দ্রব্যমূল্য ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ায় তা মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে যা যা করণীয় তা করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নতুন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সময়ে সার্বিকভাবে সকল ক্ষেত্রে অপচয় রোধের বার্তা দেন তিনি। আর দেশবাসীকে সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন সরকার প্রধান।

মঙ্গলবার চলতি অর্থবছরের পঞ্চম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে এসব নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। একনেক পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনা তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান এমপি।

প্রধানমন্ত্রী মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিন্তিত বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী। তাই সার্বিকভাবে মূল্য কমানোর নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। আরও কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ফলে কিছু ক্ষেত্রে করহ্রাস করা। কিংবা পণ্য মজুদ করলে অভিযান পরিচালনা করার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী। নীতিগতভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হবে বলেও জানান এমএ মান্নান।

বিশ্ব খাদ্য সংস্থার পূর্বাভাস অনুযায়ী বিশ্বে সামনে খাদ্য সঙ্কটের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয় একনেকে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় কৃষিতে আরও বেশি জোর দেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কৃষিতে ভর্তুকি বৃদ্ধি, সার ও বীজ সরবরাহ এবং পণ্য বাজারজাতকরণ বাড়ানোর কথা বলেছেন সরকার প্রধান। পাশাপাশি আবারও কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর প্রতি জোর দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কোন জমি খালি রাখা যাবে না। গুদামজাতকরণ, বিপণন ও পণ্য চলাচলে নজর দিতে বলেছেন সরকার প্রধান। অন্যদিকে অপচয় রোধ করার ক্ষেত্রে যেখানে তিনটির জায়গায় একটি সিঙ্গারা খেলে হবে সেখানে একটিই খাব বলেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখন খাতির বাদ দিয়ে শক্ত অবস্থানে থেকে প্রকল্প গ্রহণের কথা বলেছেন। আইনের ভিতর থেকে কোন্ প্রকল্প থেকে কেমন ফল আসবে তা ভাল করে যাচাই করে দেখতে বলেছেন। রিটার্ন না দেখলে বা কম থাকলে সেসব প্রকল্প বাদ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকল্প বাস্তবায়নের হার মনিটরিং করতেও জোর দিয়েছেন সরকার প্রধান। এ সময় প্রকল্প বাস্তবায়নে দেরি মানেই লস বলেও মন্তব্য করেন পরিকল্পনামন্ত্রী। প্রকল্পের নির্দেশনাকে সরকার প্রধানের পক্ষ থেকে আজকের প্রধান নির্দেশনা বলেও আখ্যা দেন মন্ত্রী।

বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একনেক সভায় বিশদ আলোচনা হয়। এ সময় পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশবাসীকে সকল পর্যায়ে সঞ্চয়ের মানসিকতা তৈরির আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। বিদ্যুৎ,পানি, চাল বা টাকা যে কোন উপায়ে সঞ্চয়ী হতে জোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি। এ সময় উদাহরণ হিসেবে একটি প্রকল্পের বিষয় তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, খান খননের একটি প্রকল্পে আরও বেশি বরাদ্দ দেয়ার আবদার করা হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী বাড়তি টাকা দিতে চাননি। বরং দ্রুত কাজ শেষ করার মাধ্যমে ব্যয় হ্রাসের পরামর্শ দেন সরকার প্রধান। এটিকে একটি কড়া বার্তা হিসেবে মনে করছেন মন্ত্রী।

এদিকে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ঘোনাপাড়া সড়ক উন্নয়নের একটি প্রকল্পের আলোচনায় গাছ কাটা নিয়ে মর্মাহত হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে সরকার প্রধান নিজেও ছোট সময়ে গাছ লাগিয়েছিলেন। তবে সড়ক প্রশস্ত করতে সেসব গাছ এখন কাটতে হবে। খাল খননের আরেক প্রকল্পের আলোচনায় শান্তিনগরসহ ঢাকার বেশকিছু খালের স্মৃতিচারণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এদিকে সরকারের কৃচ্ছ্রতা কর্মসূচীতে জোরালো ভূমিকা রাখায় আবারও পরিকল্পনা কমিশনের সকলকে ধন্যবাদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। উল্লেখ্য, একনেক সভায় ৭ হাজার ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। একই সময় একটি প্রকল্প স্থগিত করা হয়েছে। তা ছাড়া আরও ৪টি প্রকল্প একনেক সভায় অবহিত করার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল।

প্রধানমন্ত্রী
Comments (0)
Add Comment