বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাগরের পানি থেকে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা চলছে। এভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন একটি নতুন ধারণা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে যেসব কোম্পানি প্রস্তাব দিয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাতারবাড়ি, মহেশখালী বা বাঁশখালীতে হাইড্রোজেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হবে।
বুধবার জাতীয় সংসদে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন খানের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আনোয়ার হোসেন তার প্রশ্নে কক্সবাজারসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে সুবিধাজনক স্থানে সাগরের পানি হতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জলবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সরকারের পরিকল্পনা আছে কিনা তা জানতে চান।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের কোনো কোনো দেশে সমুদ্রের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়, যা ব্যয়সাপেক্ষ এবং তা বাণিজ্যিকভাবে ফলপ্রসূ হয়নি। তবে ভবিষ্যতে নির্মাণ খরচ কমে এলে বঙ্গোপসাগরের জোয়ার-ভাটাকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে।
রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে : জাতীয় পার্টির সদস্য ডা. রুস্তম আলী ফরাজীর এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ একটি উচ্চ রেমিট্যান্স প্রাপ্ত দেশ। বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির পরও ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৪.৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রাপ্ত রেমিট্যান্স ২১.০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে প্রায় ১০ হাজার ৪৯৩.২৬ মিলিয়ন (১০.৪৯২ বি.) ডলার রেমিট্যান্স এসেছে।
তিনি বলেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ার জন্য সরকার নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে। যার মধ্যে অধিক কর্মী এবং বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠানো অন্যতম। আর বৈধপথে রেমিট্যান্স পাঠানোর ক্ষেত্রে সরকার ২০১৯ সালের ১ জুলাই থেকে ২ শতাংশ প্রণোদনা দিয়ে আসছে। সরকার ইতোমধ্যে প্রণোদনার বিষয়টি ২ শতাংশ থেকে ২.৫ শতাংশে উন্নীত করেছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করতে রেমিট্যান্সের কোনো বিকল্প নেই এবং তা আনতে হবে বৈধ পথে। নতুন শ্রম বাজার অনুসন্ধান, বিদ্যমান বাজার সংহত করা এবং সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সম্ভাবনাময় দেশগুলোর সরকার ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলো আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।
বিদেশ গেছে ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ জন : সরকারদলীয় সদস্য কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সরকারের নেওয়া বেশকিছু পদক্ষেপের ফলে ২০২২ সালে রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ১১ লাখ ১৩ হাজার ৩৭৪ কর্মীর বৈদেশিক কর্মসংস্থান হয়েছে। এর মধ্যে নারী কর্মীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৪৬৬ জন। এছাড়া সরকারি রিক্রুটিং এজেন্সি বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেডের (বোয়েসেল) মাধ্যমে ২০২২ সালে ৬১৫ জন পেশাজীবী এবং ১৭ হাজার ৯৭৮ জন দক্ষ কর্মীসহ ১৮ হাজার ৫৯৩ জন কর্মী বৈদেশিক কর্মসংস্থান লাভ করেছে।
শ্রমশক্তি রপ্তানি : শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে ১৬৮টি দেশে শ্রমশক্তি রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু সরকার মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক শ্রম বাজার নির্ভরতা কমাতে চায়। সেজন্য পূর্ব উরোপ ও পূর্ব এশিয়ার নতুন কিছু দেশে শ্রমিক রপ্তানি চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনি প্রতিশ্র“তি অনুযায়ী প্রতি উপজেলা থেকে গড়ে বছরে এক হাজার কর্মী পাঠানোর জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
খাদ্যশস্য উৎপাদন : বেনজির আহমেদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে যেখানে মোট খাদ্যশস্য উৎপন্ন হতো ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৬ হাজার টন তা ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৯৬ হাজার টন। বর্তমানে ৭০টির বেশি দেশে সবজি ও ফল রপ্তানি হচ্ছে এবং কৃষি পণ্য রপ্তানিতে আমরা ১০০ কোটি ডলারের মাইলফলক ছাড়িয়ে গেছে। তিনি বলেন, বর্তমান বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে ৩য় স্থানে, সবজি ও পেয়াজে ৩য় স্থান। পাট উৎপাদনে ২য়, চা উৎপাদনে ৪র্থ এবং আলু ও আম উৎপাদনে ৭ম স্থানে উন্নীত হয়েছে।
সেতু ও কালভার্ট নির্মাণ : কাজিম উদ্দিন আহম্মেদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকারের সময়ে এক হাজার ৫৫৮টি সেতু ও সাত হাজার ৪৯৮টি কালভার্ট নির্মাণ/পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। ৯০৮ দশমিক ৪৯ কিমি. সড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীতকরণের কাজ চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ২৩৫ দশমিক শূন্য ৩ কিমি. ইতোমধ্যে সড়ক চার লেন বা তদূর্ধ্ব লেনে উন্নীত হয়েছে।