প্রাথমিকের পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে ছুটির আমেজ!

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি!

পাবনা প্রতিনিধি : ‘বছরে তিনটি ঐচ্ছিক ছুটি আছে। সেগুলো কাজে লাগাতে সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির পাশাপাশি ঐচ্ছিক ছুটি যোগ করা হয়েছে। আরও দেড় মাস থাকলেও একটি ছুটি কাটানো যাবে না এমন আক্ষেপের কথা জানালেন পাবনা পিটিআই সুপার ও পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের প্রধান ফরিদ উদ্দিন হায়দার।’

পাবনা পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ে চলছে ছুটির আমেজ। শিক্ষক ও ইন্সট্রাক্টররা ছুটির বিষয়ে জানলেও জানেন না ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও অভিভাকেরা। রোববার সকালে অভিভাবকেরা স্কুলে সন্তান নিয়ে এসে তালা ঝুলানো দেখে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। এমন ঘটনা মাঝে মধ্যেই ঘটছে ওই প্রতিষ্ঠানে। অভিভাবেকরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একাধিকবার জানালেও কার্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাপ্তাহিক ছুটি শুক্র ও শনিবার বন্ধ থাকার পর রোববার কোমলমতি শিশু ও দ্বিতীয় শ্রেণির শিশুরা স্কুলে আসে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছুটির কোন পূর্ব ঘোষনা দেন নাই বলে অভিযোগ অভিভাবকদের। তারা বলেন, সকাল ৯টা হতে ১১ঃ৩০টা পর্যন্ত শিশু হতে ২য় শ্রেণির ক্লাস চলে। শিক্ষকরা এই সময়ের মধ্যে শিশুদের কোন ছুটির কথা বলেনি। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। শিক্ষকরা তাদের সুবিধার্থে গত অক্টোবর মাসের ২৩ তারিখে রবিবার (সোমবার পুজার ছুটি ছিল) সরকারি ছুটির মাঝে ১দিন দিন ছুটি ভোগ করেন। এবারও ৭ নভেম্বর ফাতেহা ই-ইয়াজদাহম এর আগের দিন রোববার ছুটি দেন। একটানা ৪দিন ছুটি দেওয়ার কোমলমতি শিশুদের অপূরনীয় ক্ষতির সম্মুখিন হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন অভিভাবক জানান, শিক্ষকরা নিজেদের খেয়ালখুশি মত বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করেন। স্কুল চলাকালীন যখন তখন বাইরে চলে যান। নিয়ম শৃংখলার বালাই নেই। এর আগে অভিভাবকেরা নানা অনিয়মের অভিযোগ দিলেও তার কোন পদক্ষেপ নেননি। স্কুলটি দেখার কোন অফিসার নেই। পাশের প্রাইমারী স্কুলগুলো ক্লাস চললেও পিটিআই স্কুল বন্ধ থাকা দুঃখজনক। এমনিতেই করোনার কারনে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার অনেক ক্ষতি হয়েছে। তা পুশিয়ে নেওয়ার বদলে আরো স্কুল ছুটি দিয়ে শিশুদের ক্ষতির দিকে এগিয়ে দেয়া হচ্ছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।

প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক ও ইন্সট্রাক্টর নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, সুপার ফরিদ উদ্দিন হায়দার যে ভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন। তাতে সরকার যে উদ্দেশ্যে এই প্রতিষ্ঠানটি চালু করেছেন সেটি কার্যত সুফল দিতে পারছে না। এটি একটি মডেল প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের নিয়ম শৃংখলা, পাঠদান কৌশল রপ্ত হয়েই অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে। সেখানে এই প্রতিষ্ঠানে অবস্থা তথইবচই হলে বাকিগুলো কি শিক্ষা নেবে। তারা আরও বলেন, করোনা মহামারীর কারনে অনেক প্রতিষ্ঠান যেখানে অতিরিক্ত ক্লাস চেয়ে আবেদন নিবেদন করছে, সেখানে পরীক্ষণ বিদ্যালয়টির এমন দশায় আমরাও মর্মাহত।

পাবনা পিটিআই সুপারিনটেন্ডেন্ট ও পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের প্রধান ফরিদ উদ্দিন হায়দার বলেন, বছরে তিনদিনের ছুটি আমার হাতে ছিল। দুটো ভোগ করা হয়েছে। এখনও একটি রয়েছে। ছুটির নোটিশের বিষয়ে তিনি বলেন, ছুটি সকালেই নোটিশ জারী করা হয়েছে। হয়তো দুপুরে দিয়েছে। তবুও শিক্ষকদের ক্লাসে ছুটির বিষয়ে বলে দেয়া হয়েছিল। হয়তো তারা তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেননি। প্রতিষ্ঠানটির নিয়ম শৃংখলার বিষয়ে তিনি কোন কথা না বলে প্রতিষ্ঠানের আসার নিমন্ত্রণ জানান।

পাবনা সদর উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও শালগাড়িয়া ক্লাস্টার এবং পরীক্ষণ বিদ্যালয় পরিদর্শক সাঈদা শবনম জানান, স্কুল ছুটি দেয়া হয়েছে, স্কুলে শিক্ষার্থী এসে ফিরে গেছে এমন কোন তথ্য আমাকে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহ করা হয়নি। হয়তো সুপার তার ক্ষমতা বলে এটি করেছেন। এখানে আমার কোন করণীয় নেই।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নিখিল চন্দ্র হালদার বলেন, অভিভাবেকরা আমাকে অভিযোগ করেছেন। যদিও বিষয়টি আমার দপ্তরের মধ্যে নয়। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক ভাবে সরকারি ছুটির সাথে প্রতিষ্ঠান সুপার ঐচ্ছিক ছুটি যুক্ত করতে পারেন না। এই ছুটি ভোগ করতে হলে তাকে আরও জেনে বুঝে সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত ছিল বলে আমি মনে করি।

সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষার রাজশাহী বিভাগীয় উপপরিচালক (ডিডি) রায়হান উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বছরে তিন দিনের ছুটি এক সাথে নতুবা আলাদা আলাদা ভোগ করতে পারেন। সুপার আমার সাথে আলাপ করেই ছুটি দিয়েছেন। শিক্ষার্থী ও অভিভাবক ফিরে যাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, অভিভাবকেরা সচেতন, তবে খারাপ দিকগুলোকে তারা বেশি বড় করে দেখেন। একটু হলেই মিডিয়া নির্ভর হতে হয়। সকালের নোটিশ দুপুরে দেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, অভিযোগটি গুরুতর। সেটি সুপারের কাছে জানতে চাইবো এটা কেন তিনি করেছেন।

পাবনা পিটিআই
Comments (0)
Add Comment