বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : মেট্রোরেলের পর এবার টানেলের যুগে প্রবেশের অপেক্ষায় দেশ। জানুয়ারির মধ্যে পুরো কাজ শেষে আগামী ফেব্রুয়ারির শুরুতে খুলে দেওয়া হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম সুরঙ্গ পথ-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। এই মেগা প্রকল্পের পরিচালক প্রকৌশলী হারুন অর রশিদ চৌধুরী গতকাল শনিবার ইনকিলাবকে বলেন, টানেলের কাজ ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। অবকাঠামো নির্মাণ কাজের প্রায় পুরোটাই শেষ তবে এখন চলছে ইলেকট্রো মেকানিক্যাল কাজ। সব কিছু শেষ হওয়ার পর টানেলের প্রত্যেকটি সিস্টেম একসঙ্গে কাজ করছে কি না, সেটি নিশ্চিত হওয়ার পর কাজের সমাপ্তি ঘোষণা করা হবে। আশা করছি জানুয়ারির শেষে অথবা ফেব্রুয়ারির শুরুতে টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া যাবে।
দক্ষিণ এশিয়ার দীর্ঘতম এই সড়ক টানেল চালু হলে নদীর ওপারে আধুনিক নগরী গড়ে উঠবে। চীনের সাংহাই শহরের আদলে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হবে টুইন সিটি। পতেঙ্গা থেকে টানেল হয়ে মাত্র কয়েক মিনিটে যাওয়া যাবে চট্টগ্রামের দক্ষিণে আনোয়ারায়। এতে এই অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। টানেল চালু হওয়ার আগেই নদীর ওই পাড়ে শুরু হয়ে গেছে ব্যাপক নগরায়ন, উন্নয়ন-শিল্পায়ন। তাতে পর্যটন, বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটারের এই টানেলের দুটি (টিউবের) সুড়ঙ্গপথের মধ্যে একটির কনস্ট্রাকশন কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগে। দ্বিতীয়টির কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। সার্বিকভাবে টানেলের প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি কাজ শেষ। কর্ণফুলীর তীরে এই টানেলের পতেঙ্গা ও আনোয়ারা প্রান্তে দুটি করে টোলপ্লাজা নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। উভয় পাশে ১০টি করে টোল বুথ বসানো হয়েছে। উভয় প্রান্ত থেকে যানবাহন টানেলে প্রবেশ করতে পারবে। টানেলের দুটি টিউব পাশাপাশি। একটির সঙ্গে অন্য টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন রয়েছে। এই লেন হয়ে টানেলের দক্ষিণ টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে নগরীতে আসা যাবে এবং উজানের দিকে অর্থাৎ উত্তর টিউব দিয়ে পতেঙ্গার নেভাল একাডেমির দিক থেকে আনোয়ারার দিকে যানবাহন চলাচল করতে পারবে। মূল দুই টিউবের মাঝখানে তিনটি সংযোগ টিউব রাখা হয়েছে। যাতে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এক টিউব থেকে অন্য টিউবে চলে যাওয়া যায়। এর সঙ্গে কয়েকটি সুড়ঙ্গ রাখা হয়েছে, যেকোনো বিপদে সেই সুড়ঙ্গ দিয়ে বের হওয়া যাবে।
নদীর তলের এই মূল পথের দৈর্ঘ্য হচ্ছে ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার। এর বাইরে পতেঙ্গা প্রান্তে ৫৫০ মিটার এবং আনোয়ারা প্রান্তে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এই পথের দৈর্ঘ্য দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৯ কিলোমিটার। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। বাকি ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা দিচ্ছে চীন সরকার। চীনের কমিউনিকেশন ও কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি) টানেল নির্মাণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, প্রকল্পটি বাস্তায়ন করছে সেতু বিভাগ। প্রকল্পের ব্যয় ও মেয়াদ আরও কিছুটা বাড়ছে। নতুন করে ১৬৬ কোটি টাকা বেড়ে টানেলের ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১০ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। পাশাপাশি বাস্তবায়নকাল ছিল ২০১৮-এর নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় এবং নতুন কিছু অবকাঠামো যুক্ত হওয়ায় প্রকল্পের ব্যয় বাড়ছে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং টানেল প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। ২০১৩ সালের সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, টানেল চালু হলে বছরে ৬৩ লাখ গাড়ি চলাচল করতে পারে। সে হিসাবে দিনে চলতে পারে ১৭ হাজার ২৬০টি গাড়ি। ২০২৫ সাল নাগাদ টানেল দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলবে। যার মধ্যে অর্ধেক থাকবে পণ্যবাহী যানবাহন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টানেল চালু হলে কর্ণফুলী নদী পাড়ি দিতে সময় লাগবে মাত্র ৫ থেকে ৬ মিনিট। বেঁচে যাওয়া সময়ে দশের অর্থনীতির গতি বাড়াবে। তা ছাড়া টানেলের সড়ক ধরে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ পর্যন্ত গড়ে উঠবে নতুন শিল্প এলাকা। টেকনাফ থেকে চট্টগ্রামের মীরসরাই পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের প্রকল্পও নেওয়া হয়েছে।