বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা ক্ষমতাকে জনগণের সেবা করার সুযোগ হিসাবে দেখি। অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকায় দেশের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। বৃহস্পতিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে নয় বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং এক প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২৩’ প্রদান অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। জাতীয় পর্যায়ে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাদের সর্বোচ্চ বেসামরিক এ পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া বারবার বাধাগ্রস্ত হয় এবং স্থিতিশীলতার অভাবে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দেশে খুব একটা অগ্রগতি হয়নি।’
দেশের সার্বিক উন্নয়নে তার সরকারের সময়োপযোগী ও সুপরিকল্পিত পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। ওই মর্যাদা অক্ষুণ্ন রেখে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। সুনির্দিষ্ট ও দূরদর্শী পরিকল্পনা নিয়েই সবকিছু করেছি। আমরা এডহক ভিত্তিতে কিছুই করিনি। পরিকল্পনার ক্ষেত্রে আমরা সব সময় দেশের জনগণের কল্যাণকে প্রাধান্য দেই।’
স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন-মুক্তিযুদ্ধ ক্যাটাগরিতে বীর মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শামসুল আলম, প্রয়াত লেফটেন্যান্ট এজি মোহাম্মদ খুরশীদ (মরণোত্তর), শহীদ খাজা নিজামউদ্দিন ভূঁইয়া (মরণোত্তর) ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী (মায়া) বীর বিক্রম।
সাহিত্য ক্যাটাগরিতে-প্রয়াত ড. মোহাম্মদ মাইনুদ্দিন আহমেদ (সেলিম আল দীন) (মরণোত্তর); ‘সাংস্কৃতিক’ ও ‘ক্রীড়া’ ক্যাটাগরিতে যথাক্রমে পবিত্র মোহন দে ও এএসএম রকিবুল হাসান পুরস্কার পেয়েছেন। ‘সমাজ সেবা/জনসেবা’ বিভাগে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর এবং ‘গবেষণা ও প্রশিক্ষণ’ ক্যাটাগরিতে বেগম নাদিরা জাহান (সুরমা জাহিদ) ও ড. ফেরদৌসী কাদরী পুরস্কার পেয়েছেন। এর আগে ৯ মার্চ স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে স্বর্ণপদক, সার্টিফিকেট এবং সম্মানি চেক প্রদান করা হয়েছে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা এবং পুরস্কার প্রাপ্তদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন। পুরস্কার প্রাপ্তদের মধ্যে অনুষ্ঠানে ড. ফেরদৌসী কাদরী অনুভূতি ব্যক্ত করেন।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন-‘আমরা খেলাধুলা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, অর্থনীতি এবং অন্যান্যে প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু করছি।’
তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা লাভের পর সরকার এখন ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ পরিণত করতে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সরকার একটি দীর্ঘমেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ গ্রহণ করেছে, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অন্যের ওপর নির্ভর না করে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে উন্নত ও সম্মানজনক জীবন কাটাতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দারিদ্র্য ৪০ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছে ও মাথাপিছু আয় বাড়িয়েছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছে এবং প্রত্যেক গৃহহীন ও ভূমিহীন মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি দিচ্ছে। জনগণের দোরগোড়ায় সঠিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিচ্ছে এবং প্রতিটি খাতে অগ্রগতির লক্ষ্যে গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে-যার মধ্যে কৃষি, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দরিদ্রদের জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘সরকার পারিবারিক কার্ডের মাধ্যমে এক কোটি মানুষকে প্রতি কেজি ৩০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে চাল দিচ্ছে। এছাড়া আরও ৫০ লাখ মানুষকে ১৫ টাকা কেজি দরে চাল দিচ্ছে, যাতে মানুষ কষ্ট না পায়। চাল দেওয়ার পাশাপাশি রমজান মাসে (দরিদ্রদের জন্য ভর্তুকি মূল্যে) ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও ছোলাসহ আরও কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশকে মাত্র ৩ বছর ৭ মাসের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশে পরিণত করেছিলেন। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ হবে তলাবিহীন ঝুড়ি-মুক্তিযুদ্ধকে সমর্থন করেনি এমন অনেক দেশের এই ধারণাকে জাতির পিতা মিথ্যা প্রমাণ করেন।