রাশিয়া টুয়েন্টি ফোর (রশিয়া) : কেমন চলছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজ? আলেক্সি লিখাচেভ : ঠিক এক বছর আগে, প্রথম পাওযার ইউনিটে রিয়্যাক্টর প্রেসার ভেসেল স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়। সাইটে এসে আমি ব্যক্তিগতভাবে নিশ্চিত হয়েছি যে গত এক বছরে কি পরিমান কাজ হয়েছে। রসাটম বাংলাদেশের প্রথম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে তার সমস্ত বাধ্যবাধকতা পূরণ করে যাচ্ছে।
প্রথম ব্লকে পুরোদমে কাজ এগিয়ে চলছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে টারবাইন হলে ওভারহেড ক্রেন স্থাপন করা হয় এবং এপ্রিল মাসে স্থাপিত হয় জেনারেটর স্টেটর। এছাডাও এপ্রিল মাসে, নির্ধারিত সময়ের ৮ মাস আগে, রিয়্যাক্টর বিল্ডিংয়ের নির্মাণে মূল কংক্রিটের কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব হয়েছে, যার মধ্যে থাকছে প্রথম পাওয়ার ইউনিটের প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়াগুলো নিয়ন্ত্রন ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় ডিভাইস। জুন মাসে, ইনার কন্টেনমেন্ট ডোমের কংক্রিটিং-এর কাজ সম্পন্ন হয়।
দ্বিতীয় পাওয়ার ইউনিটে, ফেব্রুয়ারী মাসের শেষে প্রধান সঞ্চালন পাইপলাইনের ঢালাই সম্পন্ন করা হয়। এপ্রিলের শেষে, আমরা ইঞ্জিন রুমে টারবাইন ইউনিটের ভিত্তির কংক্রিট-এর কাজ শেষ করেছি। জুন মাসে, ইমারজেন্সি কোর কুলিং সিস্টেমের ইনস্টলেশন সম্পন্ন হয় এবং ইনার কন্টেনমেন্টের ধাতব কাঠামো ইনস্টল করা হয়।
চারটি কুলিং টাওয়ারের নির্মাণে কাজ সক্রিয়ভাবে এগিয়ে চলছে। আগামী বছর যাতে পারমাণবিক জ্বালানির প্রথম ব্যাচ আনা যায় তার জন্য সাইটে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
একই সাথে, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে যে সকল বাংলাদেশী কাজ করবেন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষন চালিয়ে যাচ্ছি। সাইটে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। এখানে বিশেষজ্ঞদের দ্বিতীয় বা চুড়ান্ত ধাপে প্রশিক্ষন প্রদান করা হবে। প্রথম ধাপে বিশেষজ্ঞদের রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের রেফারেন্স প্রকল্প রাশিয়ার নভোভোরোনেঝ এনপিপি-তে প্রশিক্ষন প্রদান করা হচ্ছে।
২. রাশিয়া টুয়েন্টি ফোর (রশিয়া) : পারমাণবিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাথে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার কোন পরিকল্পনা আছে কি? বাংলাদেশের দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প নির্মাণ বা অন্যান্য প্রকল্প নিয়ে কোন আলোচনা চলছে কি?
আলেক্সি লিখাচেভ : রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ শেষ হওয়ার পরেও, আমাদেও পারস্পরিক সহযোগিতা শেষ হয়ে যাবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির অপারেশন চলাকালীনও আমাদের সহযোগিতা অব্যহত থাকবে এবং আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্রেটির জন্য প্রয়োজনীয় পারমাণবিক জ্বালানী সরবরাহ করে যাবে। বাংলাদেশ সরকার যদি দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তখন রূপপুর এনপিপি নির্মাণের সময় আমাদের অর্জিত অভিজ্ঞতা খুবই কাজে আসবে। এছাড়াও, বাংলাদেশ একটি গবেষণা চুল্লি নির্মাণের বিষয়ে গুরুত সহকারে বিবেচানা করছে। বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রাশিয়ার ডিজাইন করা একটি গবেষণা চুল্লির ভিত্তিতে একটি নিউক্লিয়ার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি সেন্টার নির্মাণের প্রস্তাব পেশ করেছি।
৩.সময় টিভি (বাংলাদেশ): এখন পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে চলছে। কিন্তু, পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কি কোণও ভাবে ভবিষ্যতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিতে পারে? আপনি কি মনে করেন?
