বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : যৌথ অর্থায়নে বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাল্টিলেন রোড টানেল নির্মাণ কাজের সার্বিক অগ্রগতি ৯৩ ভাগ ছাড়িয়েছে। আর মাত্র ৭ ভাগ কাজ অবশিষ্ট রয়েছে যা দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার আশা করা হচ্ছে। ১০ নভেম্বর বিকেলে টানেল নির্মাণের ব্যাপারে এসব তথ্য দেন ওই প্রকল্পের পিডি প্রকৌশলী হারুনুর রশিদ চৌধুরী। এদিকে গত ৭ নভেম্বর সকালে প্রধানমন্ত্রী দেশের ১০০টি সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ডিসেম্বরের শেষদিকে নির্মিত টানেলের একটি টিউব খুলে দেয়ার চিন্তা-ভাবনার কথা জানিয়েছেন।
২০০৮ সালে চট্টগ্রামের লালদীঘির ময়দানে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের মধ্যদিয়ে দক্ষিণ চট্টগ্রামসহ দেশের উন্নয়নের যে আকাঙ্খার কথা বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তা চলতি ডিসেম্বরের মধ্যেই আলোর মুখ দেখছে। কর্ণফুলী নদীর তলদেশে মাল্টিলেন রোড টানেল প্রত্যাশিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এতে প্রকল্প সহায়তা পাঁচ হাজার ৯০০ কোটি ১৯ লাখ টাকা এবং সরকারের রয়েছে চার হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা বলে জানা গেছে।
আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম প্রান্তে জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে ৩৮৩ একর। যৌথভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সেতু ও সড়ক বিভাগ (BBA) ও চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (CCC) ২.৪৫ কিলোমিটার ও দুই প্রান্তের তীরসহ টানেলের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩.৪ কিলোমিটার আর নদীর পূর্ব ও পশ্চিম উভয় পাশের সংযোগ সড়কসহ এই প্রকল্পের সর্বমোট দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৯.৩৩ কিলোমিটার। আর প্রতিটি টিউবের ভিতরের অংশে প্রশস্ত হচ্ছে ১০.৮ মিটার করে।
আনোয়ারা প্রান্তে ৭০০ মিটারের একটি উড়াল সড়ক বা ফ্লাইওভারসহ ৫.৪৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে চার লেন সড়ক নির্মিত হয়েছে যা আনোয়ারা চাতুরী চৌমুহনীতে এসে চট্টগ্রাম আনোয়ারা বাঁশখালী পিএবি সড়কের সাথে মিলিত হয়েছে অপর প্রান্তে .৫৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক মিলিত হয়েছে নগরীর পতেঙ্গা নেভাল একাডেমি পয়েন্ট দিয়ে মূল সড়কের সাথে।
জানা গেছে, ২০০৮ সালে লালদীঘির ওই জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির পর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পরপরই শুরু হয়েছিল নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণের সম্ভাব্য সমীক্ষাসহ সব ধরনের প্রস্তুতি। ওই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ পেতে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ২০১৭ সালের ৬ নভেম্বর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি কার্যত সম্পন্ন হয় এবং একই বছরের ৫ ডিসেম্বর থেকে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়ন বা সম্পাদনের সময় ধরা হয়েছে পাঁচ বছর অর্থাৎ ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বহুল প্রত্যাশিত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণ প্রকল্পের মূল কাজ দু’টি টিউব খনন সম্পন্নসহ টানেল প্রকল্প অগ্রগতি গতকাল পর্যন্ত অগ্রগতি ছাড়িয়েছে গত অক্টোবর পর্যন্ত ৯৩ ভাগ। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন প্রকল্পের পরিচালক হারুন অর রশিদ চৌধুরী। তিনি জানান, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প কাজের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার প্রত্যাশা করেন।
গতকাল তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, প্রকল্প কাজ শুরু হওয়ার পর থেকে বৈশ্বিক মহামারী করোনার প্রকোপের কারণে প্রায় দুই বছর ধরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ করতে হয়েছে এ কারণে সময় প্রচুর লেগেছে তারপরও প্রত্যাশিতভাবে প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে। এবং প্রকল্প কাজ সম্পন্ন’র মেয়াদ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হওয়ার প্রত্যাশা করছেন তিনি।
এদিকে টানেলের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে টানেলের দুই প্রান্তের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হচ্ছে অত্যাধুনিক স্ক্যানার মেশিন। বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ দৈনিক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, নির্মাণাধীন প্রকল্পে স্ক্যানার স্থাপনের বিষয়টি না থাকলেও সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় এনে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বিশ্বের প্রথম বলে জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে মেগাপ্রকল্প ঘিরে পাল্টে যাচ্ছে চট্টগ্রাম অঞ্চল। হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে কক্সবাজার ও কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে গভীর সমুদ্রবন্দর, কোল পাওয়ার প্লান, বিশালাকারের শিল্পজোন, গড়ে উঠছে পর্যটন শিল্পসহ নানা বৃহৎ প্রকল্প। এ মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নের সাথে সাথে যানবাহনের চাপ সামলাতে (ট্রাফিক ভলিউমের ওপর নির্ভর করে) বাস্তবায়ন করা হবে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের আনোয়ারা ওয়াইজংশন থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মহাসড়কে ফোর লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প (সম্ভাব্য ব্যয় প্রায় ৭ হাজার ১৭০ কোটি টাকা), ইতোমধ্যে যার ডিপিপি জমা দেয়া হয়েছে। যৌথ অর্থায়নে প্রায় সাড়ে ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চারটি স্থানে ছয় লেনের সেতু নির্মাণ প্রকল্প কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। অপর দিকে মহাসড়কের পাঁচটি স্থানে বাইপাস নির্মাণ প্রকল্প কাজের ডিপিপির তৈরির কাজ চলমান (প্রায় ২৫.১ কিলোমিটার)। এ ছাড়া দিয়ে ৩.৭ মিলিয়ন ইউএস ডলার (সম্ভাব্য ব্যয়) ব্যয়ে পৃথিবীর দীর্ঘতম মেরিনড্রাইভ (প্রায় ১৬৮ কিলোমিটার) প্রকল্প কাজের সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
একইভাবে কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়কের সাথে সঙ্গতি রেখে যানবাহনের চাপ নিয়ন্ত্রণে ভূমি অধিগ্রহণসহ ৪০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে আনোয়ারা ওয়াইজংশন থেকে কালাবিবিরি দীঘি পর্যন্ত ৮.১০ কিলোমিটার সড়ক ৬ লেনে এবং কালাবিবির দীঘি থেকে আনোয়ারা ফায়ার স্টেশন পর্যন্ত ২.৪ কিলেমিটার সড়ককে ৫.৫ মিটার থেকে ৭.৩ মিটারের উন্নীতকরণ কাজ বেশ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।
অপরদিকে বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে বদলে যাচ্ছে চন্দনাইশ গাছবাড়িয়া থেকে আনোয়ারা কালাবিবির দীঘি পর্যন্ত ১৮.৮৭৫ কিলোমিটার মহাসড়কে ৩৪ ফুট প্রশস্তকরণসহ আনোয়ারা সদরে ২.৫০ কিলোমিটারের একটি বাইপাস নির্মাণ ও ২.৯৫ কিলোমিটার সড়ক রিজিড প্যাভমেন্ট নির্মাণ করা হচ্ছে এ জন্য সব মিলে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হয়েছে। অপর দিকে ২৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়া বাদামতলা থেকে আনোয়ারা ওয়াইজংশন পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ককে ৭.৩ মিটার থেকে ১০.৩ মিটারে (৩৪ ফুট) উন্নীতকরণের কাজও চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এই মহাসড়কের চন্দনাইশ বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাতকানিয়া কেরানিহাট পর্যন্ত সড়কে ৩৪ ফুট প্রশস্তকরণের জন্য প্রস্তাবনা প্রেরণ করা হয়েছে আর এর জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১১০ কোটি টাকা। তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে মহাসড়কের এই অংশটি ৩৪ ফুট প্রশস্তে উন্নীতকরণ করা হবে বলে জানা গেছে।