বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ-ভারত অংশীদারিত্বের প্রতীক বাঘেরহাটের রামপালে নির্মাণাধীন মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী অক্টোবর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে চালু হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় গ্রিডে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের অব্যাহত সহযোগিতার ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টিতে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র অসামান্য অবদান রাখবে। ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুইটি সর্বমোট ১৩২০ মেগাওয়াটের কয়লা চালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ সফলভাবে গত ১৫ আগস্ট জাতীয় গ্রিডের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইউনিট-১ এর কাজ শেষ হওয়া এবং সফল সমন্বয়ের পরে আরও সমন্বয় সম্পর্কিত কার্যক্রম হাতে নেওয়া হচ্ছে। এরপরে ইউনিট-১ বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
সূত্র জানায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় তিনি এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ শেষ করার ঘোষণা দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। আগামী ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চারদিনের সফরে দিল্লি যাবেন। ৬ সেপ্টেম্বর তিনি নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।
ওই বৈঠকের পরই মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্ল্যান্টের প্রথম ইউনিটের কাজ সম্পন্নের ঘোষণা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্প্রতি রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সরেজমিন পরিদর্শনকালে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি (প্রা.) লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পান্ডে ইত্তেফাককে বলেন, মেগা পাওয়ার প্ল্যান্টের দুটি ইউনিট চালু হয়ে গেলে মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টটি হবে বাংলাদেশের বৃহত্তম পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর মধ্যে অন্যতম।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটির ইউনিট-২, যা রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নামেও পরিচিত- এটি আগামী বছরের শুরুর দিকে চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রকল্পের বৈশিষ্ট্যগুলোর বিবরণ দিয়ে আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি প্রায় দুইশো কোটি মার্কিন ডলার ব্যয়ে স্থাপন করা হচ্ছে। মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট ভারত সরকারের রেয়াতি অর্থায়ন প্রকল্পের অধীনে নির্মিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) কর্মকর্তারা জানান, ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালস লিমিটেডের (বিএইচইএল) জন্য বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিআইএফপিসিএল) এটি নির্মাণ করছে। বিআইএফপিসিএল হলো-ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) লিমিটেড ও বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যকার একটি ৫০:৫০ উদ্যোগ।
প্রকল্প পরিচালক বলেন, পরিবেশগত প্রভাব কার্যকরভাবে প্রশমিত করতে সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি স্থাপন করা হচ্ছে। ফ্লু গ্যাস নির্গমনের বিস্তৃত বিচ্ছুরণের জন্য বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু চিমনি (২৭৫ মিটার) রয়েছে। কয়লার জন্য একটি অগ্রিম জাহাজ আন-লোডার নির্মাণের পাশাপাশি একটি সম্পূর্ণ আচ্ছাদিত কয়লা স্টক ইয়ার্ড, কম ছাই ও সালফার সামগ্রী সহ উচ্চ গ্রেডের আমদানি করা কয়লা ব্যবহারসহ অন্যান্য ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রকল্পের পরিচালক আরও বলেন, গত ৬ এপ্রিল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ৪০০ কেভি জিআইএস সুইচইয়ার্ড ও আন্তঃসংযোগকারী ট্রান্সফরমারটি সক্রিয় করা হয়। তারপর থেকে এটি পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বাংলাদেশের ২৩০ কেভি গ্রিড সিস্টেমে ৪০০ কেভি বিদ্যুতের হুইলিং সুবিধা প্রদান করছে। যাতে বাংলাদেশের পাওয়ার গ্রিড করপোরেশন সর্বোচ্চ চাহিদা মেটাতে খুলনা অঞ্চলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে সক্ষম হয়।
ভারতের আর্থিক ঋণের আওতায় (এলওসি) খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পও এখন শেষ পর্যায়ে। এই প্রকল্পের ৯৬ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্প ঘিরে দেশে এই প্রথম রূপসা নদীর ওপর অত্যাধুনিক রেল সেতু নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয়েছে। মূল নদীর ওপর ৭১৬ মিটার ব্রিজসহ দুই পাশে প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার ভায়াডাক্ট (উড়াল রেলপথ) নির্মাণকাজ ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশটির দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ইরকন ইন্টারন্যাশনাল ও লার্সেন অ্যান্ড টোওব্রো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে দেশের পুরো রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে মোংলা বন্দর। বাকি কাজ শেষে ডিসেম্বরেই উদ্বোধন হবে এই রেলপথ। এর মধ্য দিয়ে মোংলা বন্দর থেকে মালামাল রেলপথে বিভিন্ন স্থানে সাশ্রয়ে পরিবহণ করা যাবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে রেলপথ হয়ে উঠবে অনন্য।
লার্সেন অ্যান্ড টোওব্রোর প্রজেক্ট ম্যানেজার অমৃতোষ কুমার ঝা ইত্তেফাককে বলেন, সেতুটি উত্তাল নদীর ওপর নির্মিত হয়েছে। প্রকৌশলগত দিক থেকে এটি একটি অনন্য স্থাপনা। স্টেইনলেস স্টিলের তৈরি এই সুপার স্ট্রাকচারটির জন্য নির্মাণসামগ্রী ভারত থেকে সড়ক, সমুদ্র ও অভ্যন্তরীণ নদীপথে আনা হয়েছে। খুলনা-মোংলা বন্দর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান আরিফ বলেন, প্রকল্পটি খুলনা ফুলতলা রেলওয়ে স্টেশন হয়ে রূপসা নদী অতিক্রম হয়ে বাগেরহাট জেলার কাটাখালী ভাগা, চুলকাটি দ্বিগরাজ হয়ে মোংলা বন্দর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে।