বিশ্বব্যাংক ২৫ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেবে

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বৈশ্বিক সংকটের কারণে চাপে থাকা অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিশ্ব ব্যাংকের কাছে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার বাজেট সহায়তা চায় সরকার। এ লক্ষ্যে সংস্থাটির উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দরকষাকষি করা হচ্ছে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে সংস্থাটি থেকে প্রায় ২৫ কোটি ডলারের ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে।

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চলমান বৈশ্বিক সংকটের মধ্যেও সামষ্টিক অর্থনীতি ভালো থাকা, করোনা মহামারি থেকে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাস্তবমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে বিশ্বব্যাংকের নবনিযুক্ত বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর আবদুলায়ে সেক বলেন, বাংলাদেশ ট্রু গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন। বাংলাদেশ সত্যিই বিশ্ব¦ চ্যাম্পিয়ন। 
তিনি বলেন, চলমান সংকট মোকাবিলা করে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জন, দারিদ্র্য কমিয়ে আনা, নারীর ক্ষমতায়ন, জলবায়ু অভিযোজনসহ বিভিন্ন দিক থেকে বাংলাদেশ ট্রু গ্লোবাল চ্যাম্পিয়ন। পুরো এশিয়ার মধ্যে যেকোন দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনেক ভাল। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের বিভিন্ন সময়োচিত পদক্ষেপেরও প্রশংসা করেন।

ওই সময় অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, বিশ্বব্যাংকের জন্য বাংলাদেশে কাজ করার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাত রয়েছে। সংস্থাটি এ দেশের নদীপথ এবং নদী কেন্দ্রিক অর্থনীতির ওপর কাজ করতে পারে। আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনীতির অন্যতম হাতিয়ার দেশের যুবশক্তি, এই যুবশক্তির জন্য বিশ্বব্যাংক বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে। 
যুবকদের কর্মসংস্থানমুখী বিভিন্ন প্রকল্পে অর্থায়ন করলে দেশের অর্থনীতি আরও দ্রুত সম্প্রসারণ হওয়ার সুযোগ তৈরি হবে। এ কারণে বিশ্ব ব্যাংকের যুব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে এগিয়ে আসা প্রয়োজন। তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতির কঠিন চ্যালেঞ্জের বছরেও বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আকার অনেক বেড়েছে। অতি সম্প্রতি কানাডার অনলাইন প্রকাশনা সংস্থা ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরিসংখ্যানের ভিত্তিতে বিশ্বের ৩৫তম বড় অর্থনীতির দেশ এখন বাংলাদেশ।

তিনি উল্লেখ করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ‘একটি অসাধারণ গল্প’। তিনি কান্ট্রি ডিরেক্টরকে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের অবস্থানকে চোখে পড়ার মতো উপস্থাপন করতে কিছু আইকনিক প্রকল্প গ্রহণের অনুরোধ করেন। এই দ্বিপক্ষীয় সভায় পরিবেশগত পুনরুদ্ধার এবং ঢাকা শহরের চারপাশের নদীগুলোর নাব্যতা নিশ্চিত এবং ঢাকার সৌন্দর্য বৃদ্ধির প্রকল্পে অর্থায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশের ঝুঁকি ও পদক্ষেপ সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়। 
এদিকে, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য ২৫ কোটি ডলার বা বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বাজেট সহায়তা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা শুরু করা হয়েছে। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কয়েকটি বৈঠকও করেছেন। বাজেট সহায়তার এই অর্থ জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাসহ সামাজিক নিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন প্রভৃতি খাতে এই অর্থ খরচ করা হবে। আগামী মার্চ মাস নাগাদ বাজেট সহায়তা বিশ্বব্যাংক বোর্ডের অনুমোদন পেতে পারে। চলতি অর্থবছরেই সহায়তার অর্থ ছাড় হবে। দর-কষাকষি করে ২৫ কোটি ডলার বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ আছে।
শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে চলতি অর্থবছরে ৫০ কোটি ডলারের বাজেটে সহায়তা পাওয়ার আশা করছে সরকার। এর মধ্যে ২৫ কোটি ডলার নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। কোভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর এই পর্যন্ত প্রায় ১০০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা পেয়েছে বাংলাদেশ।

এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে আগামী ৩ বছরে আরও ৬১৫ কোটি ডলারের বেশি পাওয়া যেতে পারে। দেশে গত কয়েক মাসে বৈদেশিক মুদ্রার মজুত (রিজার্ভ) ধারাবাহিকভাবে কমেছে। আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় ডলার বেশি চলে যাচ্ছে। রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়েও সংকট আছে। এ অবস্থায় বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের মতো আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার কাছ থেকে ঋণ পাওয়া গেলে ডলারের ওপর চাপ কমবে। শক্তিশালী হবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। 

বিশ্বব্যাংক
Comments (0)
Add Comment