নিজস্ব প্রতিনিধি : আপনারা সকলেই অবগত আছেন যে, সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃতু ̈ ও দীর্ঘমেয়াদী পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেইফটি ২০১৮’- এর তথ ̈মতে, বিশ্বে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় (রোড (রোড ক্রাশ) প্রায় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের মৃতু ̈ হয়। এছাড়াও ২০-৫০ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয় বা পঙ্গুত্বের শিকার হয়। সড়ক দুর্ঘটনা (রোড ক্রাশ) ৫-২৯ বছর এবং আরও কমবয়সী শিশুদের জন্ম-মৃত্যুর ১ নম্বর কারণ এবং সকল বয়সের মানুষের ক্ষেত্রে ৮ম প্রধান কারণ। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয় যে, বিশ্বব্যাপী শতকরা ৯০ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনা (রোড ক্রাশ) ঘটে নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশসমূহে যার সংখ্যা উন্নত দেশসমূহের তুলনায় তিনগুণ বেশী।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশসমূহের মধ্যেও সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের চিত্র অনেকটা একই রকম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে বাংলাদেশে প্রতিবছর
সড়ক দুর্ঘটনায় (রোড ক্রাশ) প্রায় ২৫ হাজার মানুষ নিহত হয়। বাংলাদেশ পুলিশের তথ ̈মতে ২০২২ সালে দেশে ৫২০০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৩৮ জন নিহত হয়েছে। আমরা জানি যে দেশে প্রতিদিনই কম-বেশি সড়ক দুর্ঘটনা (রোড ক্রাশ) ঘটে থাকে। এছাড়াও প্রতিবছর ঈদকে কেন্দ্র করে রাস্তায় মানুষ ও যানবাহনের চলাচল বেড়ে যায়। সঙ্গত কারণেই বেড়ে যায় সড়ক দুর্ঘটনা (রোড ক্রাশ) যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে (প্রিন্ট, ইলেকটধনিক মিডিয়া ইত্যাদি) প্রকাশিত সংবাদের মাধ ̈মে আমরা জানতে পারি। মূলত সড়ক ব ̈বহারকারীগণের অসচেতনতা ও অবহেলাই এসকল সড়ক দুর্ঘটনার (রোড ক্রাশ) অন ̈তম কারণ।
সড়ক ব্যবহারকারীগণের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ ̈মে সড়ক দুর্ঘটনাকে (রোড ক্রাশ) সহনীয় মাত্রায় রাখার মহৎ উদ্দেশ ̈ নিয়ে রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ- নানামুখী সচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। যার মাধ্যমে সাধারণ পথচারী, যাত্রী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানসমূহকে (বিআরটিএ, মহানগর পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, পরিবহন মালিক সমিতি, পরিবহন শ্রমিক সমিতি) সাথে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানো হবে।
সড়ক ব্যবহারকারীগণের সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সড়ককে অধিকতর নিরাপদ করার লক্ষে ̈ রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নিম্নে বিষয়সমূহ কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণের জন ̈ সরকারের প্রতি জোর দাবী জানাচ্ছি: সড়ক নিরাপত্তা (রোড সেইফটি) সংশ্লিষ্ট সকল বিষয়ের সমন্বয়ে বর্তমান আইনে একটি পৃথক অধ্যায় সংযোজন করা; অথবা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পাঁচটি পিলার বা “সেইফ সিস্টেমস এপ্রোচ” (নিরাপদ সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ সড়ক, নিরাপদ মোটরযান, নিরাপদ সড়ক ব ̈বহারকারী, এবং রোড ক্রাশ পরবর্তী কার্যকর ব্যবস্থাপনা) পদ্ধতিতে একটি পৃথক সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়ণ করা।
আমরা আশাবাদি যে, সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে সড়ক শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। আমরা আরও আশা করি সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাসমূহের পাশাপাশি রোড সেইফটি কোয়ালিশন বাংলাদেশ- এর সম্মিলিত উদ্যোগ ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টার মাধ ̈মে দেশের সড়ক দুর্ঘটনা হ্রাস পাবে এবং দুর্ঘটনা জনিত অর্থনৈতিক ক্ষতি কমানোর পথ সুগম হবে। যা বাংলাদেশকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে এসডিজির ধারা ৩.৬ এবং ১১.২ এর লক্ষ ̈মাত্রা অর্জনের পথে।
আজ ১৭ এপ্রিল রোজ সোমবার রাজধানীর গুলশান-১ টধাফিক সিগনালে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর- এর ছুটির সময় “নিরাপদে রাস্তায় চলাচল বিষয়ে মাসব্যাপী জনসচেতনতা অভিযান” এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব জনাব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান জনাব নুর মোহাম্মদ মজুমদার। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী তার বক্তবে বলেন সড়কে নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরী। এটা নিশ্চিত করার জন ̈ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথি বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন আমাদের সকলের সড়ক পরিবহন আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, অন্যথায় আইনের যথাযথ প্রয়োগ বাস্তবায়ন সম্ভব হবেনা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব: ইলিয়াস কাঞ্চন, চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত অনন্যানরা হলেন: শরিফুল আলম, কান্টিধ কোঅর্ডিনেটর, গ্লোবাল হেলথ এডভোকেসি ইনকিউবেটর (জিএইচএআই) এম খালিদ মাহমুদ, পোগ্রাম ম্যানেজার, সড়ক নিরাপত্তা কর্মসূচি, ব্র্যাক ডা: মাহফুজুর রহমান ভূঁঞা, প্রকল্প পরিচালক (রোড সেইফটি), ন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইন্সটিটিউট কাজী বোরহান উদ্দিন, ম্যানেজার, রোড সেইফটি প্রকল্প, আরটিআই প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ ইউনিট, সিআইপিআরবি ইমাম জাফর সিকদার, পরিচালক, যুব ও সেচ্ছাসেবক বিভাগ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি হীরেন পন্ডিত, প্রকল্প সমন্বয়কারী ও রিসার্চ ফেলো, বাংলাদেশ এনজিওস নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন (বিএনএনআরসি) এস এম সোহেল মাহমুদ, সহযোগী অধ্যাপক, এআরআই, বুয়েট শারমিন রহমান, প্রকল্প সমন্বয়কারী, হেলথ সেক্টর, ঢাকা আহসানিয়া মিশন খন্দকার হাসিবুজ্জামান, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, ইমপ্রেসিভ কমিউনিকেশন লিমিটেড (আইসিএল) ও বাংলাদেশ অর্থোপেডিক সোসাইটির সদস ̈ সহ কোয়ালিশনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।