বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা ও ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই আগামী নির্বাচনের রোডম্যাপ চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। চলতি মাসেই প্রকাশ হতে যাচ্ছে এ রোডম্যাপ। এর আলোকেই আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজের ছক সাজিয়েছে ইসি। যেখানে সেপ্টেম্বর থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত কোন্ মাসে কী কাজ করা হবে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে আউয়াল কমিশনের এই পরিকল্পনায়।
দায়িত্ব গ্রহণের ছয় মাসের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কয়েক দফা সংলাপ করেছে ইসি। এবার চূড়ান্ত করা কর্মপরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে-আইনি কাঠামো পর্যালোচনা ও সংস্কার, নির্বাচন প্রক্রিয়া সময়োপযোগীকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সবার পরামর্শ গ্রহণ। সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও সরবরাহ। বিধিবিধান অনুসরণপূর্বক ভোটকেন্দ্র স্থাপন, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণ।
নির্বাচনে অধিকতর প্রযুক্তির ব্যবহার, দক্ষ নির্বাচনি কর্মকর্তার প্যানেল তৈরি ও প্রশিক্ষণ। ভোটার সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম, পর্যবেক্ষণ সংস্থা নিবন্ধন ও নবায়ন কার্যক্রম ও নির্বাচনি কার্যক্রমে গণমাধ্যমকে আইনি কাঠামোর আওতায় সম্পৃক্তকরণ।
কমিশন সূত্রমতে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো নিবন্ধনের শর্ত ঠিকভাবে পালন করছে কি না তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। এক্ষেত্রে নির্বাচনমুখী করার জন্য একটি বিশেষ চাপ থাকবে দলগুলোর সামনে। পাশাপাশি ২০২৩ সালের জুন মাসে নতুন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করবে ইসি। যেসব শর্ত দিয়ে নিবন্ধন নেয়া হয় তা প্রতিপালন না করলে নিবন্ধন নিয়ে চাপে থাকবে দলগুলো। ফলে সব দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাতে কমিশন কৌশলী হতে পারে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা।
এ ছাড়া বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ফের সংলাপ আয়োজন করার পরিকল্পনাও রয়েছে ইসির। আগামী মাসে নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সংলাপ শুরু হবে। একই মাসে নির্বাচন পরিচালনা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ইসির সংলাপ হবে। সবশেষে নবেম্বর মাসে নারী নেতৃত্বের সঙ্গে সংলাপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। যদিও এরআগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ইসির সংলাপে ইভিএমসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিজস্ব সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। ফলে এবারের সংলাপ কতটা আলোর মুখ দেখবে তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, এবারের নির্বাচনে উচ্চ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে জিআইএস (ভৌগোলিক তথ্য ব্যবস্থা) পদ্ধতিতে ভোটকেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। নির্বাচনী ক্যালেন্ডার, অনলাইনে মনোনয়ন দাখিল ও গ্রহণ, প্রার্থীর তথ্য ব্যবস্থাপনা, পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম।
ভোট গ্রহণ ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ডাটাবেজ তৈরি। কেন্দ্রের তথ্য ব্যবস্থাপনা এবং কেন্দ্র হতে নিরাপদ ও দ্রুত সময়ে নির্বাচনী ফল প্রেরণ সংক্রান্ত সিস্টেমের অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। সফটওয়্যারের মাধ্যমে অডিট ও বিভিন্ন রিপোর্ট প্রস্তুতের ব্যবস্থা। আধুনিকায়ন, কমপ্লেইন্ট ও কমপ্লায়েন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন।
এ ছাড়া ভোটার সংখ্যা, জনশুমারি ও ভৌগোলিক অবস্থানের ভিত্তিতে জিআইএস পদ্ধতিতে সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত ডাটাবেজ ও অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার প্রণয়ন। এক্ষেত্রে আগামী জানুয়ারিতে আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করা হবে। ফেব্রুয়ারিতে জিআইএস সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে ইসি। মার্চে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রস্তুত করা হবে।
এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিভিন্ন সংস্থা বা বিভাগের সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তাদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। নির্বাচনের আগে আগে ভোটারদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত করতে ব্যাপক প্রচারাভিযানের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে সংস্কৃতিকর্মী, সুশীল সমাজ, ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকে সঙ্গে নিয়ে মাসব্যাপী প্রচার কাজ চালাবে কমিশন।
ইসি সূত্র জানান, সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে নির্বাচনী এলাকা পুনর্নির্ধারণের জন্য আগের নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি নতুন নীতিমালা প্রস্তুত করা হবে। ওই বছরের (২০২৩) মার্চে নীতিমালার আলোকে বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় ৩০০ আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে খসড়া প্রস্তুত করা হবে এবং ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনী আইন প্রণয়নের ব্যবস্থা করা। এ ছাড়া একই বছরের আগস্টে খসড়া ভোটকেন্দ্রের তালিকার ওপর দাবি-আপত্তি নিষ্পত্তি করা হবে।
ইভিএম নিয়ে এতে বলা হয়েছে, এতে পেপার ট্রেইল দেয়ার সুযোগ নেই। কেউ চ্যালেঞ্জ করলে ইভিএম লগ থেকে সহজেই জানা যাবে কে কখন কোথায় ভোট দিয়েছে। সর্বোচ্চ ১৫০টি আসনেই ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। যন্ত্রটি মেট্রোপলিটন ও জেলা সদর আসনগুলোয় ব্যবহার করা হতে পারে। আর রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে জেলা প্রশাসকদের পাশাপাশি ইসির নিজস্ব কর্মকর্তাদেরও নিয়োগ দেয়া হবে। এ ছাড়া বেশকিছু আইন এরই মধ্যে সংশোধনের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। আরও কিছু যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এসব বিষয়ে বলেন, অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় বিরোধী দলগুলো। নির্বাচন কমিশনও সেটি চায়। সে লক্ষ্যে ভোটার তালিকা আগামী বছরের মার্চে চূড়ান্তভাবে প্রকাশ করা হবে। এ ছাড়া রোডম্যাপ আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্তভাবে অবহিত করতে পারবে নির্বাচন কমিশন।
এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ২০২৪ সালের ৩০ জানুয়ারি সরকারের মেয়াদ শেষ হবে। সেই হিসাবে পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। যদি এটি (নির্বাচন) ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে হয়, তাহলে স্বাভাবিকভাবে নবেম্বরের ১৫ তারিখের মধ্যে শিডিউল দিতে হবে। আর যদি জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হয় তাহলে নবেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে ঘোষণা দিতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনের মাঠে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় মাঠে থাকবে সেনাবাহিনী। গুরুত্ব অনুসারে তারা ঠিক করে নেবে কোথায় কোথায় থাকবে।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম সভা হয়েছে ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি। সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচনের পর সংসদের মেয়াদ হচ্ছে প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর। অর্থাৎ বর্তমান সংসদের মেয়াদ শেষ হবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারি। সংসদের সাধারণ নির্বাচন করতে হয় মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে। তাই ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছে কাজী হাবিবুল আউয়াল নেতৃত্বাধীন কমিশন।