বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : এতদিন পদ্মা সেতুতে ওজন স্বয়ংক্রিয় পরিমাপের ব্যবস্থা না থাকায় সব ধরনের যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। অথচ পদ্মা সেতুতে ২৭ টনের বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধ।
২৭ টনের বেশি ওজন নিয়ে চলা যানবাহনকে পদ্মা সেতুতে চলতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী জানুয়ারি থেকেই এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হচ্ছে।
নির্ধারিত সীমার বেশি ওজনের যানবাহন নিয়ন্ত্রণে সেতুর জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে বসানো হয়েছে ইলেকট্রিক সেন্সর নিয়ন্ত্রিত ওজন পরিমাপের যন্ত্র ওয়েস্কেল। তিন লেনের ওয়েস্কেলের নির্মাণ শেষে চলছে পরীক্ষামূলক পরিমাপ।
যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণে বসানো হয়েছে মোশন ক্যামেরা। গত সপ্তাহে শেষ হয়েছে সিগন্যাল বাতি, ডিজিটাল ডিসপ্লে, ডিভাইডার সাইন বসানোর কাজও। ডিজিটাল পদ্ধতির এই ওয়েস্কেলে দাঁড়াতে হবে না যানবাহনকে, চলতি পথেই হবে ওজন পরিমাপ।
৬৯২ কোটি টাকা ব্যয়ে ওয়েস্কেলটি বসিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান একপ্রেসওয়ে।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোহাম্মদ ফেরদৌস নিউজবাংলাকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পদ্মা সেতুর টোল আদায় শাখার জাজিরা প্রান্তের ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন জানান, উদ্বোধনের পর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১৫৮ দিনে পদ্মা সেতু থেকে টোল আদায় হয়েছে ৩৩৫ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার ৫০ টাকা।
এই সময়ের মধ্যে পদ্মা সেতু পারাপার হয়েছে ২৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৯টি। প্রতিদিন গড়ে পদ্মা সেতু পারাপার হয়েছে ১৪ হাজার ৭৫৩টি আর টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ১২ লাখ ১৯ হাজার ৭১৫ টাকা।
এতদিন পদ্মা সেতুতে ওজন স্বয়ংক্রিয় পরিমাপের ব্যবস্থা না থাকায় সব ধরনের যানবাহন পারাপার করা হয়েছে। অথচ পদ্মা সেতুতে ২৭ টনের বেশি ওজনের যানবাহন চলাচল নিষেধ।
পদ্মা সেতু পার হতে উভয় প্রান্তে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে আসা প্রতিটি পণ্যবাহী যানবাহনকে ওজন পরিমাপ করতে টোল প্লাজার আগে নির্ধারিত তিনটি আলাদা লেনে আসতে হবে ওয়েস্কেলে। নির্ধারিত ইলেকট্রিক সেন্সর ও সড়কে থাকা ওজন পরিমাপের বিশেষ ডিভাইসের ওপর দিয়ে পার হতে হবে ওয়েস্কেলের বিশেষ লেন।
২৭ টন পর্যন্ত ওজন বহনকারী যানবাহন টোল পরিশোধ করে গ্রিন জোন দিয়ে সরাসরি পার হবে পদ্মা সেতু। আর বেশি ওজন বহনকারী যানবাহন রেড জোন দিয়ে চলে যাবে টোল প্লাজার পাশে নির্মিত স্টকইয়ার্ডে। সেখানে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ওজন কমিয়ে পুনরায় ওয়েস্কেলে ওজন পরিমাপ শেষে গ্রিন জোন দিয়ে পদ্মা সেতু পার হবে ওই যানবাহন।
স্টকইয়ার্ডে নামিয়ে রাখা অতিরিক্ত পণ্য সর্বোচ্চ সাত দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে।
বৃহস্পতিবার পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে গিয়ে দেখা যায়, সেতুর মূল টোল প্লাজার ১০০ মিটার সামনেই প্রস্তুত করা হয়েছে ওয়েস্কেল। বিদেশি প্রকৌশলীরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন ওয়েস্কেলের কার্যক্ষমতা।
দেখা যায়, একটি বালুভর্তি ট্রাক বারবার ওয়েস্কেল অতিক্রম করছে এবং পুনরায় ফিরে আসছে। ওজন বা গতি বেশি হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাইরেন বেজে উঠছে। ডিজিটাল ডিসপ্লেতে প্রদর্শন করছে যানবাহনের প্রকৃত ওজন।
শ্রমিকদের ওয়েস্কেলের লেন পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেও দেখা যায়। কেউ আবার সংযোগ সড়কে নির্ধারিত লেন তৈরির মার্ক করছিলেন। অনেকে এক্সপ্রেসওয়ে থেকে আসা সংযোগ সড়ক পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত।
এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে তৈরি করা সংযোগ সড়কে কাজ করতে থাকা শ্রমিক সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আমরা শেষ পর্যায়ের কাজে নেমেছি। এখানে আমরা রোড মার্কিংয়ের কাজ করছি। এখানকার কাজ মোটামুটি শেষ। কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ চলতেছে। কিছু পেইন্টিংয়ের কাজ শেষ হলেই এখানকার কাজ শেষ।
কিছুটা এগিয়ে ওয়েস্কেলের সামনে কথা হয় আরেক শ্রমিক মো. সোলায়মানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘যন্ত্রটা পুরোপুরি প্রস্তুত। এই স্কেলে সব ট্রাক ও মালামালবাহী যানবাহনের ওজন মাপা হবে। ওজন বেশি হলে পাশের ট্রাক স্ট্যান্ডে পাঠিয়ে দেয়া হবে। মাল কমিয়ে আবার সেতু পার হতে পারবে ওই গাড়ি।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদৌস নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ওয়েস্কেল বসানোর কাজ পুরোপুরি শেষ। জাজিরা ও মাওয়া প্রান্তে সফল পরীক্ষা হয়েছে। বেশি ওজনের যানবাহন পদ্মা সেতু পারাপারের সুযোগ থাকবে না।’