বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া/ ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া/একটি ধানের শিষের উপরে/একটি শিশির বিন্দু….। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার এই পঙক্তিমালার মতোই সারাদেশে মাঠে মাঠে শিশিরভেজা ধানের শীষ সোনামাখা রোদে ঝলমল করছে। ভোরের আলো হেমন্তের কুয়াশা ভেদ করে যখন প্রকৃতিতে আসে, তখনই হেসে ওঠে দিগন্ত বিস্তৃত আমন ধানের খেত। সোনারাঙা ধানের সেই ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ে কিষাণ-কিষাণীর চোখেমুখে। দেশজুড়ে ফসলের মাঠে এখন সোনালি ধানের ঝিলিক। কোথাও কোথাও ধান আংশিক আধাপাকা থাকলেও প্রায় মাঠেই এখন ধান পেকে সোনালি রূপ ধারণ করেছে। গ্রামীণ জনপদে ছড়িয়ে পড়েছে পাকা ধানের মৌ মৌ গন্ধ। উৎসবের আবহে কৃষক ধান কাটছে। ফসলের মাঠে চলছে আমন ধান কাটার উৎসব।
চলতি মৌসুমে নির্ধারিত সময়ে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তবে মৌসুম শেষে অনেক জমিতে আমন রোপণ করা হয়। দেরিতে যে সব জমিতে আমন রোপণ করা হয়েছে, সেগুলোতে যদি সামনের দিনগুলোতে মাঝে মাঝে বৃষ্টি না হয়, তাহলে ফলন ভালো হবে না এমন ভাবনা ছিল কৃষকদের। তবে মৌসুমের শেষের দিকে কয়েক দফা বৃষ্টিপাত ও সবশেষে চিত্রাং ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি মিলিয়ে সব শঙ্কা দূর করে সারাদেশে আমনের ভালো ফলন হয়েছে। সেই সাথে ধানের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষক বেশ খুশি।
অধিদফতরের সরেজমিন উইংয়ের তথ্যমতে, লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৫ লাখ ৫৭ হাজার হেক্টর। দেরিতে হলেও আবাদ হয়েছে ৫৫ লাখ ৮৯ হাজার ৮১২ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এবার ১১ শতাংশ বেশি জমিতে রোপা-আমন আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আমনের উৎপাদন ভালো হয়েছে। এবার আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ১ কোটি ৪৭ লাখ ৫২ হাজার ২২০ টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর এবার লক্ষ্যমাত্রা চেয়ে আমনের উৎপাদন বেশি হওয়ার প্রত্যাশা করছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, এবার ফলন খুব ভালো হয়েছে। ইতোমধ্যেই এক-তৃতীয়ংশ জমির ধানকাটা শেষ হয়েছে। আশা করছি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তারচেয়ে বেশি হবে।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক ইনকিলাবকে বলেন, খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে আমন আবাদে যে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল, তাকে পেছনে ফেলে চলতি মৌসুমে আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রণোদনা ও সময়মত সার দেয়ায় এবং আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও ভালো হয়েছে। আশা করছি, উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রাও শতভাগ অর্জন হবে।
সারাদেশে আমনের ফলন ও কৃষকদের ধান কাটার ব্যস্ততা নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে রিপোর্টটি তৈরি করেছেন বিশেষ সংবাদদাতা রফিক মুহাম্মদ।
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, বরেন্দ্র অঞ্চলের মাঠজুড়ে এখন সোনালি সবুজের খেলা। কৃৃষকের ঘাম ঝরানো আমন পাক ধরে সোনালি রং ধারণ করেছে। মাঠ ভরা ধানের ক্ষেত দেখে কৃষকের দু’চোখে আনন্দের ঝিলিক ছড়িয়ে পড়ে। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ধান কাটা ও মাড়াই। মাঠ আর গেরস্থ বাড়ির খৈলানে খৈলানে ব্যস্ততা। এবার বরেন্দ্র অঞ্চলে (রাজশাহী-নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে) রোপা আমনের আবাদে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ লাখ ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমি। বাস্তবে আবাদ হয়েছে আরো বেশি। আবাদের পরিমাণ ৪ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমি। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়Ñ ১৩ লাখ ১৭ হাজার মেট্রিক টন। আবাদ বেশি হওয়ায় চালের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়বে।
