বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকেই প্রাথমিকে চালু হচ্ছে নতুন শিখন পদ্ধতি। কোভিড-১৯ মহামারী পরিস্থিতিতে শিক্ষা খাতে যে ঘাটতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে এ কার্যক্রম শুরু করা হচ্ছে। যেটি সরাসরি ও ভার্চুয়ালি শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। নতুন এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা খেলার ছলে শিখতে পারবে। আর এ লক্ষ্যে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অভিজ্ঞ করে তোলা হচ্ছে। গতকাল বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এ কথা জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহমেদ। রাজধানীর মিরপুরে পিটিআই ভবনে আয়োজিত কোভিড-১৯ স্কুল সেক্টর রেসপন্স (সিএসএসআর) প্রকল্পে শিখন ঘাটতি পূরণে প্রিন্টিং বইয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরিদ আহমেদ বলেন, করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যাপী যে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছিল, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায়ও একই পরিস্থিতি তৈরি হয়। সংশ্লিষ্ট সবার প্রচেষ্টায় শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখার চেষ্টা চালানো হয়। এই প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনলাইনে শিক্ষকদের পাঠদানে অভিজ্ঞতা তৈরি হয়েছে। অভিজ্ঞ শিক্ষকদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে নতুন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। নতুনভাবে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে আরো পারদর্শী করে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, সিএসএসআর প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ভার্চুয়াল কনটেন্ট ও প্রিন্টেড সহায়ক বই শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেবো। প্রথমে সুবিধাবঞ্চিত এলাকার (হাওর-বাওর ও উপকূলীয় অঞ্চল) দেড় লাখ শিক্ষার্থীর মাঝে এসব বই বিতরণ করা হবে। এসব বইয়ের মধ্যে বিভিন্ন খেলা ও আনন্দদায়ক পাঠ যুক্ত করা হয়েছে, যেখানে শিক্ষার্থীরা খেলার ছলে শিখতে পারবে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তেমনভাবে তৈরি করা হয়েছে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে করোনাকালে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা তাদের ঘাটতি পূরণ করতে পারবে বলেও জানান তিনি।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আরো বলেন, প্রতি ১০০ বছরে করোনার মতো ভয়াবহ দুর্যোগ দেখা দেয়। এসব দুর্যোগ ভয়াবহতার পাশাপাশি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্তও করে। এবার করোনার মধ্য দিয়ে আমরা অনলাইনে পাঠদানে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। শিক্ষকদের এমনভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে যেন তারা পরবর্তী সময়ে যেকোনো বিপর্যয় মোকাবেলা করে পাঠদান অব্যাহত রাখতে সক্ষম হন। আমাদের সহায়ক পাঠ্যবইগুলোও সেভাবেই তৈরি করা হচ্ছে।
২০২৩ সাল থেকে প্রাক-প্রাথমিক দুই বছর করা হবে জানিয়ে সচিব বলেন, শিক্ষার্থীদের ওপর বইয়ের বোঝা থাকবে না। আনন্দের সাথে শিখনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের সাথে প্রাক-প্রাথমিক স্তরকে সমন্বয় করতে এ প্রকল্পের কনটেন্টগুলো সহায়ক হবে। শিশুরা স্কুলে এসে খেলার ছলে শিখবে। সেই আলোকেই শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধি কেইকো ইনোই বলেন, এশিয়ার অনেক দেশের থেকে শিক্ষা খাতে বাংলাদেশে অধিক পরিমাণ অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক, যার পরিমাণ ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোভিড পরিস্থিতির ঘাটতি মেটাতে বাংলাদেশে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষায় যে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, তা পূরণ হবে বলে আমি মনে করি।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ইউনিসেফের প্রতিনিধি দীপা শংকর, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) অধ্যাপক ড. প্রবীর কুমার, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পিইডিপি-৪) দীলিপ কুমার বণিক, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (রাজস্ব) সৈয়দ মামুনুল আলম, প্রকল্প পরিচালক ড. নুরুল আমিন। আলোচনা শেষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের হাতে শিখন ঘাটতির বই তুলে দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।