২০৩০ সাল নাগাদ ৩০% গাড়ি বিদ্যুতে চালানোর লক্ষ্য

বিডি২৪ভিউজ ডেস্ক : বর্তমানে সারা দেশে নিবন্ধিত মোটরযান আছে প্রায় ৫৭ লাখ। এসব যানবাহন চালানোর জন্য ব্যবহার হয় তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি। যানবাহনে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। এর বদলে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বিদ্যুচ্চালিত যানবাহনে। দেশের সড়ক পরিবহন খাতে ব্যবহূত মোটরযানের অন্তত ৩০ শতাংশ ২০৩০ সালের মধ্যে বিদ্যুচ্চালিত হিসেবে রূপান্তরের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল নীতিমালা-২০২৩’।

বাংলাদেশে স্থানীয়ভাবে বিদ্যুচ্চালিত মোটরযান উৎপাদন ও আমদানি—দুটিকেই উৎসাহিত করতে প্রণোদনা দেয়ার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে নীতিমালায়। এরই মধ্যে এ বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অবহিত করার কথাও জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা। আর বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন ‘স্ক্র্যাপ’ করে সেগুলোর বদলে বিদ্যুচ্চালিত মোটরযান নিবন্ধনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

দেশে বিদ্যুচ্চালিত মোটরযান নিবন্ধন দেয়া শুরু করেছে বিআরটিএ। সংস্থাটির চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার গতকাল বণিক বার্তাকে জানিয়েছেন, তারা কয়েকটি বিদ্যুচ্চালিত মোটরযান নিবন্ধন দিয়েছেন। তবে তাত্ক্ষণিকভাবে নিবন্ধিত বিদ্যুচ্চালিত মোটরযানের সংখ্যা তিনি জানাতে পারেননি।

অন্যদিকে বিদ্যুচ্চালিত বাস আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন কোম্পানি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। সংস্থাটি ভারত থেকে প্রাথমিকভাবে ১০০টি বিদ্যুচ্চালিত বাস আমদানি করবে। শুরুতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে এসব বাস চালানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে।

‘এক বা একাধিক মোটরের সাহায্যে চালিত মোটরযান, যার চালিকাশক্তি বৈদ্যুতিক চার্জ বা সংযুক্ত ব্যাটারি’ এ ধরনের যানবাহনকে ‘ইলেকট্রিক মোটরযান’ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে নীতিমালায়। গণপরিবহন হিসেবে এসব মোটরযান পরিচালনার জন্য বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন ও রুট পারমিট নিতে হবে। সময়ে সময়ে হালনাগাদ করতে হবে ফিটনেস সনদ। ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইন ও ২০২২ সালের সড়ক পরিবহন বিধিমালা বিদ্যুচ্চালিত মোটরযানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। ইলেকট্রিক মোটরযানের লাইফটাইম কত হবে, তা সরকার নির্ধারণ করে দেবে। লাইফটাইম শেষ হলে সেই মোটরযানের নিবন্ধন বাতিল ও স্ক্র্যাপ করা হবে।

বাংলাদেশ থেকে পর্যায়ক্রমে জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত যানবাহন ‘ফেইজ আউট’ বা স্ক্র্যাপ করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন বিআরটিএর চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার। এসব যানবাহনের স্থলে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নিবন্ধন দেয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমরা মোটরযান ফেইজ আউট বা স্ক্র্যাপ করার জন্য একটি নীতিমালা তৈরি করছি। নতুন যানবাহন বা আমদানি করা পুরনো যানবাহন কতদিন রাস্তায় চলতে পারবে, অর্থাৎ যানবাহনের আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করে দেয়া হচ্ছে। আমরা বাসের ক্ষেত্রে ২০ বছর ও ট্রাকের ক্ষেত্রে ২৫ বছর আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করেছি। এ বসয়সীমা পার হয়ে গেলে যানবাহনগুলোর নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। সেগুলো আর রাস্তায় চলতে পারবে না। স্ক্র্যাপ হয়ে যাওয়া এসব যানবাহনের জায়গায় নিবন্ধন দেয়া হবে বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিদ্যুচ্চালিত মোটরযান চলাচলের জন্য যে নীতিমালা করা হয়েছে, তার আলোকেই যানবাহন বাজারজাত করা হবে। সরকারের যে শিল্পনীতি আছে, আমাদের ইলেকট্রিক ভেহিকল নীতিমালা—সব মিলিয়ে এগুলো ফেইজ আউট করা হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুচ্চালিত যানবাহন আসা শুরু হয়েছে। ডিসেম্বর নাগাদ ১০০ বিদ্যুচ্চালিত বাস আনার উদ্যোগ নিয়েছে বিআরটিসি। আমরা বিদ্যুচ্চালিত গাড়ি নিবন্ধন দেয়া শুরু করেছি।’

রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন কোম্পানি বিআরটিসি চাইছে চলতি বছর অন্তত ১০০টি বিদ্যুচ্চালিত বাস তাদের বহরে যুক্ত করতে। এ সম্পর্কে জানতে চাইলে বিআরটিসির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, ‘ভারত থেকে ১০০টি ডাবল ডেকার বিদ্যুচ্চালিত বাস কেনার জন্য আমরা এরই মধ্যে একটি প্রকল্প তৈরি করেছি। প্রকল্পটির মাধ্যমে বাসগুলো চার্জ করার জন্য চার্জিং স্টেশন, রক্ষণাবেক্ষণে টেকনিশিয়ান তৈরিরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে আমরা ঢাকায় তিন-চারটি, কুমিল্লা, চট্টগ্রামে চার্জিং স্টেশন গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছি।’

ইলেকট্রিক মোটরযান রেজিস্ট্রেশন ও চলাচল নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে পরিবহন খাত থেকে ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হ্রাসের অঙ্গীকার করেছে। এ প্রেক্ষাপটে এ সময়ের মধ্যে দেশের সড়ক পরিবহন খাতে ব্যবহূত যানবাহনের ন্যূনতম ৩০ শতাংশ ইলেকট্রিক মোটরযান ক্যাটাগরিতে রূপান্তর করা প্রয়োজন। এজন্য উৎপাদক ও আমদানিকারকদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার কথাও বলা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘সরকারিভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত বিআরটিসির মাধ্যমে ইলেকট্রিক বাস প্রবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাধারণ জনগণকে ইলেকট্রিক মোটরযান ব্যবহারের জন্য আমরা উদ্বুদ্ধ করছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুচ্চালিত মোটরযান চার্জিং স্টেশন স্থাপনের জন্য আমরা কাজ করছি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, পরিবেশ অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সরকারের অনেকগুলো সংস্থা ইলেকট্রিক মোটরযান নিয়ে একসঙ্গে কাজ করছে। ওয়ালটনসহ একাধিক কোম্পানি দেশে বিদ্যুচ্চালিত মোটরযান উৎপাদনে কারখানা স্থাপন করছে। স্থানীয় উৎপাদনকারী ও আমদানিকারকদের বিশেষ প্রণোদনা দেয়ার জন্য আমরা এরই মধ্যে রাজস্ব বোর্ডকে অনুরোধও করেছি।’

বিদ্যুৎ
Comments (0)
Add Comment