গতকাল মাঠ পর্যায়ে কৃষকের সাথে আলাপ করে জানাযায়, এবার খরচ বেশি হলেও ধানের ফলন ভালো হয়েছে। একবিঘা জমিতে খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ধান পাওয়া যাচ্ছেÑ ২২ থেকে ২৪ মণ। দামও ভালো। প্রতি মণ ধান এখন মাঠে বিক্রি হচ্ছে মোটা জাতের ধান ৩ থেকে সাড়ে ১৩০০ টাকার মধ্যে। আর চিকন ধান পনের থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে।
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, এ অঞ্চলে এখন মাঠে মাঠে চলছে আমন ধানের কাটা মাড়াইয়ের কাজ। গ্রামের পথে পথে শুকানো হচ্ছে আমনের খড়। হাটে বাজারে বিক্রি হচ্ছে নতুন আমন ধান। এ অঞ্চলে ফলন মোটামুটি ভালোই হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। বগুড়ার আঞ্চলিক কৃষি দফতরের রেকর্ড অনুযায়ী ৪ জেলা নিয়ে গঠিত বগুড়া কৃষি অঞ্চলে এবার বগুড়ায় গড়ে হেক্টর প্রতি আমনের ফলন হয়েছে ৩ দশমিক ৩৮ মেট্রিক টন। নবান্নের শুরু থেকেই মাঠে মাঠে আমনের কাটা মাড়াইয়ের কাজ শুরু হয়েছে। যান্ত্রিকতার বিস্তারে গত কয়েক বছর ধরে কামলা কিষাণের পারিশ্রমিক যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হয়েছিল এবার তার কিছুটা নিম্নগামিতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদিকে হাটে বাজারে নতুন ধানের আমদানি খুব কম লক্ষ্য করা গেছে। বড়বড় কয়েক হাটের ব্যবসায়ীদের কাছে যোগাযোগ করে জানা গেছে নতুন আমন ধান কোথাও ১২০০ কোথাও ১৩০০ বা ১৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছে। বড়বড় অটোরাইস মিলের মালিকদের নিয়োজিত ফড়িয়ারা কৃষকদের বাড়িবাড়ি গিয়ে মিনি ট্রাক থামিয়ে ধান কিনে নিচ্ছে। এই কারণেই মূলত হাটে-বাজারে তেমনভাবে নতুন ধানের সরবরাহ আসছে না ।
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, বৃহত্তম চলনবিল সিরাজগঞ্জ বেল্টে ইরি-বোরো আবাদের তুলনায় আমন আবাদ তুলনামূলকভাবে কম হয়ে থাকে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। এরপর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো কাঁচা ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। চার পাঁচ দফায় জমিতে বিষ প্রয়োগ করেও কোনো কাজ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে কৃষকদের। এবার এ অঞ্চলে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭২ হাজার হেক্টর, আবাদ হয়েছে ৭৪ হাজার ৬৭০ হেক্টর জমিতে।
কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, এবারের বর্ষায় তুলনামূলক বৃষ্টি কম হলেও আমন আবাদের উপযোগী আবহাওয়া থাকায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। মাঠজুড়ে সোনালি শীষের অপরূপ দৃশ্য মনে দোল দিয়ে যায়। আমন উৎপাদনে কুমিল্লায় নিরব বিপ্লব ঘটিয়েছেন এখানকার কৃষকরা। আর লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া আমনের ফলনে জেলার কৃষি কর্মকর্তারাও বেশ খুশি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এবছর ১ লাখ ১৫ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আমন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কুমিল্লার আমন চাষিরা জানান, এবারে আমনের বাম্পার ফলনে তারা যতটা খুশি তারচেয়ে বেশি খুশি হবেন যদি সরকারিভাবে ধান ক্রয়ে দর বাড়ানো হয়।
মৌলভীবাজার থেকে এস এম উমেদ আলী জানান, নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে যেন মুখরিত মৌলভীবাজার জেলার চারিপাশ। কেউ ধান কর্তন করছেন। আবার কেউ প্রস্তুতি নিচ্ছেন। চলতি আমন মৌসুমে আনুষ্ঠানিকভাবে খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে একই জমিতে রোপা-আমন ধান রোপণের পর কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে কর্তন শুরু হয়েছে। যন্ত্রের ব্যবহারের ফলে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ায় কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে প্রতি বছর অনাবাদি জমিতে চাষাবাদ বৃদ্ধি ও ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। বাম্পার ফলন হওয়ায় চাষিরা খুশি।
