বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এক বছরে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা পেয়েছেন প্রায় সোয়া লাখ মানুষ। একই সময়ে মামলা না করেই বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে প্রায় ৩২ কোটি টাকা আদায়ও করে দেওয়া হয়েছে ক্ষতিগ্রস্তদের। জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার (লিগ্যাল এইড) এক প্রতিবেদনে এমন তথ্যই তুলে ধরা হয়েছে। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোয় পাঠানো হয়েছে। জানা গেছে, সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগ, দেশের সব নিম্ন আদালত, শ্রম আদালতে অসচ্ছল জনগোষ্ঠীকে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বা ক্ষুদ্র জাতিসত্তার লোকদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতে আইনি সহায়তা পাওয়ার অধিকার নীতিমালায় নিশ্চিত করা হয়েছে।
জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্যতম স্বপ্ন ছিল সবার জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার ও সুবিচার নিশ্চিত করা। সে লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার ২০০০ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান আইন প্রণয়ন করে। এ আইনের আওতায় জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করা হয়। তবে ২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এলে থমকে যায় এ কার্যক্রম। আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে আবার এ কার্যক্রম শুরু হয়। সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে এই সেবা পৌঁছে দিতে সরকার কাজ করছে বলেও জানান মন্ত্রী। সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে সংস্থার ৬৪টি জেলা কার্যালয়, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড অফিস, দুটি শ্রমিক সহায়তা সেল এবং জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের মাধ্যমে ১ লাখ ২২ হাজার ৬৮৭ জন সুবিধাভোগী সরকারি খরচে আইনগত সহায়তা গ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ৬৪ জেলা লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের মাধ্যমে ৯০ হাজার ৮৩০ জন, সুপ্রিম কোর্ট লিগ্যাল এইড কার্যালয়ের মাধ্যমে ১ হাজার ৯৯৫ জন, কল সেন্টারের মাধ্যমে ২৬ হাজার ৩২৩ জন এবং ঢাকা ও চট্টগ্রামে দুটি শ্রমিক সহায়তা সেলের মাধ্যমে ৩ হাজার ৫৩৯ জন সরকারি খরচে আইনি সহায়তা নিয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৬৪ জেলা কার্যালয় ও দুটি শ্রমিক সহায়তা সেলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (এডিআর) মাধ্যমে ৩৬ হাজার ৬৩৫ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে। এডিআরের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের আদায় করে দেওয়া হয়েছে ৩১ কোটি ৯৮ লাখ ৬৮ হাজার ৪৫৪ টাকা। এ ছাড়া ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর ৩০ জুন পর্যন্ত ৭ লাখ ৬৮ হাজার ৩০৩ জনকে লিগ্যাল এইড সেবা দেওয়া হয়েছে বলে সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০০০ সালে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন ও নানাবিধ আর্থসামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ জনগণকে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দিতে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০’ করা হয়। ওই আইন অনুসারে ২০০১ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা গঠন করা হয়। তবে জনবল ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর অভাবসহ নানা কারণে সূচনাকাল থেকে ২০০৯ সালের আগ পর্যন্ত সংস্থাটির কার্যক্রম ছিল স্থবির। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার জন্য আলাদা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সংস্থাটি ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি প্রতিটি জেলা আদালতে সংস্থার কার্যালয় স্থাপন ও স্থানীয় কমিটি গঠন করা হয়। সে সময় থেকে আইনগত সেবা নেওয়ার হার বাড়তে শুরু করে। এখন দেশের ৬৪ জেলায় স্থায়ী লিগ্যাল এইড কার্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। প্রতি বছর ২৮ এপ্রিল জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস পালিত হচ্ছে।