বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিদেশে কর্মী পাঠানোর জন্য সরকারের লক্ষ্য দক্ষ জনবল গড়ে তোলা। নতুন নতুন শ্রমবাজারে পাঠানোর জন্য দক্ষ কর্মীদের বিশেষ ঋণ দিচ্ছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। ঋণ বিতরণ ও বড় পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ১ হাজার কোটি টাকা পাচ্ছে ব্যাংকটি। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তহবিলের প্রথম কিস্তির ২৫০ কোটি টাকা পাবে ব্যাংকটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব জানা গেছে।
বিদেশ যেতে, ফিরে আসার পর এবং প্রবাসীদের আত্মীয়স্বজনকে ঋণ দেওয়ার পাশাপাশি আমানতের ঘাটতি পূরণ, ঋণ-আমানতের অনুপাত কমিয়ে আনতে এই অর্থ বিনিয়োগ করবে রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বড় পরিসরে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের গ্যারান্টির আলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক ১ হাজার কোটি টাকার তহবিল প্রদানে সম্মতি দিয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের চলমান অভিবাসন, পুনর্বাসন ও বঙ্গবন্ধু অভিবাসন বৃহৎ পারিবারিক ঋণ প্রকল্প পরিচালনার জন্যও এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ করবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। তহবিলের প্রথম কিস্তির ২৫০ কোটি টাকা সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে, এমন প্রতিবেদনের ভিত্তিতে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের দেওয়া ১ হাজার কোটি টাকার তহবিলের জন্য ১০ বছরের গ্যারান্টি দেওয়ার পাশাপাশি কিছু শর্ত দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে- ব্যাংকটিকে আরও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করতে হবে। বিদ্যমান পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে গুরুত্ব বিবেচনা করে একটি বড় ব্যবসায়িক পরিকল্পনা প্রণয়ন করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে পাঠাবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, অর্থ পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে একটি চুক্তি সই করতে হবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের। জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. মজিবর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্যাংকটির বিভিন্ন স্কিমে ঋণের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ১ হাজার কোটি টাকার তহবিলের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, প্রয়োজনীয় জনবল ও পরিকাঠামোর অভাবে আমরা সাধারণ মানুষের আমানত গ্রহণ করতে পারি না। তাই আমাদের বর্তমান চাহিদা মেটাতে সরকারের কাছ থেকে তহবিল নেওয়া ছাড়া এখন আর কোনো বিকল্প নেই। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক জেনারেল ব্যাংকিং চালু করার কাজ করছে।প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের এমডি বলেন, তহবিলের প্রয়োজন, বর্তমানে ব্যাংকের কাছে ঋণ বিতরণের জন্য কোনো তহবিল নেই। কারণ অভিবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ঋণের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। যারা বিদেশ থেকে ফেরত এসেছেন এবং বিদেশে অবস্থান করছেন তাদের পরিবারকেও ঋণ দেওয়া হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, প্রতি বছর ৮ থেকে ১০ লাখ কর্মী বিদেশ যান। সাম্প্রতিক সময়ে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের অভিবাসী ঋণ এবং ঋণের চাহিদা বেড়েছে। তথ্যমতে, অভিবাসন ও পুনর্বাসনের জন্য বিদেশি চাকরিপ্রার্থীদের জামানতমুক্ত ঋণ প্রদানের জন্য ২০১১ সালে কার্যক্রম শুরুর পর প্রথম ১০ বছরে ব্যাংকটি ৭৮৪ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ঋণ দিয়েছে ৯০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে ব্যাংকটির ১ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের শুরু থেকে ১০ লাখ ৭ হাজার ৫২৯ অভিবাসী ঋণ নিয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই ঋণ নিয়ে বিদেশে গেছেন। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক বর্তমানে সারা দেশে ১০১টি শাখার মাধ্যমে কার্যক্রম চালায় এবং প্রতিটি উপজেলায় শাখা স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের জনবল ১৬৭ থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ করা হয়েছে। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে বিশ্বব্যাংক প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রবাসী আয়ে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। ২০২১ সালে ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে বাংলাদেশে। নতুন নতুন শ্রমবাজারে দক্ষ জনবল পাঠানোর মাধ্যমে আরও বেশি প্রবাসী আয় বাড়াতে সরকার প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, নভেম্বরে প্রবাসী আয় কিছুটা বেড়েছে। নভেম্বরে প্রবাসীরা বৈধ পথে ১৫৯ কোটি ৪৭ লাখ ডলার দেশে পাঠিয়েছেন। গত বছরের নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় নভেম্বরে প্রবাসী আয় আসা বেড়েছে ২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই ও আগস্টে গড়ে ২০০ কোটি ডলারের বেশি প্রবাসী আয় বৈধ পথে দেশে পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। জুলাইয়ে এসেছিল ২০৯ কোটি ৬৩ লাখ ডলার। আর আগস্টে ২০৩ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। এরপর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে প্রবাসী আয় কমে যায়।