স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতি দেবে সরকার

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বিভিন্ন অসঙ্গতি ও দুর্নীতির বিপরীতে ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন আনতে স্বেচ্ছাসেবাকে কাজে লাগাতে চায় সরকার। স্বেচ্ছাসেবকদের স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি দিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচিতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। উন্নয়ন কাজ ত্বরান্বিত করতে এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে এই ব্যবস্থা ভূমিকা রাখবে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালার খসড়া প্রণয়ন করেছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামরুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের স্বেচ্ছাসেবা রয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বেচ্ছাসেবার প্রয়োজন অনুভব করে ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর ১৯৭৩ সালে স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে সরকারিভাবে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কমিটি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই অনন্য উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবার রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে এর কোনও স্ট্রাকচার্ড রূপ নেই। নগর স্বেচ্ছাসেবক রয়েছে। আমরা এখন বন্যা স্বেচ্ছাসেবক করতে চাচ্ছি। এছাড়া অন্যান্য দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবক করতে চাচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘নীতিমালা করে স্বেচ্ছাসেবার একটি কাঠামো দাঁড় করাতে চাচ্ছি। যারা স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে থাকেন, তাদের একটি রি-কগনিশন রিওয়ার্ড দেওয়া— এসব বিষয় সামনে রেখে নীতিমালা করা হচ্ছে। সরকারের মেকানিজমের মধ্যে তাদের একটা ব্যবস্থায় নিয়ে আসা, যাতে করে তাদের জনকল্যাণে ব্যবহার করা যায়।’

নীতিমালার উদ্দেশ্য

স্বেচ্ছাসেবার মূল চেতনার উন্নয়ন ও জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় স্বেচ্ছাসেবাকে সুদৃঢ় করা। শোভন কাজের চর্চা এবং কমিউনিটির জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরি করা। স্বেচ্ছাসেবক নির্বাচন, অন্তর্ভুক্তি, প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, দায়িত্ব প্রদান, তত্ত্বাবধান, অবস্থান ও প্রস্থান পরিকল্পনা চিহ্নিত করে একটি কার্যকরী স্বেচ্ছাসেবক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রণয়ন করা। স্বেচ্ছাসেবকদের মাধ্যমে জনগণের সম্পৃক্ততা ও দায়িত্ব বৃদ্ধি করা। যেকোনও দুর্যোগে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাসেবকদের সদাপ্রস্তুত রাখা এবং উৎসাহ প্রদান করা। সমন্বিত পদ্ধতিতে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রম নিরাপদ, মার্যাদাপূর্ণ ও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য উন্মুক্ত পরিবেশ তৈরি করা। স্বেচ্ছাসেবার মাধ্যমে অন্তর্ভুক্তি, সামাজিক সম্প্রীতি, জেন্ডার সমতা, সংহতি ও সহনশীলতার প্রসার। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের অবদানকে স্বীকৃতি প্রদান।

প্রস্তাবনা

নীতিমালার প্রস্তাবনায় বলা হয়, সমাজ ও দেশের স্বার্থে স্বেচ্ছাসেবকরা যেকোনও দুর্যোগ মোকাবিলায় দ্রুত সাড়াদানকারী হিসেবে অংশ নেন। দেশের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই মানবিক উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সংযুক্তি এবং অবদান উল্লেখযোগ্যভাবে দৃশ্যমান।

সংবিধানের ১৫ ও ১৯(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, রাষ্ট্রের সব নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজন পূরণ ও সবার জন্য সমসুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সব সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাংলাদেশের সুদীর্ঘ ঐতিহ্য এবং সমাজ-সংস্কৃতিতে স্বেচ্ছাসেবার চর্চা রয়েছে। দেশের সব ইতিবাচক সামাজিক পরিবর্তন ও উন্নয়নের ধারাকে ত্বরান্বিত করার জন্য সমন্বিত কৌশল হিসেবে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমকে আরও সুবিন্যস্ত, কার্যকর ও যুগোপযোগী করার জন্য জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।

দুর্নীতি প্রতিরোধ, সেবা খাতে আইনের প্রয়োগ

নীতিমালার ভূমিকায় বলা হয়েছে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে ১৯৭৩ সালে স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে সরকারিভাবে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) প্রতিষ্ঠা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই অনন্য উদ্যোগের ধারাবাহিকতায় দুর্যোগ মোকাবিলায় স্বেচ্ছাসেবার রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ বহির্বিশ্বে পরিচিতি পেয়েছে।

