বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নিজেদের ইমেজ তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এ জন্য সংসদের দুই উপনির্বাচন, সারা দেশের জেলা পরিষদ ও বিভিন্ন স্থানীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সাংবিধানিক এ সংস্থাটি। আগামী ১৭ অক্টোবরের জেলা পরিষদ ও ১২ অক্টোবর গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যাতে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন, সেই বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলকে কঠোর বার্তাও দিয়েছে ইসি।
এদিকে সংসদ ভোটের আগের নির্বাচনী মাঠের পরিস্থিতি জানতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের কাল ঢাকায় ডেকে পাঠিয়েছে ইসি। সকাল ১০টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে নির্বাচন কমিশন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, সব ধরনের নির্বাচন পরিচালনায় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টতা ও সম্পৃক্ততা রয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়াও সামনে জেলা পরিষদ এবং সিটি করপোরেশন নির্বাচন আছে, তাই সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে কমিশন মাঠের রিপোর্ট বুঝতে চায়। জেলা পর্যায়ে যারা দায়িত্ব পালন করছেন তাদের চ্যালেঞ্জগুলো জানতে চায়। এ কারণে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনসহ সব ধরনের নির্বাচন দক্ষতার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু, অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের সঙ্গে মতবিনিময়, সমন্বয় সাধন ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে দিক-নির্দেশনা প্রদান করাই হবে এই আলোচনার উদ্দেশ্য। এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনা করতে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে সেগুলো উত্তরণের পথ বের করতে মতবিনিময় করবে কমিশন। আমি মনে করি শেষ সময়ে তড়িঘড়ি করে অনেক সমস্যার সমাধান করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। আমরা চাই নির্বাচনে সবাইকে সমান সুযোগ দিতে এবং আস্থার পরিবেশ তৈরি করতে। তাই আমরা যদি সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একটু আগে থেকে সব স্তরে কাজ শুরু করি এবং নজরদারি রাখতে পারি তাহলে নির্বাচন পরিচালনায় সাফল্য নিশ্চিত হবে। অন্যদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে আরচণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। যদিও নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর গতকাল বলেছেন, কমিশন আচরণবিধি লঙ্ঘন মেনে নিতে রাজি নয়। কেউ ভাঙলে প্রশাসন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। প্রশাসন ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হলে, নির্বাচন কর্মকর্তাদের যে আইন রয়েছে আমরা তা প্রয়োগ করতে পিছপা হব না। জেলা পরিষদ ও গাইবান্ধা-৫ আসনের উপনির্বাচনে সংসদ সদস্যসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা যাতে আচরণবিধি না ভঙ্গ করেন, সেজন্য দলের নেতাদের কাছে বার্তা দেওয়া হয়েছে। এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকার তো দেশ চালায়। তারা আরও মানতে বাধ্য। আমরা যেটা বলব সেটা তো তারা সাংবিধানিকভাবে মানতে বাধ্য। আইন প্রণেতারাই তো আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন, তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই তো বললাম, আমরা ডিসি ও এসপিদের বলেছি লঙ্ঘনকারী যেই হোন না কেন, তার বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেবেন। গাইবান্ধা জেলা পরিষদ নির্বাচনে সরকারদলীয় নেতারা নিজ নির্বাচনী এলাকায় রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন- জাতীয় পার্টির এমন অভিযোগের বিষয়ে মো. আলমগীর বলেন, আমরা এরই মধ্যে ডিসি, এসপিকে তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেব। ‘আমরা কড়া নির্দেশ দিয়েছি, সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাদের বলতে হবে, আপনি নির্বাচনী এলাকায় থাকতে পারবেন না। কেননা, সংসদ সদস্যরা তো জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার নন। ভোটার হিসেবে তাদের সেখানে থাকারও কোনো সুযোগ নেই।’
জাপার অভিযোগ : জেলা পরিষদ নির্বাচনে অচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে জাতীয় পার্টি। গতকাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তারা নানা অভিযোগ দেন। সাক্ষাৎ শেষে জাতীয় পার্টি (জাপা) মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাংবাদিকদের বলেন, গাইবান্ধা জেলা পরিষদে অনেক এমপি তাদের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা করছেন। নির্বাচনকাজে বাধা দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের লোকেরা আমাদের প্রার্থীদের গাড়ি ভাঙচুর করেছে। চুন্নু আরও বলেন, প্রার্থীদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তারা বলছে, জোড় করে ভোট নিয়ে নেবেন। যারা জাতীয় এজেন্ট হবে তাদের এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না।
ডিসি-এসপিকে ইসির নির্দেশনা : সারা দেশের ৬০ জেলার জেলা পরিষদ নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ করতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে গতকাল বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। নিদেশনায় বলা হয়েছে- সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, এমপি ও সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না। এ ছাড়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে নির্বাচকম লীর তালিকাভুক্ত হতে কেউ পোলিং এজেন্ট নিযুক্ত হতে পারবে না। ইসি জনসংযোগ পরিচালক আসাদুজ্জামান আরজু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- বিভিন্ন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।