বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ১৪ দলীয় জোটকে চাঙ্গা করতে চাইছে আওয়ামী লীগ। এ জন্য জোটভিত্তিক বিভিন্ন কর্মসূচি দিতে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল। মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ সমমনা জোটের নৈরাজ্য ও অপতৎপরতা রোধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজধানীসহ বিভাগীয় এবং জেলা পর্যায়ে কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছে।
১৪ দলীয় জোটের নেতারা মনে করেন, চলমান উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত ও নির্বাচন নিয়ে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি দেবে ক্ষমতাসীন জোটটি। ১৪ দলীয় জোটের কর্মপরিধি বাড়িয়ে ঐক্য সুদৃঢ় করতে শিগগির পদক্ষেপ নেবে। এ উপলক্ষে তৃণমূল পর্যায়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির পরিধি বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন কালবেলাকে বলেন, কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে, তবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। ঢাকা মহানগর ১৪ দলীয় জোটের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া কালবেলাকে বলেন, কার্যক্রম আরও বৃদ্ধি করতে জোটের শরিকদের সঙ্গে আলোচনা চলছে। বিভাগীয় ও জেলাপর্যায়ে কর্মসূচির পরিধি বাড়াতে শিগগির বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশের পরিকল্পনা রয়েছে।
২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন জোরদার করতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে গঠিত হয় ১৪ দলীয় আদর্শিক জোট। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠনের পর সরকারে শরিকদের অংশগ্রহণ না থাকায় কিছু টানাপোড়েন তৈরি হলেও গত বছর মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সঙ্গে বৈঠক করেন জোটের নেতারা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে অংশ নিতে ঐকমত্যে পৌঁছান জোটের শরিকরা। সর্বশেষ বিএনপির ছেড়ে দেওয়া ছয়টি আসনে জোটের শরিকদের জন্য দুটি আসন ছেড়ে দিয়ে টানাপোড়েন কিছুটা কমানোর উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ।
জোটের অন্যতম শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া কালবেলাকে বলেন, সব অপরাজনীতি মোকাবিলা করতে আমরা প্রস্তুত আছি। আগামী নির্বাচনের আগে যথেষ্ট সময় আছে এবং বিরোধীদের মোকাবিলা করতে ১৪ দলীয় জোট পারদর্শী। সময় মতো জোটের কার্যকারিতা প্রমাণ করতে তৃণমূল পর্যন্ত পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
করোনা মহামারিতে ও জোটের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুর পর কিছুটা শিথিল হলেও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু জোট চাঙ্গা করতে সভা-সমাবেশসহ নানা কর্মসূচির মাধ্যমে জোটের শৈথিল্য কাটাতে চেষ্টা করেন। আর এজন্য জোটের বিগত কয়েকটি সভায় জেলাভিত্তিক সমন্বয় কমিটি গঠন ও তৃণমূলে কার্যক্রম বৃদ্ধির পরিকল্পনা করা হয়।
এর আগে গত বছর ডিসেম্বরে ১৪ দলের এক সভায় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোট বেঁধে রাজপথে ও আগামী নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়ার সিদ্ধান্ত নেয় জোটের নেতারা। বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলতে ১৪ দল পেশাজীবী সংগঠনগুলো ঐক্যবদ্ধ করাসহ দেশব্যাপী যার যার অবস্থান থেকে সক্রিয়তা বাড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়। আদর্শিক জোট হওয়ায় ১৪ দলীয় জোটে নতুন শরিকের অংশগ্রহণের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত না হলেও ইসলামী দলসহ কয়েকটি দলের সমন্বয়ে আলাদা জোট করে যুগপৎভাবে কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে কর্মকাণ্ড বৃদ্ধির বিষয়ে পরিকল্পনা চলছে।
তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী কালবেলাকে বলেন, প্রথমে বিভাগীয় পর্যায়ে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে। পরে জেলা পর্যায়ে কর্মসূচি বিস্তৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি-জামায়াতের নৈরাজ্য ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জোটের নির্বাচনমুখী কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি করা হবে।
বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের ভূমিকা প্রকট হবে বলেও জোটের নেতারা মনে করেন। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী নির্বাচনে বিকল্প প্রার্থী ও বিনা নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত না হওয়ার ইঙ্গিত দেওয়ায় জোটের শরিকদের ভূমিকা বৃদ্ধি পাবে বলেও মনে করেন অনেকে।
জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাদের চৌধুরী কালবেলাকে বলেন, বিরোধী দলের অনেক কর্মসূচিই থাকে, তবে ক্ষমতাসীন দলের রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করতে হয়। সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করেই ক্ষমতাসীন জোটের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হবে বলে আলাপ-আলোচনা চলছে।