের আশ্রয় লাভের সুযোগ পাবে না?