আলেক্সি লিখাচেভঃ করোনা মহামারীর কারনে সৃষ্ট জটিলতা সত্ত্বেও, প্রকল্প নির্মাণ কাজ যাতে নির্ধারিত শিডিউল অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারে তার জন্য সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালিয়েছি। অবশ্যই আমরা বুঝতে পারছি যে, পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং লিজিস্টিক্স অবস্থা সামান্য ঝুঁকি হয়তো সৃষ্টি করতে পারে, কিন্তু এগুলো মোকাবিলায় আমরা সদা সচেষ্ট।
৪. সময় টিভি (বাংলাদেশ)ঃ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার মতো কোন জ্ঞান বা অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের নেই। অতএব স্বাভাবিক ভাবেই এমন একটি জল্পনা-কল্পনা রয়েছে যে কবে নাগাদ আমরা এই প্রকল্পটি নিজেরাই কারো সাহায্য ছাড়া পরিচালনা করতে সক্ষম হবো। আপনার মতে প্রকল্পটি চালু হবার পর এটির পরিচালনার দায়িত্ব নিজের কাধে তুলে নিতে বাংলাদেশী বিশেষজ্ঞদের কতো সময় লাগতে পারে?
আলেক্সি লিখাচেভঃ পূর্বে পারমাণবিক শক্তি ব্যবহার করার অভিজ্ঞতা নেই এমন অনেক দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে আমাদের। আমরা অবশ্যই জানি যে, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হস্তান্তর করার পর এর নিরাপদ কার্যক্রম নিশ্চিত করা কতোটা গুরুত্বপূর্ণ, এবং একই সঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত এমপ্লয়ীদের পেশাদারিত্বের ওপরে এটি কতোটা নির্ভরশীল।
অতএব, নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষরের সময় রসাটমের সহায়তায় মূল বিশেষজ্ঞদের তৈরির ব্যাপারটি বিবেচনায় নেয়া হয়। জেনারেল কন্ট্রাক্ট অনুসারে অপারেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে এমন ১,১১৯ জন মূল বিশেষজ্ঞ তৈরি করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং রিজার্ভ হিসেবে আরো ৩০৫ জনও তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছি আমরা। দুই ধাপে বিশেষজ্ঞ তৈরির কাজ এগিয়ে চলছেঃ প্রথম ধাপে রূপপুর প্রকল্পের রেফারেন্স প্রকল্প রাশিয়ার নভোভারোনেঝ এনপিপিতে এবং দ্বিতীয় ধাপে রূপপুর সাইটের সাইন্টিফিক ট্রেনিং সেন্টারে, যা আজকে আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করলাম।
২০১৮ সাল থেকে অদ্যবধি ৬৬০ জনের অধিক বাংলাদেশীকে প্রশিক্ষনের আওতায় আনা হয়েছে। রাশিয়ায় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি লাভ করেছেন ২৪০ জন যারা প্রথম ইউনিটের পরিচালনার কাজে যুক্ত থাকবেন। সম্পূর্ণ প্রস্তুতি লাভ করেছেন প্রায় ৩০০ জন, এবং প্রায় ১৩০ জন এখনো প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছেন।
নির্মান কাজ চলাকালীন আমরা সাইন্টিফিক ট্রেনিং সেন্টার চালু করেছি যাতে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বপূর্ণ ইন্সটলেশনের কাজে যুক্ত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন, যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত রয়েছে কমিশনিং, পারমাণবিক জ্বালানীর সরবরাহ এবং ফিজিক্যাল স্টার্ট-আপ।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হবার পর আরো ৩-৪ বছর আমরা বাংলাদেশী সহকর্মীদের সর্বোচ্চ সহাযোগিতা প্রদান করে যাব যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়। আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলতে পারি এই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জনে সমর্থ হবেন। যেকোন অবস্থাতেই আমরা এই প্রকল্পটিকে অসহায় অবস্থায় ফেলে দেবো না।