বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চলতি বছরের মার্চেই চালু হচ্ছে ৪৯১টি সিসি ক্যামেরা। এজন্য প্রথম পর্যায়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত ১১৪টি স্টিলের খুঁটিতে এই ক্যামেরাগুলো স্থাপন করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে সংযোগ দেওয়া হচ্ছে বৈদ্যুতিক লাইন ও অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল। প্রাথমিক পর্যায়ে ফ্রি স্যাটেলাইট সুবিধা পেলেও পরবর্তীকালে বছরে ১ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে হাইওয়ে পুলিশকে। এছাড়া এরই মধ্যে ফেনী পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশেই মাটির নিচে এই ফাইবার অপটিক্যাল ক্যাবল বসানো হয়েছে। এছাড়া চট্টগ্রামের সিটি গেট পর্যন্ত বসানো হয়েছে ৪৫০টি সিসি ক্যামেরার স্টিলের খুঁটি।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ২৬৫ কিলোমিটার সড়কে মোট ১ হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরা এসে গেছে। মেঘনাঘাট হাইওয়ে কমান্ড ও কন্ট্রোল সেন্টার মনিটরিং ও ডাটা সেন্টার স্থাপনও শেষ। ডাটা সংযোগোর জন্য বিটিসিএলএর সঙ্গে চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়েছে। চলতি সপ্তাহে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজও শেষ হবে। সর্বশেষ গতকাল মঙ্গলবার বিজিএমই এর পক্ষ থেকে মার্চের মধ্যে সিসি ক্যামেরা চালুর দাবি জানানো হয়। সব মিলায়ে এডিপির অর্থায়নের এই প্রকল্প ৫৬ শতাংশ শেষ হয়েছে এবং চলতি বছরের জুনেই সব ক্যামেরা চালু করা সম্ভব হবে বলে হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে হাইওয়ে পুলিশের এডিশনাল ডিআইজি ও প্রকল্প পরিচালক বরকতউল্লাহ খান বলেন, প্রকল্পের ৫৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে মার্চে চালু করা হবে কুমিল্লার দাউদকান্দি পর্যন্ত। পরবর্তীকালে চলতি বছরের জুন মাসে সব ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শেষ করে ঐ মাসেই চালু হবে ঢাকা চট্টগ্রামের ১ হাজার ৪২৭ সিসি ক্যামেরা। সব মিলায়ে এই প্রজেক্টে ১২৯ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পে অত্যাধুনিক (২৪/৭) ক্যামেরার সঙ্গে আর্টিফিসিয়ালি ইনটেলিজেন্স সফটওয়্যার ব্যবহার করা হচ্ছে। কারণ অনেক সময় গাড়ির নাম্বার বলতে পারে না ভুক্তভোগীরা। এ কারণে সময় বেঁধে সন্দেহভাজন গাড়ির রং বলে ঐ সফটওয়্যারে কমান্ড দিলেই ঐ কালারের গাড়ির তালিকা পাওয়া যাবে। সেখান থেকে বাছাই করে ভুক্তভোগী অপরাধে যুক্ত গাড়ি ও অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারবেন বলে আসা করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলকার গার্মেন্ট থেকে কাভার্ড ভ্যানে মালামাল চট্টগ্রামের বন্দরে নেওয়ার পথে চুরির ঘটনা ঘটে থাকে। সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠান থেকে আনুমানিক ৫০ হাজার পিস গার্মেন্টে তৈরি বিভিন্ন ধরনের পণ্য শিপমেন্টের জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। বিদেশে পৌঁছানোর পর ক্রয়াদেশ দেওয়া মালের পরিমাণের সঙ্গে দেখা যায় বিস্তর ফারাক। এরপর ঐ দুই বায়ারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতিকে নির্দেশনা অনুযায়ী কম পণ্য দেওয়ার অভিযোগ তুলে ধরা হয়। একই সঙ্গে কয়েকটি ক্রয়াদেশ বাতিল করা হয়। এরপর অভিযুক্ত ঐ দুই গার্মেন্টের মালিকদের ডেকে পাঠানো হয়। তারা বিজিএমইএকে চুক্তি অনুযায়ী সঠিক মাল সরবারহের তথ্যপ্রমাণ তুলে ধরেন। ইন ভয়েজ ও চালানের কপিতে উঠে আসে সঠিক পণ্য দেওয়ার তথ্য। পরিবহনে যুক্ত কাভার্ড ভানের লোকজনও মাল বুঝে নিয়েছে বলে চালানের কপিতে সই করার তথ্য-প্রমাণও পাওয়া যায়। এমনকি বন্দর কর্তৃপক্ষও মালামাল বুঝে পেয়েছে বলে তথ্য উঠে আসে। বিষয়টি নিয়ে গোলকধাঁধায় পড়েন বিজিএমই-এর কর্তাব্যক্তিরা। এমন পরিস্থিতিতে তারা গোয়েন্দা পুলিশের শরণাপন্ন হন। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করে গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। এরপর তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের বিভিন্ন সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করেন। সেখানে দেখা যায়, কয়েকটি সিএনজি গ্যাস স্টেশন সংলগ্ন অনেকগুলো গোডাউন রয়েছে। ঐসব গোডাউনে আগে থেকেই কার্টুন ও পলিথিনের প্যাকেট রেডি করে রাখা হয়। আগে থেকেই জানিয়ে রাখা হয় প্রশিক্ষিত লেবারদের। এসব ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় কয়েকজন ট্রাক চালক ও ডাকাতকে। আবার নারায়নগঞ্জ পার হওয়ার পর মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনাও ঘটে থাকে। এসব বিষয়টিও মাথায় রেখে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জায়গা নির্ধারণ করা হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পুরোপুরি ক্যামেরার নিয়ন্ত্রণে আসবে। কীভাবে দুর্ঘটনা হয়েছে, কে সড়কে গাড়ি নামাল, সবগুলোই আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। আমাদের পুলিশ বাহিনী সিসি ক্যামেরায় দেখতে পাবেন কে কী করছে। মহাসড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি বলেন, চাঁদা বাণিজ্যের কথা আমি বলব না, আমি বলব একটা টোল আছে, সেটা দিতে হবে।