সুনামগঞ্জ থেকে মো. হাসান চৌধুরী জানান, বন্যার ক্ষত কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়েছে সুনামগঞ্জের কৃষক। এবার আমনের বাম্পার ফলন দেখে খুশি হাওর পাড়ের কৃষকরা। সরজমিনে দেখা যায়, আমনের ফলনে কিছুটা স্বস্তিতে সুনামগঞ্জের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এ বছর জেলায় আমন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৮১ হাজার ১০০ হেক্টর। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় ৮২ হাজার ২১৫ হেক্টর জমিতে রোপা-আমনের আবাদ হয়। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, চলতি বছর আমন ধানের ফলন ভালো হলেও এ বছর শুধু সার ব্যতীত জমিতে কীটনাশক, শ্রমিক মজুরি, কৃষি যন্ত্রপাতি মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষকের ধান উৎপাদন খরচ কয়েক গুন বেড়ে গেছে। সেই হারে বাজারে ধানের দাম না পেয়ে অনেকেই হতাশ, তাদের চোখে-মুখে দুচিন্তার ভাঁজ। স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায় ২৯ এবং ২৮ জাতের ধান প্রতি মণ ৮০০ থেকে ৮৫০ টাকায় বিক্রয় হচ্ছে যা কৃষকের উৎপাদন খরচের চেয়ে কম।
দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, বন্যাসহ বড় ধরনের দুর্যোগমুক্ত এলাকা হিসাবে পরিচিত দিনাজপুর অঞ্চলে এবারও আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। মৌসুম শুরুর আগে একটানা খরায় আমন আবাদ নিয়ে চিন্তিত কৃষকের কপালের ভাঁজ কেটে গেছে। সময়মতো আল্লাহর রহমতের বৃষ্টি কৃষকের কপাল খুলে দিয়েছে। গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারের ফলন হয়েছে অতিমাত্রায় ভালো। যা কি-না কৃষকের কল্পনাতেও ছিল না। এবার দিনাজপুরের ১৩ উপজেলায় প্রায় পৌনে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। ফলনও হয়েছে ভালো। বাজারে দামও ভালো। ১১০০ টাকার মোটা ধান বিক্রি হচ্ছে ১২ থেকে ১৩০০ টাকায়।
নেত্রকোণা থেকে এ কে এম আব্দুল্লাহ জানান, জেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে। নেত্রকোণা মূলত খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও ধান উদ্বৃত্ত জেলা। জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, আমন ধানের সোনালি শীষে ভরে গেছে কৃষকের ক্ষেত। বাতাসে দোল খাচ্ছে সোনালি ধানের শীষ। নতুন ধানের মৌ মৌ গন্ধে চারদিক মুখরিত। কৃষাণ-কৃষাণীরা ধান কাটা, মাড়াই, সিদ্ধ দেয়া, শুকানো ও গোলায় তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। ধান কাটা ও মাড়াই কাজে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ততা বেড়েছে দিনমজুরদেরও। নেত্রকোণা সদরের রাজেন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক বাচ্চু মিয়া জানান, আমন ধান কাটার ধুম পড়েছে। এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ায় এবং বাড়িতেই দাম বেশি পাওয়ায় আমরা আনন্দিত। কেন্দুয়া উপজেলার দুল্লী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া জানান, আমি এবার ২০ কাটা জমিতে ধান চাষ করেছি। প্রতি কাঠায় ৫ মণের বেশি করে ফলন পেয়েছি। প্রতি মণ ধান ১২৫০ থেকে ১৩০০ টাকায় বিক্রি করতে পারছি। এতে আমরা খুশি।
কুষ্টিয়া থেকে এস এম আলী আহসান পান্না জানান, জেলার ৬টি উপজেলায় আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ভালো দামে ধান বিক্রি করতে পেরে চাষিরা খুশি। এদিকে কুষ্টিয়ার মাঠে মাঠে কৃষকদের ধান কাটা উৎসব শুরু হয়ে গেছে। অনেক চাষিরা তাদের কাক্সিক্ষত আমন ধান ঘরে তোলা নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে। কাক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চাষিরা তাদের কাক্সিক্ষত মাঠের ধান কাটা ও বিচালী বাধা নিয়ে সময় পার করছে। কুষ্টিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, এ বছরে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮৮ হাজার ৮৯৫ হেক্টর জমি সেখানে আবাদ হয়েছে ৮৮ হাজার ৯১৯ হেক্টর জমি।
নাটোর থেকে মো. আজিজুল হক টুক জানান, এ জেলার বিল অঞ্চলে গেলেই চোখে পড়ে দিগন্ত বিস্তৃত সোনালি আমন ধানের ক্ষেতে কৃষকদের কাস্তে চালানোর দৃশ্য। বছরের এই সময়ের জন্য কৃষকরা অধির আগ্রহে অপেক্ষা করে। এবছরে নাটোরে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। নতুন ধানের নতুন চালের পিঠা পুলির আয়োজন এখন ঘরে ঘরে। তাই নাটোরের জমিগুলোতে আমন ধান কাটতে ব্যাস্ত কৃষকরা। নাটোর জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে জেলায় ৭২,৬৫৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, তবে ৭৩ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে।
