বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : ছয় লেনের ১২২ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। উভয় পাশে অযান্ত্রিক যানের জন্য ১০ ফুটের পৃথক লেন। সড়কের পাশে ফুটপাতের বিস্তার ছয় ফুট। আর রাস্তার মাঝবরাবর মাথার ওপর চার লেনের উড়ালসড়ক। সড়কপথের বদলে যাওয়ার এ চিত্র রাজধানীর মিরপুরের কালশী, মাটিকাটা, সাগুফতা ও মিরপুর ডিওএইচএস এলাকার।
এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা, যা শেষ হচ্ছে ১৯ ফেব্রুয়ারি। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন ‘ইসিবি চত্বর থেকে মিরপুর পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ, উন্নয়ন ও কালশী মোড়ে ফ্লাইওভার নির্মাণ’ প্রকল্প।
সম্প্রতি প্রকল্পের মূল নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে শেষ পর্যায়ের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সৌন্দর্যবর্ধনের আনুষঙ্গিক কাজ।
আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন না করায় উড়ালসড়ক বন্ধ আছে। তবে নিচের প্রশস্ত রাস্তার সুফল পাচ্ছেন মিরপুরের বাসিন্দারা। সড়ক প্রশস্ত হওয়ায় যানজট হচ্ছে না। এতে একদিকে যেমন স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে, অন্যদিকে মিরপুর থেকে বিমানবন্দর, উত্তরা, গুলশান, বনানী ও রামপুরা যাতায়াতে সময় বাঁচছে।
এ পথে নিয়মিত যাতায়াতকারীদের একজন সাজেদা আক্তার। তিনি মতিঝিলে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। সাজেদা প্রথম আলোকে বলেন, আগে বাসায় ফেরার পথে কালশী মোড়ের যানজটে ২০ থেকে ৩০ মিনিট বসে থাকতে হতো। এটা ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। এখন সড়ক চওড়া হয়েছে। যানজটে এখন আর বসে থাকতে হচ্ছে না।
দৈনিক এক লাখ যানবাহনের চাপ সামলাবে
প্রকল্পটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ টাকা।
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৩৩৫ কিলোমিটার, যা শুরু হয়েছে বাউনিয়াবাঁধ এলাকায়। কালশী মোড়ে এসে উড়ালসড়কের একটি অংশ বাঁ দিকে মোড় নিয়ে পল্লবীর দিকে গেছে। অন্য অংশটি চলে গেছে মিরপুর ডিওএইচএসের দিকে। মূল উড়ালসড়ক চার লেনের। ওঠানামার র্যাম্প রয়েছে পাঁচটি।
সড়ক ও উড়ালসড়কের উন্নয়নকাজে গত কয়েক বছর মিরপুর থেকে উত্তরা, গুলশান, বনানী যেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন আর সেই ভোগান্তি নেই, সময়ও কম লাগছে।
আবদুল্লাহ আল মামুন, মিরপুর কালশী সড়কের বাসিন্দা । এর নিচে প্রশস্ত করা রাস্তার দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৭ কিলোমিটার, যা মাটিকাটা এলাকার ইসিবি চত্বর থেকে শুরু হয়ে কালশী মোড় হয়ে মিরপুর ডিওএইচএসে চলে গেছে। সড়কের মোট প্রশস্ততা ১২২ ফুট। এর মধ্যে যানবাহন চলাচলের মূল রাস্তাটিই ৩৬ ফুটের (উভয় পাশে)।
ঢাকা উত্তর সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, ওই এলাকায় মিরপুর সেনানিবাস, চিড়িয়াখানা, সেনাবাহিনীর আবাসন, অনেক শিক্ষা ও চিকিৎসাপ্রতিষ্ঠান, জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম রয়েছে। মিরপুরের যাতায়াত সহজ করতে আগেই নতুন সড়ক ও সেনানিবাস এলাকায় উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে মিরপুরে যাতায়াতে সড়কটির ব্যবহার অনেক বেড়ে যায়। তবে কালশী মোড়ে সরু থাকায় সেখানে প্রায় যানজট হতো। এখন ওই পথ দৈনিক এক লাখ যানবাহনের চাপ সামলাতে পারবে।
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আতিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, কালশীর মোড়ের অবস্থা ছিল হযবরল। সেখানে এসে যানজটে সবাই আটকা পড়তেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ায় মিরপুরবাসী সুবিধা পাবেন এবং যাতায়াতে সময় বাঁচবে। তিনি আরও বলেন, তবে প্রশস্ত সড়ক ও ফুটপাত যাতে অবৈধভাবে দখল না করা হয়, এ জন্য নগরবাসীকে এগিয়ে আসতে হবে।
সুফল পাবে মিরপুরবাসী
গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, সড়ক বিভাজকে জায়গায় ঘাস ও ফুলের গাছ লাগাচ্ছেন কয়েক শ্রমিক। পাশাপাশি রাস্তা পরিষ্কার, রং করা ও রোড মার্কিংয়ের কাজ চলছে। মাটিকাটা এলাকার ইসিবি চত্বর ও বাউনিয়াবাঁধ অংশে দুটি পদচারী-সেতু বানানো হচ্ছে।
অন্যদিকে উড়ালসড়কে ওঠানামার মুখে প্রতিবন্ধক দেওয়া আছে। তবে উড়ালপথ ফাঁকা থাকায় প্রতিবন্ধক পেরিয়ে অনেকে হেঁটে ওপরে যাচ্ছেন। বন্ধু ও স্বজনদের নিয়ে ঘোরাফেরা করে ছবিও তুলছেন। তবে কালশী মোড় থেকে পল্লবীর দিকে নেমে যাওয়া উড়ালসড়ক অংশে এরই মধ্যে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিষ্ঠানের পোস্টার লাগিয়ে নোংরা করা হয়েছে।
মিরপুর কালশী সড়কের বাসিন্দা শিক্ষক আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেন, সড়ক ও উড়ালসড়কের উন্নয়নকাজে গত কয়েক বছর মিরপুর থেকে উত্তরা, গুলশান, বনানী যেতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। এখন আর সেই ভোগান্তি নেই, সময়ও কম লাগছে। উড়ালসড়ক উন্মুক্ত হলে মিরপুরবাসী সুফল পাবে।