বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিএনপি-জামায়াতের প্রতি ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বোমাবাজি, গুলি, গ্রেনেড হামলাকারী, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, জনগণের অর্থ আত্মসাৎকারী—এরা কোনোদিন এ দেশে ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ কখনও তাদের মেনে নেবে না। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা যেভাবে চেয়েছিলেন সেভাবে মাথা উঁচু করে চলবো। বাংলাদেশ তার সম্মান নিয়ে চলবে। জাতির পিতার জন্মদিনে সেটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করতে হবে। হাজার চক্রান্ত করলেও এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না বলেও তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রবিবার (১৯ মার্চ) আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রমজানে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সামনে রমজান মাস, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়—সেজন্য যা যা প্রয়োজন, আমরা সেই ব্যবস্থা করেছি। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের লক্ষ রাখতে হবে—এসব পণ্য মজুতদারি করতে না পারে কেউ। কালোবাজারি করতে না পারে, তার জন্য সজাগ থাকতে হবে।’
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড দেশবাসীর কাছে তুলে ধরার নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষ ভালো থাকলে বিএনপি-জামায়াতিদের মনে কষ্ট হয়। এরা একটা মিথ্যা বারবার বলে মিথ্যাটাকে সত্য করতে চায়। আমরা যে কাজগুলো করছি, তা মানুষের ঘরে ঘরে বলতে হবে। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা জনগণের মঙ্গল চিন্তা করে কাজ করি। মানুষের কল্যাণে যা যা করার আওয়ামী লীগ সেটাই করে। আমরা দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্যই কাজ করি। মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন আমাদের লক্ষ্য।’
তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়বো। শিক্ষাদীক্ষায় প্রযুক্তি-জ্ঞানে একটি স্মার্ট জনগোষ্ঠী সৃষ্টি হবে এবং এই দেশ এগিয়ে যাবে।’
আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কর্মময় জীবনের ওপর আলোকপাত করেন। বলেন, ‘কলকাতায় পড়তে যাওয়ার পর তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় মেলে। পাকিস্তান নামের রাষ্ট্র তৈরি হওয়ার সময়ে তিনি সংগ্রাম করেছেন। আবার পাকিস্তানিরা যখন ভাষা কেড়ে নিতে চাইলো, সেই সময় সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়ে প্রতিবাদ করেন। সেই থেকে তাঁর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু। তার ধারাবাহিতায় আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।’
তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার পর দেশটাকে কীভাবে সাজাবেন, মানুষের জন্য কী করবেন, ছোটবেলা থেকেই আমরা এই গল্পটাই বাবার কাছ থেকে শুনতাম। তিন বছর ৭ মাস তিন দিন ক্ষমতায় থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটাকে গড়ে তোলেন। তাকে হত্যা করে যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা সেই অর্জনটা ধরে রাখতে পারেনি বা চায়নি। তাদের প্রচেষ্টটাই ছিল বাংলাদেশটাকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করা। পরাজিত হওয়ার পর বোধহয় একটি প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা তাদের ছিল। আমাদের দেশের কিছু বেইমান মোনাফেকের দল তাদের সঙ্গে হাত মেলায়। তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আমরা বঙ্গবন্ধুর নাম, আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বাঙালি জাতি হিসেবে আমাদের যে স্বকীয়তা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই। যেটা সম্পূর্ণভাবে নির্বাসিত ছিল। এমন একটা সময় ছিল যে মুক্তিযুদ্ধ করেছি এই কথাটি বলতেও সাহস পেতো না। এমন একটি পরিবেশ এ দেশে সৃষ্টি হয়েছিল। অবৈধভাবে যারা ক্ষমতায় আসে, তারা এই পরিবেশ তৈরি করে। জাতির পিতার অর্জন একে একে ধ্বংস করে। বাংলাদেশ যে তিমিরে ছিল আবার সেই তিমিরে চলে যায়।’
বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, ‘দুর্ভাগ্যের বিষয় আমাদের দলেই খন্দকার মোশতাকের সৃষ্টি। সে হাত মিলিয়ে ছিল মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে। চক্রান্ত করেই কিন্তু, আর যেসব আন্তর্জাতিক শক্তি আমাদের স্বাধীনতার সময়ে বিরোধিতা করেছিল, তাদের প্ররোচনায় সব মিলিয়ে কিন্তু এই হত্যাকাণ্ডটা ঘটে। এদের ধারণা ছিল বঙ্গবন্ধুর নাম আর এ দেশে আসবে না। কিন্তু সত্যকে কখনও মিথ্যা দিয়ে ঢেকে রাখা যায় না, সেটা আজ প্রমাণিত।’
আওয়ামী লীগকে কখনও দমানো যায়নি উল্লেখ করে দলটির সভাপতি বলেন, ‘অত্যাচার নির্যাতনের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগকে কেউ কখনও দমাতে পারিনি। কেউ নিঃশেষও করতে পারেনি। আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর চিন্তাচেতনা আদর্শ দিয়ে এগিয়ে গেছে। যে দলটি মাটি মানুষ থেকে গড়ে ওঠে, তার শেকড়টা উপড়ে ফেলা যায় না। ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে যারা দল করে, তাদের তো কোনও শেকড় নেই। এরা তো অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তৈরি। জনগণের প্রতি তাদের কোনও দায়িত্ববোধ নেই। জনগণের প্রতি তাদের কোনও আস্থাও নেই। যার কারণে আমরা দেখেছি—যখন এরা ক্ষমতায় তখন মানুষের ওপর অত্যাচার হয়।’
আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনও সরকারের সময় দেশের উন্নতি হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ, এরপর এলো খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়াকেও কিন্তু জনগণের ভোট চুরির অপরাধে বাংলাদেশের মানুষ আন্দোলন করে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করেছিল। যখনই তারা ক্ষমতায় এসেছে, জনগণের ভোট নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে, লুটপাটের রাজত্ব তৈরি করেছে। দুর্নীতিটাই তাদের নীতি। বিএনপির অপকর্মের কারণে জরুরি অবস্থা হয়। হিসাব করলে দেখা যাবে—এই শক্তি ২৯ বছর ক্ষমতায় ছিল, কিন্তু তারা এ দেশের মানুষকে কী দিয়েছে?’
