পাবনা প্রতিনিধি : পাবনা সদরের মালিগাছা ইউনিয়নের মালিগাছা মজিদপুর গোরস্থানে করোনা আক্রান্ত এক ব্যক্তিকে সরকারি বিধিবিধান মেনে দাফন সম্পন্ন করার পরও গোরস্থান কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা ওই গোরস্থানে কবর জিয়ারত এবং মসজিদে ঈদের নামাজ বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ আশপাশ গ্রামের সহস্রাধিক নানা শ্রেণির মানুষ।
মরণঘাতি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এলজিইডি’র ঢাকাস্থ প্রধান কার্যালয়ের হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা কাজী আলতাফ হোসেন ফিরোজ (৫৬) ঈদের আগেরদিন সন্ধ্যা ৬ টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার মিরপুর-১২ এর বেসরকারি রিজেন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঈদের দিন ভোরে কাজী আলতাফ হোসেনকে আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের তত্বাবধানে সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে পুলিশের উপস্থিতিতে দাফন করা হয় পাবনা সদর উপজেলার মালিগাছা ইউনিয়নের মালিগাছা-মজিদপুর গোরস্থানে। তিনি মালিগাছা গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন।
এদিকে কাজী আলতাফ হোসেন ফিরোজকে দাফনের পরপরই মসজিদের মাইকে প্রচার করে দেয়া হয় করোনা আক্রান্ত রোগীকে দাফনের কারণে সংক্রমণ রোধে এই গোরস্থানে কবর জিয়ারত বন্ধ ও ওই মসজিদে ঈদের নামাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। ঈদের সকালে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মধ্যে দেখা দেয় বিভ্রান্তি। মানুষ নামাজের জন্য দ্বিগি¦দিক ছুটাছুটি শুরু করে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, টানা এক মাস রোজা করার পর একজন ব্যক্তির জন্য ঈদের জামাত ওয়াজিব। বর্তমানে করোনা দূর্যোগপূর্ণ সময়ে সরকারের বেঁধে দেওয়া সিদ্ধান্তেই আমরা মসজিদে সামাজিক ও শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে নামাজের প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের নামাজ পড়তেও দেয়া হয়নি। তাদের অভিযোগ, বছরে অন্তত দুটি বার প্রাণ ভরে মৃত ব্যক্তিদের জন্য কবর জিয়ারত আর দোয়া করা হয়। কিন্তু মসজিদ ও গোরস্থান কমিটি সেটিও আমাদের করতে দিল না।
মালিগাছা গ্রামের বাসিন্দা, পাবনার ঈশ্বরদী সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আব্দুল বাতেন বলেন, কোভিড-১৯ এর নির্দেশনাবলীতে করোনা আক্রান্ত রোগীকে কবরস্থ করা যাবে না এমন কোন বিধি নেই। আর সরকারি বিধি মেনেই বিশেষ টিম এই দাফন সম্পন্ন করেছেন। সেখানে করোনা সংক্রমণের কোন প্রশ্নই আসে না। অথচ অতি উৎসাহী হয়ে একটি মহল ঈদের নামাজ ও কবর জিয়ারত বন্ধ করে দিয়েছে। যা কোন ভাবেই মেনে নেয়ার নয়।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ একাধিকবার মুঠোফোনে মালিগাছা মজিদপুর গোরস্থান পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. তরিকুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, মৃত ব্যক্তির শরীরে করোনা ভাইরাস অবস্থান করে না। তারপরও প্রায় সাড়ে ১১ ঘন্টা পর বিশেষ ব্যবস্থাপনায় মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা হয়েছে। সেহেতু করোনা সংক্রমণের কোন ধরণের সুযোগ নেই।
মসজিদে ঈদের নামাজ ও কবর স্থান জিয়ারত বন্ধের ব্যাপারে তিনি বলেন, লকডাউন কেবল মাত্র প্রশাসন করে থাকে। স্থানীয় জনগন বা মসজিদ কমিটির এখতিয়ার নেই। এ ধরণের ঘটনা ঘটলে তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।