বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ধাক্কা ধীরে ধীরে কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ। ইতিবাচক ধারায় ঊর্ধ্বমুখী গতিতে ছুটছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। বর্তমানে দেশের রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ৪৪ বিলিয়ন ডলারে। তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) মানদণ্ডের আলোকে হিসাব করলে রিজার্ভ এখন ২৪ বিলিয়নের কিছু বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রফতানি ও রেমিট্যান্স আয়ের প্রবৃদ্ধি, আইএমএফের ঋণের অর্থ দ্রুত ছাড় এবং বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে কমছে আমদানিও। ফলে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়ছে। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি কমাতে না পারলে রিজার্ভের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা ধরে রাখা যাবে না বলে মত অর্থনীতিবিদদের।
চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে মোট ৯৮০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এর আগে আট মাসে এত ডলার বিক্রি করেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত অর্থবছরের ১২ মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছিল ৭৬২ কোটি ডলার।
রিজার্ভ ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ালেও গত বছরের এ সময়ে তুলনায় রিজার্ভ কমেছে ১২ দশমিক ৭৯ বিলিয়ন ডলার। গত বছর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৫ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ধীরে ধীরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। সামনে রোজা ও ঈদ। তিনি মনে করেন, আগামী কয়েক মাসে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও বাড়বে। এতে রিজার্ভ আরও স্বস্তিদায়ক অবস্থানে ফিরবে। তবে রাতারাতি পরিস্থিতির উন্নতি হবে না।
অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি বাজারকে ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণ করতে না দেয় এবং ঋণের ওপর ৯ শতাংশ সুদের হারের সীমা তুলে না নেয়, তাহলে রিজার্ভ কমতে পারে।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, ডলার বিক্রি করে সংকট কাটানোর যেই চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক সেটি কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ ডলার বিক্রির ফলে চাপ তৈরি হচ্ছে ব্যাংকের তারল্যে। এর ফলে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি, সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সাত মাসে ৩ হাজার ২৪৫ কোটি ডলার বা প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৪ কোটি ডলারের রফতানি আয় হয়েছে। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে প্রতি মাসে গড়ে ৫২০ কোটি ডলার রফতানি হয়েছে। এ ছাড়া জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স তথা প্রবাসী আয় বেড়ে ১৯৬ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।
২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি সাত মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ১৩ দশমিক ৫০৪ বিলিয়র ডলার। আর চলতি ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম ১৭ দিনে প্রবাসীরা দেশ পাঠিয়েছেন ১ দশমিক শূন্য ৫১ বিলিয়ন ডলার। আগস্ট পর্যন্ত রফতানি আয়ের ঊর্ধ্বমুখী ছিল। সেপ্টেম্বর মাসে কিছুটা নিম্নমুখী হয়। তবে ডিসেম্বর মাস থেকে তা কিছুটা ঘুরে দাঁড়ায়। ফেব্রুয়ারি মাসেও সেই ধারা অব্যাহত আছে।
আমদানি কমাতে শতভাগ পর্যন্ত এলসি মার্জিন, তদারকি জোরদারসহ বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে আমদানি ব্যয় ২ দশমিক ১৫ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৮১৩ কোটি ডলারে নেমেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমেছে আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা। পূর্বে খোলা ঋণপত্রের দায় পরিশোধ করতে এখনও উল্লেখযোগ্য হারে বৈদেশিক মুদ্রা গুনতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে এ আমদানি দায় পরিশোধের হার কমে আসছে। নতুন এলসি খোলার দায় পুরোপুরি পরিশোধ শুরু হলে আমদানি ব্যয় গুনতে রিজার্ভের ওপরে চাপ কমে যাবে। তখন রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিও কমবে।
অর্থনৈতিক সংস্কারের শর্তে ঋণ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তারা বলছে, আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাড়বে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে দেশের রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সূচকগুলোর বিশ্লেষণ করে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে বহুজাতিক এই অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানটি।