বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : কিছু দিন আগেও নিত্য ব্যবহৃত ব্যাগের বিদেশ নির্ভরতা থাকলেও এখন দেশেই তৈরি হচ্ছে উন্নতমানের ব্যাকপ্যাক, ট্রলি, স্পোর্টস ব্যাগ, হাত ব্যাগ, এক্সিকিউটিভ ব্যাগসহ কাপড়ের তৈরি নানা ধরনের ব্যাগ। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও যাচ্ছে এসব ব্যাগ। বিদেশে গেলে ফ্যাশনেবল, নামি ব্র্যান্ডের লাখ টাকার ব্যাগ যারা সংগ্রহ করেন, তাদের ক্লোজেটে এখন দেশি ব্যাগও জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। কাপড়, পাট, উন্নতমানের চামড়া ব্যবহার করে তৈরি এসব ব্যাগ ধীরে ধীরে হলেও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে হয়ে উঠছে সম্ভাবনাময়। খাত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বাংলাদেশে এখন দেশি-বিদেশি মিলিয়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এসব ব্যাগ তৈরি করছে। রফতানি উপযোগী করে তারা বিদেশের বাজার ধরতে সক্ষম হয়েছেন। এখন দেশের মানুষ যেন তাদের কাজকে মূল্যায়ন করেন সেই দাবি তাদের।
এই যে নিত্য নতুন করে পাটজাত, চামড়া বা কাপড়ের ব্যাগ তৈরি হচ্ছে, সেসবের সঙ্গে নানা গল্পও জড়িয়ে আছে। এমনই একটা প্রতিষ্ঠানের গল্প বললেন উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার কাজী মনির হোসেন। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর কয়েকজন ভলান্টিয়ার সেখানে উদ্ধার কাজে যোগ দেন। উদ্ধার কাজ শেষে আহত শ্রমিকদের পুনর্বাসনের জন্য তারা খুব ছোট একটা কারখানা শুরু করেন ‘অপরাজেয়’ নামে। শুরু থেকেই তাদের পণ্য ছিল পাটের ব্যাগ। ‘নারীপক্ষ’ নামে একটি এনজিও’র জন্য ৫০টি পাটের ব্যাগ তৈরির মাধ্যমে শুরু হয় অপরাজেয়-এর পথচলা। বর্তমানে অপরাজেয় লিমিটেড শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পাটের তৈরি ব্যাগ, হোগলা, শনের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিশ্বের ২৬টি দেশে সরাসরি রফতানি করছে। বর্তমানে দুটি প্রোডাকশন ইউনিটে তাদের স্থায়ী শ্রমিক সংখ্যা ২৩০ জন। এর বাইরেও হ্যান্ডমেইড পণ্য তৈরির জন্য শেরপুর, রংপুর, নোয়াখালী, বগুড়ায় আমাদের সঙ্গে কাজ করছেন প্রায় ৩৫০ জন নারী, জানান কাজী মনির হোসেন।
এখানেই শেষ নয়। তিনি জানান, দেশীয় বাজারে পাটের তৈরি ব্যাগের চাহিদার কথা মাথায় রেখে তারা শুরু করেন ‘কালিন্দি’ নামের একটি দেশীয় ব্রান্ড। কাজী মনির হোসেন বলেন, ‘কালিন্দির সব পণ্য তৈরি হয় আমাদের রফতানি কারখানার অতিরিক্ত কাঁচামাল থেকে। কালিন্দির ব্যাগ তৈরির জন্য শতকরা ৭৫ ভাগ লেফটওভার কাঁচামাল ব্যবহার করা হয়।’ পাটপণ্যের বাজারের চাহিদার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাটপণ্যের প্রতি আমাদের এক রকম আবেগ আছে। কিন্তু দেশে মানসম্পন্ন পাটপণ্যের উৎপাদন ও বাজারজাতের ঘাটতি রয়েছে। কালিন্দি চেষ্টা করছে সহনীয় দামে মানসম্পন্ন পাটপণ্য ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে।’
ব্যাগের বাজারে আরেকটি জনপ্রিয় নাম গুটি পা। একসময় পেশায় সাংবাদিক তাসলিমা মিজি এগিয়ে চলেছেন তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে। বিদেশে গিয়ে যে চামড়ার ব্যাগ কিনতে ক্রেতা শত শত ডলার খরচ করেন, সেই মানের ব্যাগ প্রায় অর্ধেকের কম মূল্যে হাতে তুলে দেওয়ার সামর্থ্য রাখে গুটি পা। তাসলিমা মিজি বলেন, ‘আমাদের শক্তির জায়গা এক্সপোর্ট। বিদেশের মার্কেটে সেল হতো বলেই আমরা করোনাকালের ঝক্কি সামলে টিকে গেছি। কিন্তু আমাদের ভোক্তা ও ক্রেতারা এখনও আমদানি মার্কেটের ওপর নির্ভরশীল।’ তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি আমাদের আত্মমর্যাদা বোধের জায়গা তৈরি হওয়া জরুরি। আমার বাস্তবজ্ঞান থাকলে দেশের ব্র্যান্ডকে সাপোর্ট করা উচিত। এতদিন বলা হতো আমাদের জিনিস ট্রেন্ডি না, ফ্যাশনেবল না। আমরা সেদিকে মনোযোগ দিয়েছি এবং সেই অভিযোগ এখন সত্য না। ক্রেতা কীভাবে কোয়ালিটি নিয়ে স্বস্তিবোধ করবেন, আমরা সেটা নিশ্চিত করতে চেয়েছি। এখন ক্রেতাদের এগিয়ে আসতে হবে। শেষ বিচারে অর্থ রিটার্ন না এলে আমরা টিকে থাকতে পারবো না। আমার আহ্বান, আমরা কী করছি, আমাদের দিকে দেখুন, দেশি পণ্য কিনুন।’
আমাদের দেশের আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান নানা ধরনের ব্যাগ তৈরি করছে। দেশীয় চামড়া দিয়ে তৈরি এসব ব্যাগ মানসম্পন্ন ও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। ব্যাগের ধরন ও নকশায়ও আছে বৈচিত্র্য। ক্লাচ, পার্স, ক্রস বডি ব্যাগ, লেদারের কার্ড কেস, পেনসিল পাউচ, কয়েন পাউচ, ছেলে ও মেয়েদের মানিব্যাগ কী নেই বাজারে। বাজারে ফ্যাশনের দিক থেকে নজর কেড়েছে রেনে। গ্রাহকের চাহিদা মাথায় রেখে তারা কেবল দেশের উপযোগী ব্যাগ তৈরি করছেন তা নয়, রফতানিও করছেন। এই ব্যাগগুলো নিজস্ব কারখানাতেই তৈরি হয়।