বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : নির্ধারিত দরে না পেয়ে অনেক ব্যাংক এখন ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার কিনছে। এ কারণে বিক্রিও করছে ঘোষণার বেশি দরে। এ ধরনের ১২টি ব্যাংক চিহ্নিত করে এসব ব্যাংকের এমডিকে নিয়ে আজ রোববার বৈঠকে বসছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।
জানা গেছে, ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনাবেচা করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। আজ বৈঠকে বিষয়টি জানানো হবে। বাড়তি দরে ডলার বেচাকেনার বিষয়ে বৈঠকের আগে সব ব্যাংকের এমডিকে নিয়ে ব্যাংকার্স সভা অনুষ্ঠিত হবে। ডলার বেচাকেনার বিষয়ে আলাদা বৈঠকে রাষ্ট্রীয় মালিকানার দুটি এবং বেসরকারি খাতের ১০টি ব্যাংকের এমডিকে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। এসব ব্যাংকের এমডিকে বাড়তি দরে ডলার বেচাকেনার কারণ জানাতে বলা হবে। এ বিষয়ে তাঁদের সতর্ক করা হতে পারে। পরবর্তী সময়ে পুনরাবৃত্তি হলে জরিমানা করা হতে পারে।
আজকের বৈঠকে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে– এমন একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সমকালকে বলেন, কৃত্রিমভাবে দর নিয়ন্ত্রণের চেষ্টার ফলে বাধ্য হয়ে কোনো কোনো ব্যাংক ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার বেচাকেনা করছে। এভাবে দর নিয়ন্ত্রণ না করে বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে আর সমস্যা থাকবে না। তিনি বলেন, বাড়তি দরে ডলার বেচাকেনা করে কোনো ব্যাংক বেশি লাভ করছে, তেমন নয়। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে অনেকটা বাধ্য হয়ে তাদের এমন করতে হচ্ছে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক যদি মনে করে ডলারের দর ১০৭ টাকা হওয়া উচিত, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিক। তা না করে ব্যাংকারদের ঘোষণা দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। আবার রেমিট্যান্স, রপ্তানি, বাংলাদেশ ব্যাংকের বিক্রি, আমদানি ও নগদ ডলারে ভিন্ন দর দেওয়া হচ্ছে। বিশ্বের কোনো দেশে এ রকম আছে কিনা সন্দেহ তাঁর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে সংকটের বিষয়টি ঠিক। তবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকায় ডলার বিক্রি কমানো হয়েছে। তাই বলে এক রকম দর ঘোষণা করে আরেক দরে বেচাকেনা আইনসিদ্ধ নয়। আবার ঘোষণার অতিরিক্ত দর যে প্রক্রিয়ায় পরিশোধ করা হচ্ছে, তা মানিলন্ডারিং আইনে অপরাধ। যে কারণে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক করতে এ বৈঠক ডাকা হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে আমদানি দায় মেটাতে প্রতি ডলারে ২৫ শতাংশের মতো বেড়ে ১০৭ থেকে ১০৮ টাকায় উঠেছে। দর নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত ১ হাজার কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করেছে। গত অর্থবছর বিক্রি করা হয় ৬৬২ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ৩১ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মধ্যস্থতায় গত বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে সব পর্যায়ে ডলারের সর্বোচ্চ দর বেঁধে দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। তবে অনেক ব্যাংক নির্ধারিত দর মানছে না।
ঘোষণার চেয়ে বেশি দরে ডলার কেনার বিষয়ে গত ২৭ মার্চ ‘ব্যাংকেই ডলারের কালোবাজার’ শিরোনামে সমকালে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত রিপোর্টের আলোকে বাড়তি দরে ডলার কেনাবেচায় যুক্ত ১২ ব্যাংকের বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক। গভর্নর এসব ব্যাংকের লেনদেন তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানান তিনি। সমকালের ওই প্রতিবেদনে উঠে আসে, সব ব্যাংক সর্বোচ্চ ১০৭ টাকায় রেমিট্যান্স কেনার ঘোষণা দিলেও কোনো কোনো ব্যাংক ১১৩ টাকা পর্যন্ত দরে কিনছে। বাড়তি দরে ডলার কেনায় সরকারি মালিকানার দুটিসহ অন্তত ১২টি ব্যাংক যুক্ত। এভাবে কেনা ডলার আমদানিকারকের কাছে ১১৪ থেকে ১১৫ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি করছে। ঘোষণার অতিরিক্ত অর্থ ব্যাংক অন্যান্য খাতে আয় কিংবা ব্যয় হিসেবে দেখাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে লেনদেন হচ্ছে।