বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের বিমানবন্দর সেবায় আসছে আধুনিক প্রযুক্তি। প্রাথমিকভাবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চালু হচ্ছে ডিজিটাল এয়ারপোর্ট সার্ভিস। বিমান উড্ডয়নের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ভবন নির্মাণে উচ্চতা নির্ধারণ করে থাকে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। ডিজিটাল সেবা চালু হলে এটি অ্যাপসের মাধ্যমে নির্ধারণ হবে। ডিজিটাল এয়ারপোর্ট সার্ভিস এবং ভবনের উচ্চতা নির্ধারণে পৃথক অ্যাপস ইতোমধ্যে প্রস্তুত করেছে বেবিচক। অ্যাপস দুটি যেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেন, সে লক্ষ্যে সময় চাওয়া হচ্ছে। একই দিন পাইলটদের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে চালু হতে যাওয়া শিক্ষাবৃত্তিরও উদ্বোধন করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতে চালু হচ্ছে ডিজিটাল এয়ারপোর্ট সার্ভিস। চালু হতে যাওয়া অ্যাপস ব্যবহারের মাধ্যমে যাত্রীরা সরকারের সব মন্ত্রণালয় ও সংস্থার প্রয়োজনীয় সেবা নিতে পারবেন। এর মাধ্যমে প্রবাসীরাও বিমানবন্দরে করণীয় সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন। মোবাইল অ্যাপসটিতে অত্যাধুনিক দুটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এর একটি অপমেন্টেড রিয়ালিটি (এআর) ইনডোর লোকেশন সার্ভিস। বিমানবন্দরের ভেতরে পরবর্তী কোন দিক দিয়ে কোথায় যেতে হবে তার সব বিবরণ মিলবে। আরেকটি হচ্ছে ভয়েস সুবিধা ব্যবহার করে বাংলা ও ইংরেজিতে মিলবে সুনির্দিষ্ট তথ্য ও নির্দেশনা।
জানা গেছে, বিমানবন্দরের যাত্রী ও প্রবাসীরা সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), স্বাস্থ্য বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ ও এভসেকের সব সেবা পাবেন। মিলবে ফ্লাইটের হালনাগাদ তথ্য, এয়ারলাইন্সের নাম ও যোগাযোগ, বিমানবন্দরে ব্যবহৃত সকল সাইন, বহনের জন্য নিষিদ্ধ জিনিসপত্রের তালিকা, শুল্ক করের তালিকা, লাগেজের নিয়ম, ইমিগ্রেশন বিধিমালা, গন্তব্য এয়ারপোর্টের বিধিমালা, স্বাস্থ্যবিধি, প্রবাসী কল্যাণ নির্দেশিকা ও সুবিধার তথ্য, এয়ারপোর্টে খাবার, নামাজঘর, কেনাকাটা, ওয়াশরুম, মুদ্রা বিনিময়, ট্যাক্সি, বিমানবন্দরের মানচিত্র। যারা বিদেশযাত্রায় নতুন, তাদের জন্য করণীয় বিশেষ নির্দেশনাও থাকছে ওই অ্যাপসে। তা ছাড়া বিমানবন্দরের বাইরে থাকা সুবিধা সহজ ও সঠিক পদ্ধতিতে জানা যাবে। অ্যাপসটি প্রস্তুত করেছে যৌথভাবে প্রাইমটেক সলিউশন লিমিটেড, স্পিনঅপ স্টুডিও অ্যান্ড ইনোভেজিয়ন টেকনোলজিস।
এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম আমাদের সময়কে বলেন, যে কোনো মোবাইল ফোনে এই অ্যাপসটি ডাউনলোড করে সেবা পাওয়া যাবে। ফ্লাইট সম্পর্কিত তথ্য, গন্তব্য, বিমানবন্দরের ডেটাসহ নানা ধরনের সেবা মিলবে এতে।
জানা গেছে, ডিজিটাল এয়ারপোর্ট সার্ভিস নামের অ্যাপসের পাশাপাশি ভবনের ইচ্চতা নির্ধারণে আরেকটি অ্যাপস তৈরি করেছে বেবিচক। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরের অবস্টেকল লিমিটেশন সারফেস (ওএলএস) অন্তর্ভুক্ত এলাকার ভবন নির্মাণে প্রযুক্তির সহযোগিতা নেবে বেবিচক। বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে যে কোনো জায়গায় ভবন বা স্থাপনা নির্মাণে বেবিচক থেকে উচ্চতার ছাড়পত্র নিতে হয়। বেবিচকের এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিভাগ থেকে এটি দেওয়া হয়ে থাকে। রাজউক বা অন্য সংস্থা উচ্চতার ছাড়পত্র চাইলে এভাবে দেওয়া হতো। বিমানবন্দরের ভৌগোলিক স্থানাঙ্কভিত্তিক ভবন/স্থাপনা নির্মাণে উচ্চতার ছাড়পত্র দিতে মোবাইল অ্যাপস ব্যবহারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অনুশাসন দেওয়া হয়েছিল। এর পরিপ্রেক্ষিতে তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের মাধ্যমে উচ্চতার ছাড়পত্র দিতে হাইট ক্লিয়ারেন্স ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অ্যাপস করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রাথমিকভাবে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও তেজগাঁও বিমানবন্দর বিবেচনায় রেখে একটি অ্যাপস প্রস্তুত করা হয়। গত ৩০ জুন থেকে এটি পরীক্ষামূলকভাবে চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর অ্যাপসের মাধমে সাধারণ মানুষ চাহিদা অনুযায়ী প্রাপ্য উচ্চতা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা ও প্রাপ্য উচ্চতার ছাড়পত্র অনলাইনে সংগ্রহ করা যাবে।
অ্যাপস দুটির উদ্বোধনের দিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে চালু হওয়া শিক্ষাবৃত্তির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নেক্সট জেনারেশন অব এভিয়েশন প্রফেশনালস স্কলারশিপ’ (এনজিএপি) শীর্ষক এ বৃত্তি তিনটি ক্যাটাগরিতে প্রদান করা হবে। প্রথমবার ছয় নারী শিক্ষানবিশ বৈমানিক এ বৃত্তির আওতায় আসবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৪ সেপ্টেম্বর-এর অনুমোদন দিয়েছেন। এ স্কলারশিপের আওতায় চলতি বছর শুধু ক্যাটাগরি ১-এর আওতায় শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া হবে। পরবর্তীকালে ধাপে ধাপে বিমান টেকনিশিয়ান ও প্রকৌশলীসহ নতুন প্রজন্মের এভিয়েশন পেশাদার তৈরিতে নারী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দেবে বেবিচক।
সূত্রমতে, ক্যাটাগরি-১ এ সিভিল ফ্লাইংয়ের ক্ষেত্রে মেধাবী শিক্ষানবিশদের মধ্যে তিনজন নারী শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে দেওয়া হবে তিন লাখ টাকা। ক্যাটাগরি-২ এ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশল ক্ষেত্রে শিক্ষানবিশদের মধ্যে দুই নারী শিক্ষার্থীর প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা দেওয়া হবে। আর ক্যাটাগরি ৩-এ উন্নয়ন সুরক্ষাসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত অন্য কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান/ইউনিটের শিক্ষানবিশদের মধ্যে একজন নারাী শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে এক লাখ টাকা।