বিএনপি নেতাদের সাম্প্রতিক বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশটাকে নাকি আমরা খোপলা বানিয়ে দিয়েছি। দেশটাকে শেষ করে দিয়েছি। দেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে। চোখ থাকতে কেউ অন্ধ হলে তাকে তো কিছু দেখানো যায় না। আমরা দেশটাকে ডিজিটাল করে দিয়েছি। আমরা জনগণকে যে সুযোগটা করে দিয়েছি, সেই সুযোগটা তারা ব্যবহার করছে। আমাদের সরকারি খাতের টেলিভিশন ব্যবহার করছে। তারপর বলছে আমরা কিছুই করি না।’
জিয়াউর রহমান মারা যাওয়ার পর টেলিভিশনে টানা ৪০ দিন তাকে নিয়ে প্রচার করার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘জিয়াউর রহমান নাকি একেবারে কিছুই রেখে যাননি। শুধু ভাঙা সুটকেস আর ছেড়া গেঞ্জি রেখে গেলো! তাহলে ২০০১-এ ক্ষমতায় আসতে না আসতে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক এরা কীভাবে হলো? কাদের টাকা চুরি করলো? সেই চুরি আবার ধরা পড়লো আমেরিকার এফবিআইয়ের হাতে। ধরা পড়লো সিঙ্গাপুরে জুয়া খেলতে গিয়ে। পাচার করলো হাজার হাজার কোটি টাকা। আমরা ৪০ কোটি টাকা উদ্ধার করে ফেরত আনতে পেরেছি। এখনও বিএনপির বহু নেতার টাকা বহু জায়গায় ফ্রিজ করা আছে। এই টাকাগুলো কাদের? এই জনগণের টাকাই তো এরা পাচার করেছে। তাদের ভাঙা সুটকেস তো জাদুর বাক্সে পরিণত হলো। দেখলাম ইন্ডাস্ট্রি হচ্ছে। কোকো-১, কোকো-২ লঞ্চ হচ্ছে। ছেঁড়া গেঞ্জি তো ফ্রেন্স শিপন হয়ে খালেদা জিয়ার গায়ে চড়ে গেলো।’
তিনি বলেন, ‘দেশের জনগণকে বিএনপি ভিক্ষুক জাতি বানাতে চেয়েছিল। এটা দেশবাসীর জানা উচিত। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে বৈদেশিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে, এজন্য তারা ভিক্ষুকের জাতি বানাতে চেয়েছিল। ওদের যারা খাদ্য নিয়ে ব্যবসা করে পয়সা কামায়, আর গরিবের মুখের গ্রাস নিয়ে লুটে খায়, তা খেতে পারবে না। এটাই ছিল আসল কথা। তাদের দুর্নীতির সুযোগটা কমে যাওটাই ছিল আসল কথা। লুটপাট কী হারে করেছে তারা। রাস্তাঘাট যেখানে যা করতে গেছে, সব জায়গায় লুটপাট। সব জায়গায় কমিশন খাওয়া, ঘুষ খাওয়া, দুর্নীতি করা।’
আজকে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বে যখন অর্থনৈতিক মন্দা সৃষ্টি হয়েছে, বাংলাদেশ অন্তত তার থেকে ভালো অবস্থানে আছে। খাদ্যের অভাব যাতে না হয়, তার ব্যবস্থা আমরা করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব ধরনের চিকিৎসাসেবা ইনস্টিটিউশন করে দিয়েছি। কোনটা আমরা না করেছি। আধুনিক চিকিৎসার সব ব্যবস্থা বাংলাদেশে এখন করা হয়েছে। চিকিৎসাটা তো ঠিকমতো উনি নিচ্ছেন। আমরা চিকিৎসা যন্ত্রপাতির ট্যাক্স সুবিধা করে দেই। যার কারণে বড় বড় হাসপাতালগুলো, সেই অ্যাপোলো বলেন, স্কয়ার বলেন—যত হাসপাতাল কিন্তু আমাদের সময়ে নির্মাণ শুরু হয়। আজকে সেসব হাসপাতালে চিকিৎসাও নেয়, আবার বলে আওয়ামী লীগ কিছুই করেনি।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপির চরিত্রটাই হচ্ছে—যত কাজ করবেন মানুষের কাছে হেয়প্রতিপন্ন করা। ভাঙা রেকর্ডের মতো বলে যাচ্ছে এই সরকার কিছুই করেনি।’ তাহলে এসব রাস্তাঘাট, এত উন্নয়ন, খাদ্যের অভাব নেই, ১২ মাস সব খাবার পাচ্ছেন—এসব খেতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু বদনাম করার সময় গাল ভরে বলে যায়। খেয়ে দেয়ে নাদুস-নুদুস হয়ে মাইক একখান লাগিয়ে আমাদের বিরুদ্ধে সারা দিন কথা বলেই যাচ্ছে। জানি না এত মিথ্যা কথা কোত্থেকে তাদের আসে।’