২০১৮ সালের সরকারের নির্বাচনি ইশতেহারে দক্ষ ও জনমুখী সরকার, নিরাপত্তা, দুর্নীতি প্রতিরোধ, সেবা খাত এবং আইনের সুষম প্রয়োগের মাধ্যমে সবার জন্য উন্নয়ন নিশ্চিত করার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে কর্মসূচি বাস্তবায়নসহ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রমে স্বেচ্ছাসেবার অন্তর্ভুক্তি, সমন্বয় ও বিকাশ সর্বোপরি প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমকে কাঠামোবদ্ধ ও পদ্ধতিগত রূপদান করা সম্ভব হবে।

স্বেচ্ছাসেবকরা দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ও সেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছেন। জাতীয় উন্নয়নে স্বেচ্ছাসেবকদের অবদানের বিষয়ে তথ্যভাণ্ডার তৈরি, স্বেচ্ছাসেবকদের সংগঠিত করা, কার্যক্রম পরিচালনায় সক্ষমতা বৃদ্ধি ও দক্ষতা বজায় রাখা, সুরক্ষা এবং স্বীকৃতির জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রয়োজন।

উন্নয়ন পরিকল্পনা ও স্বেচ্ছাসেবা

স্বেচ্ছাসেবা বিকাশের ক্ষেত্রে অধিকারভিত্তিক অ্যাপ্রোচ, জেন্ডার সমতা, অন্তর্ভুক্তি এবং সক্ষমতা উন্নয়নে সামাজিক ও প্রাতিষ্ঠানিক সম্পৃক্ততার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট, সরকারের দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন লক্ষ্য, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১-২০৪১, রূপকল্প ২০৪১ এবং বাংলাদেশ বদ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর লক্ষ্য অর্জনে স্বেচ্ছাসেবার ভূমিকা অত্যন্ত সহায়ক।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও স্বেচ্ছাসেবা

স্বেচ্ছাসেবাকে জাতীয় উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত করা নীতিমালার মূল লক্ষ্য—আর্থসামাজিক এবং সামগ্রিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখা, স্বেচ্ছাসেবা কার্যক্রমে অনানুষ্ঠানিক স্বেচ্ছাসেবী এবং নিবন্ধিত সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সক্রিয় অংশগ্রহণকে উৎসাহিত করা।

স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতি

নীতিমালায় বলা হয়, সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, বেসরকারি সংস্থা (দেশীয় ও আন্তর্জাতিক), উন্নয়ন সহযোগী, করপোরেট সেক্টর এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো ধর্ম, বর্ণ, গোত্র, জেন্ডার নির্বিশেষে স্বেচ্ছাসেবকদের বহুমাত্রিক অবদান ও কর্মপ্রবাহের স্বীকৃতি নিশ্চিত করবে।

উন্নয়ন কার্যক্রমে সংযুক্তির ক্ষেত্রে শারীরিক, আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক বাধা নিরসন করে স্বেচ্ছাসেবকদের নিযুক্তির সম্ভাবনার বিষয়টিকে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। জাতীয় জীবনে স্বেচ্ছাসেবার প্রসারের জন্য সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে বেসরকারি সংস্থাগুলো সরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবে। এ লক্ষ্যে সরকার সহায়তা দেবে। যেসব সহায়তা দেবে তার মধ্যে রয়েছে— জাতীয় পরিষেবা খাতের জিডিপিতে স্বেচ্ছাসেবার অবদানের পরিমাপ ও স্বীকৃতির প্রতিফলনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। স্থানীয় থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্বেচ্ছাসেবকদের স্বীকৃতি দেওয়া হবে।

বিভাগ, জেলা, সিটি করপোরেশন, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবা উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটি স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত জনকল্যাণের জন্য শোভন স্বেচ্ছাসেবার স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য মনোনীত স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা প্রণয়ন ও সুপারিশ করবে। জাতীয় স্বেচ্ছাসেবা উন্নয়ন কাউন্সিল মাঠ পর্যায়ের সুপারিশ পর্যালোচনা করে জাতীয়ভাবে স্বীকৃতির জন্য স্বেচ্ছাসেবকদের তালিকা অনুমোদন করবে।

দেশব্যাপী স্বেচ্ছাসেবার প্রসার ও স্বেচ্ছাসেবকদের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য প্রতি বছর ৫ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবা দিবস উদ্‌যাপনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এ লক্ষ্যে স্থানীয় পর্যায় থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সমন্বয় করবে।

স্বেচ্ছাসেবক
Comments (0)
Add Comment