বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশের রাজনীতিবিদদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএস এইড। এসপিএল (স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ) প্রকল্পের আওতায় দেশের সব মহানগর ও ২৪ জেলায় এ কার্যক্রম চলছে।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির ইউনিয়ন, উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ের নেতাদের এ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৪৫০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৬শ যুবক বিভিন্ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মিলিয়ে ৩০ হাজার মানুষ প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছে। সংস্থাটি জানায়, নিজেদের মধ্যে একতা বজায় রেখে, রাজনৈতিক দলগুলো যাতে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে পারে, সেটি এর লক্ষ্য। ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
ইউএস এইডের তথ্য অনুসারে ৭ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প ২০১৭ সালের মার্চে শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এসপিএল প্রকল্পের সিনিয়র ডিরেক্টর আমিনুল এহসান যুগান্তরকে বলেন, ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সি নেতাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে বর্তমানে পদ আছে এবং ১০ বছরের বেশি রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা রয়েছে, এদেরকেই নেওয়া হচ্ছে। প্রতিমাসে ৩ থেকে ৫ দিন চলে এ কার্যক্রম। বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এনে আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বছরে ২ থেকে ৩টি ব্যাচ পরিচালনা করা হয়। প্রতি ব্যাচে ২৫ জন রাজনীতিবিদ অংশ নেন। তিনি বলেন, যে সব বিষয় শেখানো হয়, এরমধ্যে আছে- দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা, বক্তৃতা শেখানো (পাবলিক স্পিকিং) এবং লিডারশিপ ট্রেইনিং। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক নেতার ক্যারিয়ার গঠনে প্রাথমিকভাবে সবকিছু শেখানো হয়। আমিনুল এহসান জানান, যারা প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন এরা স্থানীয় পর্যায়ের প্রকল্পের লোক। কিছু প্রশিক্ষক দেশের বাইরে থেকেও আসছে। আর যারা প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন, এরা ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হচ্ছেন। দলে পদবি পাচ্ছেন, রাজনীতিতে তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকছেন।
ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের দলীয় প্রধান ড্যানা এল ওলডস বলেন, জনগণের কল্যাণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থান জরুরি। দলগুলোর মধ্যে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্র চর্চা নিশ্চিত করতে হবে।
আমরা সে লক্ষ্যে কাজ করছি। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের মাধ্যমে তরুণ উদীয়মান ও নারী রাজনীতিবিদদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর দলের মধ্যে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিসহ বড় দলগুলোর মধ্যে একসঙ্গে মিলেমিশে কাজ করার আগ্রহ তৈরি হয়েছে। আশা করছি, আগামীতে আরও ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, সিলেট বিভাগে এ ধরনের ১০ নেতার সঙ্গে কথা বলেছে যুগান্তর। প্রশিক্ষণ নেওয়া সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. গোলাপ মিয়া বলেন, ২০১৭ সাল থেকে আমি বেশ কয়েকটি প্রশিক্ষণ নিয়েছি। আমাদের উপজেলা থেকে বিএনপির ১০ জনের মতো সরাসরি প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ইউএস এইডের লোকজন প্রশিক্ষণ দেয়। এখানে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে হবে, দলীয় সমন্বয়, গণতন্ত্র চর্চা, ও সম্প্রীতি শেখানো হয়। এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ভেতরে বিরোধ কমে এসেছে।
সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার বাংলাদেশ কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা সর্বদলীয় সম্প্রীতি উদ্যোগের সমন্বয়কারী মো. মেজবাহ উদ্দিন বলেন, আমি ২০১৯ সাল থেকে এ প্রকল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা একটি সংগঠন করেছি।
এর নাম হলো সর্বদলীয় সম্প্রীতির উদ্যোগ। সুনামগঞ্জের ৬টি উপজেলায় ৩০ সদস্যের কমিটি করেছি। এখানে প্রত্যেক উপজেলার আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক সদস্য। আমরা হাওড় রক্ষা বাঁধের তদারকিসহ বিভিন্ন সামাজিক কার্যক্রম করে থাকি।
সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোরশেদ আহমেদ মুকুল বলেন, এই প্রকল্পের সঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির ২ শতাধিক নেতা সম্পৃক্ত। আমরা এখানে প্রশিক্ষণ নেওয়ার কারণে দলের গঠনতন্ত্র ও অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এছাড়া দল কীভাবে পরিচালনা করতে হয়, তা শেখানো হচ্ছে ।
তিনি বলেন, আমি ঢাকাতে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। পরবর্তীতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যসহ সিনিয়র নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ হয়েছে। জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সিলেট মহানগরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রীনা আক্তার বলেন, আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এসপিএল প্রকল্প থেকে ২০১৮ সালে ৪ মাসের একটি ফেলোশিপ নিয়েছি।
এরফলে রাজনীতিতে আমার দক্ষতা বেড়েছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মহিবুর রহমান (মুহিব) যুগান্তরকে বলেন, আমি এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়েছি। প্রশিক্ষণের ফলে রাজনৈতিক নেতৃত্বের উন্নতি হচ্ছে। দাঙ্গা-হাঙ্গামা ছাড়া সমস্যা মোকাবিলা করা যাচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের ফলে রাজনীতিতে আমি ২০ বছর এগিয়েছি।
ইউএস এইডের পলিটিক্যাল অ্যাডভাইজার লুবাইন চৌধুরী মাসুম জানান, ইতোমধ্যে ৫ শতাধিক তরুণকে তারা প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। যারা প্রশিক্ষণ নিয়েছেন, দলের ভেতরে তারা অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকছেন। নেতাকর্মীদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও আমাদের অ্যাডভোকেসি কার্যক্রম চলছে। তারা নিয়মিত আমাদের প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছেন।