শেখ হাসিনার সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আরও গতি আনবে

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও বাংলাদেশে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সফর।

বাংলাদেশ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী। আমাদের দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সহযোগিতা বিগত এক দশকে অনেক জোরদার হয়েছে।

দুই দেশের নেতাদের বিভিন্ন সময়ে পারস্পরিক সফর বিনিময়ের মাধ্যমে এই সহযোগিতায় নতুন গতির সঞ্চার হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদির সঙ্গে এবারের বৈঠক দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আরও গতি আনবে।

তিনি রোববার টেলিফোনে যুগান্তরের সঙ্গে আলাপকালে এই অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের পদ থেকে অবসরে যাওয়ার পর শ্রিংলা বর্তমানে জি-২০ সম্মেলনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফর বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটেও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। কোভিড-১৯ মহামারি থেকে পুনরুদ্ধার এবং ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তার প্রশ্ন সামনে এসেছে।

এ পরিস্থিতিতে এই সফর খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনীতি, কানেকটিভিটি, উন্নয়ন প্রভৃতি ক্ষেত্রে সহযোগিতার হতে পারে। বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী হিসাবে যে কোনো সমর্থন ভারত দিতে পারে। বিশেষ করে বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক এবং সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের দৃষ্টিকোণ হলো, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পরও জোরদার সহযোগিতা অব্যাহত রাখা। এই সহযোগিতার ভিত্তি হবে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, লাভালাভ এবং একে অন্যকে সহযোগিতা।

অভিন্ন নদীগুলোর পানিবণ্টন সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ৫০টির বেশি অভিন্ন নদী রয়েছে। এই নদীগুলোর পানিবণ্টন শুধু নয়; নদীগুলোর পানিসম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণসহ অনেক ইস্যুতেই দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা হতে পারে। এক্ষেত্রে সম্প্রতি যৌথ নদী কমিশনের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে অনেক প্রস্তাব এসেছে। বেশকিছু অগ্রগতি হয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে কী হয়, সেটা দেখা যাক।

প্রস্তাবিত কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ অ্যাগ্রিমেন্ট (সিপা) প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা সামনে এগিয়ে নেওয়ার জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। বাংলাদেশ এখন একটা মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হচ্ছে। ফলে সাফটার আওতায় বাংলাদেশ মুক্তবাণিজ্য সুবিধা পাবে না। পরবর্তী পর্যায়ের জন্য ব্যাপকভিত্তিক চুক্তি সিপা। এর সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে।

এই চুক্তির ফলে বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) তিন শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। ভারতেরও অর্থনৈতিক লাভ হবে। বাংলাদেশ হলো ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। সীমান্ত বাণিজ্য বাড়াতে অবকাঠামো উন্নয়ন হবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় উভয় দেশের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা সামনের দিনে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে।

নিরাপত্তা সহযোগিতা সম্পর্কে শ্রিংলা বলেন, নিরাপত্তা সহযোগিতা উভয় দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাস দমনসহ নিরাপত্তার বিভিন্ন সহযোগিতা ভবিষ্যতেও অব্যাহত রাখতে হবে। বিশেষ করে সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কানেকটিভিটি প্রশ্নে শ্রিংলা বলেন, অনেক ধরনের কানেকটিভিটি হয়েছে। সড়ক, বন্দর, পানিপথ, রেলপথ সবদিক দিয়ে কানেকটিভিটি জোরদার আছে। বিশেষ করে আমার নিজের এলাকা দার্জিলিংয়ের সঙ্গে মিতালি এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে যোগাযোগ বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি খুবই আনন্দিত।

প্রধানমন্ত্রীর সফরে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে কী আলোচনা হতে পারে জানতে চাইলে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব বলেন, মিয়ানমার থেকে বাস্তচ্যুত মানুষ নিয়ে সংকট শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, গোটা অঞ্চলের জন্য উদ্বেগের। ভারত ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা দিয়েছে। এই সংকট নিরসনে আমাদের উভয় দেশকে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশ ও মিয়ানমার উভয় দেশের সঙ্গেই ভারতের সীমান্ত রয়েছে। ভারত সাধ্য অনুযায়ী সংকট নিরসনে নিশ্চয়ই চেষ্টা চালিয়ে যাবে।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচনকে সামনে রেখে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠককে কীভাবে দেখছেন জানতে চাইলে হর্ষবর্ধন শ্রিংলা বলেন, বাংলাদেশে ২০২৩ সালে জাতীয় নির্বাচন এবং ভারতে ২০২৪ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গণতন্ত্র হলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। ভোটের স্বাভাবিক চক্র স্বাভাবিক গতিতে চলবে।

শেখ হাসিনার সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে আরও গতি আনবেহর্ষবর্ধন শ্রিংলা
Comments (0)
Add Comment