বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজ নিজ এলাকার উন্নয়নে অবদান রাখার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণে দেশের ভাবমূর্তি যেমন উজ্জ্বল হবে, তেমনি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরো গতিশীলতা পাবে এবং দেশের অর্থনীতিতে এটা আরো বেশি অবদান রাখবে।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল শনিবার সকালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’-এর দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজের সমাপ্তি উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন।
তিনি গণভবন থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা প্রান্তে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। বাসসের খবরে বলা হয়, অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে চলমান উন্নয়নকাজের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কেউ কোনোভাবেই উন্নয়নের গতি থামাতে পারবে না। ’ যারা সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ চোখে দেখে না, তাদের চোখের ডাক্তার দেখানোর পরামর্শ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের উন্নয়ন অনেকের চোখে পড়ে না। তাদের হয়তো চোখ নষ্ট, যদি কারো চোখ নষ্ট হয়, তাহলে চোখের ডাক্তার দেখাতে পারেন। আমরা একটা খুব ভালো আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। সেখানে চোখ পরীক্ষা করালে, আমার মনে হয়, তাহলে হয়তো তারা দেখতে পারবে। আর কেউ যদি চোখ থাকতে অন্ধ হয়, তাহলে আমাদের কিছু করার নাই। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের বিরোধী কিছু লোক আছে, যারা চোখ থাকতে অন্ধ। তারা দেখেও না দেখার ভান করে। তারা নিজেরা কিছু করতে পারে না। ভবিষ্যতেও কিছু করতে পারবে না। দেশকে কিছু দিতেও পারবে না। ’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘হ্যাঁ, ক্ষমতায় বসে নিজেরা খেতে পারবে, অর্থ চোরাচালান করতে পারবে, ওই ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানি করতে পারবে। অস্ত্র চোরাচালানি, অর্থ চোরাচালানি, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ—এগুলো পারবে। মানুষের কল্যাণে কাজ করেনি, ভবিষ্যতেও করতে পারবে না—এটাই হলো বাস্তবতা। ’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে এমন একটা দিন, যেদিন সত্যিই আমি আনন্দিত। কারণ যে কাজ আমরা শুরু করেছিলাম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলে দক্ষিণ টিউবের পূর্তকাজ আজ সম্পন্ন হয়েছে। এই কাজ সম্পন্ন করারই উৎসব আমরা করছি। আর কিছুদিন পর দ্বিতীয় টিউবের কাজও সম্পন্ন হবে এবং পুরো টানেলটাই তখন আমরা উদ্বোধন করব। একটা টিউবের নির্মাণ শেষ হওয়ায় সেটা আমি দেখতে চেয়েছি, আর এটা আমাদের বিরাট অর্জন বলেই আমি মনে করি। ’
চীনের কাছে এই টানেল নির্মাণের ঋণ প্রস্তাবের সেই গল্প জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জানান, প্রস্তাবটা তারা প্রথম দিকে গ্রহণ করতে চায়নি। একটু সমস্যা ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘চীন সফরে গিয়ে আমি খাবার টেবিলে খেতে খেতে চীনের প্রধানমন্ত্রীকে আবারও এই প্রস্তাবটা দিই। তিনি খাওয়ার টেবিলেই রাজি হয়ে যান। আমাদের টিমের সদস্যরা খাবার না খেয়েই বের হয়ে গিয়ে প্রস্তাব প্রস্তুত করেন। পরে চুক্তি স্বাক্ষর হয়। আমি তাঁদের কাছেও কৃতজ্ঞ। ’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের জন্য আনন্দের দিন। কারণ নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করতে পেরেছি। ’ সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম চাল লেনের মহাসড়ককে ছয় লেনের করে দেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণের ফলে চট্টগ্রামের গুরুত্ব আরো বেড়ে যাবে। মহেশখালী মাতারবাড়ীতে বিদ্যুেকন্দ্রসহ ওই এলাকাটা একটি ‘ডিপ সি পোর্টে’ পরিণত হচ্ছে। কক্সবাজার বিমানবন্দরও উন্নত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকায় মেট্রো রেল হওয়ার পর চট্টগ্রামে এখন আমরা সমীক্ষা শুরু করেছি। অনেক এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রামে আমরা করে দিয়েছি। ’
করোনা-পরবর্তী ইউক্রেন যুদ্ধ এবং একে কেন্দ্র করে বিশ্ব মন্দা ও বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকটের যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, তা থেকে বাংলাদেশকে মুক্ত রাখতে প্রতি ইঞ্চি অনাবাদি জমি কাজে লাগানোর মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর এবং জনগণকে সাশ্রয়ী, মিতব্যয়ী ও সঞ্চয়ী হওয়ার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর (কাদের) মতো কর্মঠ লোক খুব কম আছে। তাঁকে দলের সাধারণ সম্পাদক করার পর আমার চাপ অনেক কমে গেছে। তিনি দলের দায়িত্বের পাশাপাশি দেশের সব সড়ক-সেতুর উন্নয়নকাজ দেখেন। সারা দেশে যান। দলের দায়িত্বে এসে তাঁর কাজের গতি আরো বেড়েছে। আসলে দেশপ্রেম আছে বলেই এভাবে কাজ করা সম্ভব। আমি তাঁকে ও সেতু বিভাগের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। ’
চট্টগ্রাম প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহ্মুদ, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এ কে এম এনামুল হক শামীম, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, হুইপ শামসুল হক প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ওপর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল জানুয়ারিতে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এরই মধ্যে টানেলের ৯৪ শতাংশের বেশি কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
টানেলটি চট্টগ্রামের পতেঙ্গার নেভাল একাডেমি প্রান্ত থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড এবং আনোয়ারায় কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার লিমিটেড কারখানার মধ্যে নদীর তলদেশে সংযোগ স্থাপন করছে।