বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : দেশে ছড়িয়ে থাকা অনেক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামের শ্রুতিকটু ও নেতিবাচক ভাবার্থ রয়েছে। এ কারণে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সেগুলোর নাম পরিবর্তন করে গেজেট প্রকাশ করা হবে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন।
গতকাল মঙ্গলবার প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এ নামগুলো শিশুর রুচি, মনন ও বোধ পরিশীলিতভাবে বেড়ে ওঠার অন্তরায়। তাই মন্ত্রণালয় এসব বিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রুচিশীল ও শ্রুতিমধুর এবং স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় ইতিহাস সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নামকরণ করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম যুদ্ধাপরাধী ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নামে নামকরণ করা হয়ে থাকলে তা পরিবর্তন করা হবে। এসব বিষয়ে গত ২৩ জানুয়ারি একটি নীতিমালা প্রকাশ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী সবকিছু বাস্তবায়ন করা হবে।
জুন থেকে চালু হবে ‘স্কুল ফিডিং’ :
সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের জুন থেকে স্কুল ফিডিং প্রকল্প চালু হবে। দারিদ্র্যপীড়িত এলাকায় স্কুল ফিডিং প্রকল্পটি ২০১০ সালে চালু হয়ে গত বছরের জুনে শেষ হয়। প্রকল্পটি দেশের ১০৪ উপজেলায় চালু ছিল। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের পুষ্টি ঘাটতি পূরণ, বিদ্যালয়ে শতভাগ ভর্তি, নিয়মিত বিদ্যালয়ে উপস্থিতি, ঝরে পড়া রোধ, যথাসময়ে শিক্ষাচক্র সমাপ্তকরণে প্রকল্পটি কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। তাই দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্কুল ফিডিং কার্যক্রম গ্রহণ করার জন্য সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছে।
প্রাথমিকে বৃত্তির ফল ও শিক্ষকদের বদলি চলতি মাসেই :
প্রাথমিকের বৃত্তি পরীক্ষার ফল আগামী ২৫ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তিনি বলেন, এ মাসের ২৫ থেকে ২৮ তারিখের মধ্যে আমরা চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করতে পারব বলে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন। এ ছাড়া, দ্বিতীয় ধাপে চলতি মাসেই আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি করপোরেশন এবং আন্তঃবিভাগ পর্যায়ে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বদলি কার্যক্রম শুরু হবে। গতকাল সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান।
প্রাথমিকের শিক্ষকদের বদলির বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব বলেন, আমরা গত বছরের ২২ ডিসেম্বর একটি সমন্বিত নীতিমালা জারি করেছি। এটার আলোকে প্রথমপর্যায়ে আন্তঃউপজেলা বদলি কার্যক্রম শুরু করেছি। এক সপ্তাহের মধ্যে ২৫ হাজার আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। বিশ্বাস করি, এর মাধ্যমে ৯৮ শতাংশ শিক্ষক সন্তুষ্ট হয়েছেন।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় ধাপে এ মাসেই আন্তঃজেলা, আন্তঃসিটি করপোরেশন এবং আন্তঃবিভাগ পর্যায়ে শিক্ষক বদলিতে আরও কিছু কাজ করতে হবে। সেই কাজটা করছি।
সচিব বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের প্রোফাইল প্রণয়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। প্রকল্পটি দু-বছর আগে নেওয়া হয়েছিল। আমরা বরিশালের একটি জেলায় এর পাইলটিং করেছিলাম। সেখানে ৮০ শতাংশ তথ্য আমরা নিতে পেরেছি। কিন্তু মধ্যে আমাদের কার্যক্রম স্তিমিত হয়ে গিয়েছিল। এবার আমরা কাজটি জোরেশোরে শুরু করেছি। আমাদের টার্গেট আগামী বছরের জুনের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের সরকারি-বেসরকারি সব শিক্ষার্থীর প্রোফাইল প্রণয়নের কাজ শেষ করবো।
ফরিদ আহাম্মদ বলেন, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কাজ এনসিটিবি করার কথা। কিন্তু তারা গত ৩১ জানুয়ারি আমাদের চিঠি দিয়ে জানিয়েছে, তারা একা এটা করতে পারছে না। গত ১৪ দিনে ১ লাখ ৭১ হাজার শিক্ষককে অনলাইন বিস্তরণ কোর্স করানো হয়েছে। আমাদের টার্গেট মার্চের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক, কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করব।
করোনায় প্রাথমিকের শিক্ষণ ক্ষতি ২৭ শতাংশ :
মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন বিষয়ে গড়ে শিক্ষণ ক্ষতি হয়েছে ২৭ শতাংশ। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ। তিনি বলেন, করোনার দুই থেকে আড়াই বছরে আমাদের শিক্ষণ ঘাটতি হয়েছে, এটি সত্য। ওইসময় আমরা শিক্ষণ গ্যাপ কমাতে সিএসএসআর নামে একটি প্রকল্প নিয়েছিলাম। মূল্যায়নে এসেছে, এটি ৯০ শতাংশের বেশি সফল হয়েছে। এনসিটিবি শিক্ষণ ক্ষতি নিয়ে যে স্টাডি করেছে, সেখান আমরা দেখেছি শিক্ষণ ক্ষতি গড়ে ২৭ শতাংশ, বিভিন্ন বিষয়ে এ ক্ষতি হয়েছে। কোনো বিষয়ে বেশি, কোনো বিষয়ে কম, গ্রামে এক রকম, শহরে আরেক রকম। এ ক্ষতিগুলো কীভাবে কাটাব, তা চিহ্নিত করেছি।