নওগাঁ থেকে এমদাদুল হক সুমন জানান, এ জেলা খাদ্যভাণ্ডার হিসাবে পরিচিত। নওগাঁয় চলতি মৌসুমের আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। জেলার অবারিত মাঠজুড়ে চোখ জুড়ানো সোনালি ধানের দোলা। মাঠে মাঠে এখন ধান কাটার ধুম। কাস্তের ক্যাচক্যাচ শব্দ কৃষকের হাঁকডাক আর মজুরের গানের সুমধুর আওয়াজ এক অন্যরকমের আবহ সৃষ্টি করেছে। কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শামসুল ওয়াদুদ জানিয়েছেন এ বছর জেলায় ১ লাখ ৯৭ হাজার ১১০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ হয়েছে। নওগাঁর বাজারে ধান প্রতি মণ ১২০০ টাকা থেকে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
জয়পুরহাট থেকে মশিউর রহমান খান জানান, এবার আমন ধানের ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন জয়পুরহাটের কৃষকরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, জয়পুরহাটের পাঁচটি উপজেলাতেই কৃষকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমন ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এর মধ্যেই জেলার ৬০ শতাংশ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ।
বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা জানান, উপকূলীয় জেলা বরগুনার ১ লাখ ৪ হাজার ২৩১ হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে আমন চাষ হয়েছে ৯৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে। এ বছর আবহাওয়া প্রতিকূলতা না থাকায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে। বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বরগুনায় এ বছর মোট ৯৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে আমন চাষ হয়েছে।
ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ জানান, গফরগাঁও উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে মাঠে মাঠে সোনালি ধানের সমারোহ, বাতাসে দোল খাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন। নতুন আমন ধানের মৌ মৌ ঘ্রাণ। চলছে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ধুম। তবে সর্বত্র কৃষি শ্রমিকের অভাব দেখা দিয়েছে। ফলে ধান কাটতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। অন্যান্য বারের তুলনায় এবার আমন ফলন ভালো হয়েছে ফলে ধানের দাম বেশি হওয়াতে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন ধান উঠলে ও বেচাকেনা খুবই কম। চিকন ধান প্রতি মণ সাড়ে ১৫০০ থেকে ১৫৫০, মোটা ধান প্রতি মণ ১৪৫০ থেকে ১৪৩০ দরে বিক্রি হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিসার নুর মোহাম্মদ জানান, চলতি মৌসুমে আমন আবাদ হয়েছে ২২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর। এতে করে ৭০ হাজার মেট্রিক টন চাল উৎপাদন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ থেকে ফাহাদ হোসেন জানান, এ উপজেলায় চলতি আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। রোপা-আমন চাষের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রাও ছাড়িয়ে গেছে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে ২৬ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে রোপা-আমন চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে অতিরিক্ত আরো ১০ অর্থাৎ ৩৮০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা খোঁজ নিয়ে সেখানকার কৃষকদের সাথে কথা বললে তারা জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সঠিক পরিচর্যা ও রোগবালাই কম হওয়ার চলতি আমন মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে মুহাম্মদ আব্দুল বাছির সরদার জানান, বন্যা পরবর্তী দিরাইয়ে আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে বলে জানা গেছে। এ বছর রফিনগর ইউনিয়ন ছাড়া দিরাই পৌরসভাসহ উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে ২ হাজার ৭২৫ হেক্টরে আমন ধানের চাষ করা হয়।