বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জমির মালিকানা সংক্রান্ত সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যার অবসান এবং ঝামেলামুক্ত সেবা নিশ্চিত করতে ভূমি ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে রূপান্তর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন।

গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র (বিআইসিসি)-তে দেশের প্রথম তিন দিনব্যাপী জাতীয় ভূমি সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘ভূমির মালিকানা সুনির্দিষ্ট করার জন্য ভূমি বণ্টন ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করতে হবে এবং এর ফলে পারিবারিক ও সামাজিক সমস্যার সমাধান হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমাজে এটা খুবই সাধারণ ঘটনা যে ভাইবোন উভয়েই একে অপরকে পৈতৃক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে-যার ফলে হামলা, হত্যা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। যদি একটি সঠিক ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা যায়, তাহলে সমস্যার সমাধান হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশে-বিদেশে অবস্থানরত সব মানুষের জমির মালিকানা রক্ষার ব্যবস্থা নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘আপনি দেশে এবং বিদেশে যেখানেই থাকুন না কেন- আপনার (দেশবাসী) সম্পত্তি আপনারই থাকবে। আমরা আপনার অধিকার সুরক্ষিত ও সুরক্ষার জন্য ব্যবস্থা নিয়েছি।’

জমিসংক্রান্ত পরিষেবা পাওয়ার সময় জনগণকে কিছুতেই ঝামেলার সম্মুখীন করা যাবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা একটি ডিজিটাল ল্যান্ড সিস্টেম তৈরি করছি বলে সমস্যাটি আর থাকবে না।’

একই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সাতটি উদ্ভাবনী উদ্যোগেরও সূচনা করেন। এগুলো হলো- লক্ষ্মীপুরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্মৃতিস্তম্ভ এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গুচ্ছগ্রাম কমপ্লেক্স, রেজিস্ট্রেশন-মিউটেশন ইন্টারকানেকশন, স্মার্ট ল্যান্ড ম্যাপ, স্মার্ট ল্যান্ড রেকর্ডস, স্মার্ট ল্যান্ড পিডিয়া, স্মার্ট ল্যান্ড। সারা দেশে ৪০০ উপজেলায় সার্ভিস সেন্টার ও আধুনিক ভূমি অফিস। তিনি বলেন, ‘আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সাতটি উদ্যোগের প্রতিটি একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।’ প্রধানমন্ত্রী জনগণকে ঝামেলামুক্ত ও দ্রুত ভূমি সংক্রান্ত সেবা দিতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার আহ্বান জানান।

ভূমি মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক এবং আইন সচিব মো: গোলাম সারওয়ার। ভূমি সচিব মো: মুস্তাফিজুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। রাজবাড়ি সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) নূরজাহান আখতার সাথী সহকারী কমিশনারদের পক্ষ থেকে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে ভূমি মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হয়। সম্মেলনের উদ্দেশ্য একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে ভূমি মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা তুলে ধরা ও ভূমি সেবার ডিজিটালইজেশনের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জগুলো খুঁজে বের করা।

জাতীয় ভূমি সম্মেলনের অন্যান্য উদ্দেশ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে নাগরিক, সরকারি সংস্থা ও স্টেকহোল্ডারদের অবহিত করা, ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তাদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং ভূমি সংক্রান্ত বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান সম্পর্কে ধারণা প্রদান।

একটি আধুনিক, সময়োপযোগী ও ডিজিটাইজড ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য তার সরকারের পদক্ষেপের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার অনলাইন ভূমি নামজারি এবং কিউআর কোডসহ ডিসিআর ও ভূমি কর প্রদান ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। তিনি বলেন, দেশবাসী ১৬১২২ নম্বরে কল করে এবং ষধহফ.মড়া.নফ সার্চ করে বিশ্বের যেকোনো স্থান থেকে নামজারি, খতিয়ান ও ভূমি উন্নয়ন কর প্রদানসহ ভূমি সংক্রান্ত সেবা পেতে পারেন। শেখ হাসিনা বলেন, ভূমি অফিসগুলো এ পর্যন্ত ১৩ লাখের বেশি ফোন কল পেয়েছে- যার মধ্যে ৬৮০০টি কল বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তিদের কাছ থেকে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, যে কেউ তার জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) ব্যবহার করে অনুসন্ধান করে তার জমির অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই ব্যবস্থা চালু করার ফলে জনগণ দ্রুততম সময়ে জমি সংক্রান্ত সেবা পাচ্ছে। ভূমি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার সম্পূর্ণ ডিজিটাইজেশন শিগগিরই শেষ করা হবে। তিনি আরো বলেন, আধুনিক ব্যবস্থা প্রবর্তনের ফলে ভূমি সংক্রান্ত সেবা থেকে রাজস্ব আদায় বেড়েছে এবং এ খাত থেকে এ পর্যন্ত ৭৭০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী ‘ডেভেলপিং ট্রান্সপারেন্ট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবল পাবলিক ইনস্টিটিউশনস’ ক্যাটাগরিতে মর্যাদাপূর্ণ ‘ইউনাইটেড নেশনস পাবলিক সার্ভিস অ্যাওয়ার্ড-২০২০’ অর্জনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় এবং ওয়ার্ল্ড সামিট অন দ্য ইনফরমেশন সোসাইটি (ডব্লিউএসআইএস) অ্যাওয়ার্ড ২০২২ অর্জনের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ ডিজিটাল ল্যান্ড (ডেভেলপমেন্ট) ট্যাক্স সিস্টেমকে ধন্যবাদ জানান।

প্রধানমন্ত্রী
Comments (0)
Add Comment