বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত ছয়টি ভোগ্যপণ্য আমদানিতে কোটা সুবিধা দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কোটা সুবিধায় দেশটি থেকে আমদানি হবে চাল, গম চিনি, আদা, রসুন ও পেঁয়াজ। নিজ দেশে সংকট থাকায় মসুরের ডাল আমদানিতে আপাতত কোটা সুবিধা দিচ্ছে না ভারত। চাল, গম ও চিনির মতো তিনটি পণ্যের আমদানি চাহিদা সংশোধন করে নতুন কোটা নির্ধারণে একটি পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে সরকার। এই তিনটি পণ্যের চাহিদা কমানো হবে।
এছাড়া আগের প্রস্তাবিত চাহিদা অনুযায়ী আমদানি হবে ১ দশমিক ৫ লাখ টন আদা, ১০ হাজার টন রসুন ও ৭ লাখ টন পেঁয়াজ। আগামী দশ দিনের মধ্যে কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর তা প্রস্তাবনা আকারে ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই দিল্লির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে। এরপরই কোটা সুবিধায় ভোগ্যপণ্য আমদানির সুযোগ পাবেন ব্যবসায়ীরা। আশা করা হচ্ছে, আগামী রমজান মাসের আগেই কোটা সুবিধায় পণ্য আসবে ভারত থেকে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
জানা গেছে, চলমান বৈশ্বিক সংকট সামনে রেখে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলো থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানি বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ভারতকে। কারণ ভারত থেকে সবচেয়ে বেশি ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়। সরকারি সংস্থাগুলো বলছে, এ মুহূর্তে দেশে দ্রুত এবং স্বল্প খরচে পণ্য আমদানিতে ভারতের বিকল্প কোন বাজার ব্যবসায়ীদের সামনে নেই।
এজন্য ভারত থেকেই ভোগ্যপণ্য আমদানি সহজ ও নিরাপদ বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। সম্প্রতি দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে ভারতের কাছে ভোগ্যপণ্য আমদানিতে কোটা সুবিধার প্রস্তাব করেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। সেই সময় সাতটি ভোগ্যপণ্যের সম্ভাব্য চাহিদা ও আমদানির একটি খসড়া প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছিল। পরবর্তীতে মসুরের ডাল বাদ দিয়ে কোটা সুবিধায় ছয়টি পণ্য আমদানিতে সঠিক চাহিদা নিরূপণের তাগিদ দেয়া দেয় ভারত।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, গত দশ বছরে দেশটি থেকে ভোগ্যপণ্য আমদানির পরিমাণ ও যাবতীয় তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে এবার আমদানি চাহিদা ঠিক করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ভারত থেকে কোটা সুবিধায় পণ্য আমদানির লক্ষ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ওই বৈঠকেই পুরো বিষয়টি তদারকি ও পণ্যের চাহিদা নিরূপণে পাঁচ সদস্যদের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
জানা গেছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নূর মোহাম্মদ মাহবুবুল হককে প্রধান করে কমিটিতে খাদ্য ও কৃষি মন্ত্রণালয়, ট্যারিফ কমিশন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এই কমিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে। এরপরই সেই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে চাল, গম ও চিনির আমদানি চাহিদার বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয়া হবে ভারতকে।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ জনকণ্ঠকে বলেন, মসুরের ডাল বাদে চাল, গম চিনি, আদা, রসুন ও পেঁয়াজের মতো ছয়টি পণ্য কোটা সুবিধায় ভারত থেকে আমদানি করা হবে। ছয়টি পণ্যে কোটা সুবিধা দিতে ভারত রাজি, এ বিষয়টি ইতোমধ্যে তাদের পক্ষ থেকেই জানানো হয়েছে। এর মধ্যে আদা, রসুন ও পেঁয়াজের ব্যাপারে আমরা আমদানির যে চাহিদা ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছিলাম তা ঠিকই আছে।
তবে চাল, গম ও চিনির বিষয়টি নিয়ে নতুন করে কোটা নির্ধারণ করে দিবে সরকার। এজন্যই একটি কমিটি করা হয়েছে। তিনি জানান, চাল, গম ও চিনি ভারতের পাশাপাশি অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি হয়। এখন বৈশ্বিক সংকট ও ডলারের কারণে আমরা দ্রুত ও স্বল্প খরচে পেতে ভারতের কাছে যাচ্ছি। এজন্য বিগত ১০ বছরের আমদানির তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে।
জানা গেছে, কমিটির সদস্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দেশের ভোগ্যপণ্য উৎপানের তথ্য নিশ্চিত করবেন। এছাড়া আমদানিতে কৃষকদের কোন আর্থিক ঝুঁকি তৈরি হয় কিনা সে বিষয়ে একটি ডিটেইল প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন তিনি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি খাদ্য নিরাপত্তা বাড়ানোর বিষয়টির ওপর জোর দিবেন। এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি আমদানির এলসি সংক্রান্ত তথ্য এবং ডলার সরবরাহের বিষয়টির যাবতীয় তথ্য উপস্থাপন করবেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত সরকারের কাছে কোটা সুবিধার প্রস্তাব দেয়া হবে। এছাড়া ট্যারিফ কমিশন পুরো বিষয়টি সমন্বয় করে একটি সঠিক প্রস্তাবনা তৈরি করবে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি ভারতের দিল্লিতে বাণিজ্যমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে সর্বপ্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ভোগ্যপণ্যের কোটা সুবিধা চাওয়া হয়। সেই সময় বাংলাদেশে রপ্তানির জন্য প্রতি বছর ৪৫ লাখ টন গম, ২০ লাখ টন চাল, ৭ লাখ টন পেঁয়াজ, ১৫ লাখ টন চিনি, ১.২৫ লাখ টন আদা, ৩০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১০ হাজার টন রসুনের কোটা চায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে এবার চাল, গম ও চিনির মতো তিনপণ্যের চাহিদা কিছুটা কমিয়ে নতুন প্রস্তাব করা হচ্ছে।
জানা গেছে, বর্তমান নেপাল ও ভুটান ভারত থেকে কোটা সুবিধায় খাদ্যপণ্য আমদানি করছে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হচ্ছে বাংলাদেশ। ভারত থেকে বরাবর চাহিদা মতো অনেকটা দরকষাকষি করে পণ্য আমদানি করা হতো। এর পাশাপাশি বিশ্বের অন্যান্য দেশ বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন থেকে বিপুল পরিমাণ গম আনতেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু চলমান যুদ্ধের কারণে এ দুটো দেশ থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি বন্ধ রয়েছে।
বিকল্প বাজার থেকে খাদ্যপণ্য আমদানি করা সম্ভব হলেও তা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ। এ কারণে ভারত থেকে প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য আমদানিতে আগ্রহী সরকার। নেপাল ও ভুটানের মতো বাংলাদেশেও কোটা সুবিধায় খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে আগ্রহী ভারত। প্রতি বছর মার্চে জাতীয় বাজেট ঘোষণার সময় নেপাল ও ভুটানে বিভিন্ন ভোগ্যপণ্য রপ্তানির কোটা ঘোষণা ভারত। আগামী অর্থবছরের বাজেট ঘোষণাকালে বাংলাদেশের জন্যও একইভাবে কোটা ঘোষণা করতে পারে বলে আশা করছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।