বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : গত ১৪ বছরে বদলে গেছে পদ্মা নদীর পাড়ের শহর রাজশাহী। আওয়ামী লীগ সরকার টানা ক্ষমতায় থাকায় এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। নগরবাসী বলছেন, প্রত্যাশার চেয়ে প্রাপ্তিই বেশি।
রাজশাহীতে এখন শান্তির সুবাতাস। নেই রাজনৈতিক হানাহানি। সেই ‘অচেনা’ শহরে পাঁচ বছর পর আজ আসছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিগত সময়ে তাঁর সরকার যে উন্নয়ন করেছে সেই উন্নয়ন তুলে ধরে আগামীতে জনগণের রায় চাইবেন তিনি। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নৌকায় ভোট চাইবেন টানা তিন বারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
নতুন বছরে এটাই প্রধানমন্ত্রীর প্রথম জনসভা। এই জনসভা জনসমুদ্রে রূপ দিতে এক মাস ধরে রাজশাহীতে কাজ করছেন কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। শিক্ষানগরী রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বরণ করতে প্রস্তুত লাখো জনতা। গতকাল সন্ধ্যায় জনসভাস্থল নগরীর মাদরাসা মাঠ পরিদর্শন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। রাজশাহীতে বিগত ১৪ বছরের উন্নয়ন অর্জন দিয়ে জনগণের কাছে ভোট চাইবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নয়ন হয় সেই বার্তাই পাবেন দেশের মানুষ। তিনি বলেন, স্মরণকালের জনসভা হবে রাজশাহীতে।
উৎসবের নগরী রাজশাহী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ঘিরে রাজশাহী এখন উৎসবের নগরী। নানা রঙে সাজানো হয়েছে এ নগরীকে। বঙ্গবন্ধু কন্যাকে বরণ করতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় রাজশাহীর মানুষ। রাজশাহী মাদরাসা মাঠে রাজশাহী জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগদানের পাশাপাশি শেখ হাসিনা বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে ৩৮তম বিসিএস পুলিশ এএসপি ব্যাচের সমাপনী কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করবেন তিনি। মাদরাসা মাঠের জনসভা থেকে রাজশাহীর ৩৩ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। রাজশাহী মহানগরীর আলুপট্টি, কুমারপাড়া, সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট, সোনাদীঘির মোড়, ফায়ার ব্রিগেড মোড়, সিঅ্যান্ডবির মোড়, লক্ষ্মীপুর মিন্টু চত্বর, টমটম চত্বর, বর্ণালীর মোড়, মাদরাসা মাঠ, রেলগেট কামরুজ্জামান চত্বর, শিরোইল বাস টার্মিনাল, ভদ্রা, তালাইমারী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গোটা নগরীতে এখন সাজ সাজ রব। ব্যানার-ফেস্টুন-তোরণে ছেয়ে গেছে গোটা শহর। গুরুত্বপূর্ণ জায়গা, পার্ক, স্থাপনা, ভবন, দফতরগুলোকে সাজানো হয়েছে বিশেষভাবে। প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি মেগা প্রজেক্টসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে ব্যানার-ফেস্টুনে। মাদরাসা ময়দানে আওয়ামী লীগের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রতীক ‘নৌকা’র আদলে প্রস্তুত করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজশাহীর পাশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে সভা-সমাবেশ ও প্রচার মিছিল করা হয়েছে। সব জায়গাতেই আমরা ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভা স্মরণকালের সর্ববৃহৎ হবে। ব্যাপক সাড়া পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, মাদরাসা ময়দানের বাইরে আশপাশের এলাকাগুলোও লোকে লোকারণ্য হয়ে যাবে আশা করছি। রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন বছরের প্রথম জনসভা হবে স্মরণকালের ঐতিহাসিক।
১৪ বছরে বদলে যাওয়া রাজশাহী : পরিচ্ছন্ন পরিবেশ, প্রশস্ত রাস্তা, উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, সবুজায়ন, আলোকায়ন, দৃষ্টিনন্দন সড়ক বিভাজক, বিনোদন কেন্দ্রের উন্নয়নসহ নানাবিধ উন্নয়নে তিলোত্তমা নগরীতে পরিণত হয়েছে রাজশাহী। তিলোত্তমা রাজশাহীতে প্রধানমন্ত্রীর দিনব্যাপী সফরে ২৫টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ছয়টির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এর মধ্যে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাতটি প্রকল্প রয়েছে।
বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল : প্রায় ৫ কোটি ২ লাখ টাকা ব্যয়ে রাজশাহী নগরীর সিএন্ডবি ক্রসিং এলাকায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নির্মাণ করেছে রাসিক। দেশের সর্ববৃহৎ এই ম্যুরালের উচ্চতা ৫৮ ফুট। মূল অংশে উচ্চতা ৫০ এবং ৪০ ফুট চওড়া বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে। সীমানা প্রাচীরের উভয় পাশে ৭০০ ফুট জুড়ে টেরাকোটার কাজ করা হয়েছে। গ্যালারি এবং ল্যান্ডস্কেপিং সুপার গ্রানাইট দিয়ে সুসজ্জিত। ম্যুরালে শোভাবর্ধক বৈদ্যুতিক বাতিসহ রাতের দৃষ্টিনন্দন আবহ তৈরি করা হয়েছে।
শেখ রাসেল শিশুপার্ক : শিশুদের বিনোদনের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে রাজশাহী নগরীতে শেখ রাসেল শিশু পার্ক নির্মাণ করা হয়েছে। আনুমানিক ৪ দশমিক ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ছোট বনগ্রাম এলাকায় ২ দশমিক ১৪ একর জমির ওপর একটি সময় উপযোগী ডিজাইনের মাধ্যমে নজরকাড়া ও আকর্ষণীয় অবয়ব দেওয়ার জন্য পার্কটি স্থাপিত হয়েছে। পার্কে রয়েছে ব্রিজ, উন্মুক্ত মঞ্চ, হাঁটার পথ, কৃত্রিম পাহাড়সহ বিভিন্ন আধুনিক রাইড এবং কার্যকর নিরাপত্তা।
এ ছাড়া মোহনপুর রেলক্রসিংয়ে প্রায় ৪০ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ করা হয়েছে। আওতায় ভদ্রা মোড় রেলক্রসিং হতে পারিজাত লেক হয়ে নওদাপাড়া বাস টার্মিনাল পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ চার লেন সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। ৮০ ফুট প্রশস্ত ৪ দশমিক ১৭ কিলোমিটার সড়কের নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৬৯ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বন্ধগেট হতে সিটি হাট পর্যন্ত বর্তমান দুই লেন সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা হয়েছে। প্রায় ১৩ দশমিক ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে রেন্টুর খরির আড়ত থেকে ধলুর মোড় হয়ে হাইটেক পার্ক পর্যন্ত কার্পেটিং রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাত নির্মাণ এবং কোর্ট থেকে শহরতলি ক্লাব পর্যন্ত ডি কার্পেটিং রাস্তা নির্মাণ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। রাজশাহী কল্পনা সিনেমা হল থেকে তালাইমারী মোড় পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১৩১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে আলুপট্টি মোড় হতে তালাইমারি মোড় পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার বর্তমান সড়কটির প্রশস্ত করে চার লেন সড়কে উন্নীত করা হয়েছে। ৫২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয়ে বিলসিমলা রেলক্রসিং থেকে কাশিয়াডাঙ্গা মোড় পর্যন্ত ৪ দশমিক ২ কিলোমিটার সড়ক ৩০ ফুট থেকে ৮০ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। ৯৩ কোটি ৪৮ লাখ ব্যয়ে তালাইমারী মোড় হতে কাটাখালী বাজার পর্যন্ত অযান্ত্রিক যানবাহন লেনসহ ছয় লেন সড়ক নির্মাণ চলমান রয়েছে। ২ হাজার ৯৩১ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার টাকা ব্যয় সাপেক্ষে ‘রাজশাহী মহানগরীর সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় মহানগরীতে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ চলমান রয়েছে। মহানগরীর ১৫টি চত্বরে ১৬টি আধুনিক মানের সুুউচ্চ বিদ্যুৎ লাইটের পোল স্থাপন করা হয়েছে। তালাইমারী মোড় থেকে আলুপট্টি সড়কে আধুনিক সড়কবাতির দৃষ্টিনন্দন পোল বসানো হয়েছে। প্রতিটি পোলের মাথায় লাগানো হয়েছে ১৩টি আধুনিক লাইট। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সর্বক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রাজশাহী মহানগরী। এ ব্যাপারে রাসিক মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী মহানগরীর উন্নয়নে ২ হাজার ৯০০ কোটি টাকা প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে রাজশাহী নগরীকে সাজানো হচ্ছে।